ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টেন্ডার ছিনতাই কাণ্ডে চরম ক্ষুব্ধ মোকতাদির এমপি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

ফাইল ছবি

ক্যাসিনো কাণ্ড এবং টেন্ডারবাজিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকার যখন হার্ডলাইনে সেসময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঘটেছে টেন্ডার ছিনতাইয়ের ঘটনা। দলের নেতাকর্মীদের এই কাণ্ডে চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। ওপেন হার্ট সার্জারি করে সদ্য দেশে ফিরেছেন তিনি। এরইমধ্যে ঘটে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের টেন্ডার হাতিয়ে নেয়ার এই ঘটনা।

শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ন্ত্রিত চলাফেরার চিকিৎসকদের বিধি-নিষেধের মধ্যেই শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চিনাইরে তার গ্রামের বাড়িতে আসেন মোকতাদির চৌধুরী। এর পরদিন রোববার জেলার সিভিল সার্জন অফিসে দরপত্র দখলের ঘটনা ঘটে। এর আগে ৭ই নভেম্বর জেলা সদর হাসপাতালের টেন্ডারও দখল হয়। দুটি টেন্ডার দখলেই জড়িত দলের নেতাকর্মীরা।

এই টেন্ডারবাজির নেপথ্যের নায়ক জেলা আওয়ামী লীগের এক সহ-সভাপতি সোমবার বিকেলে মোকতাদিরকে দেখতে তার বাড়িতে যান। তাকে দেখেই ক্ষিপ্ত হন মোকতাদির চৌধুরী।

তিনি বলেন- তোমরা কি ভেবেছ আমি মরে গেছি। আমার কাছে সব খবর আছে। জনগণের চিকিৎসার জন্য সরকার টাকা দিয়েছে। সেই টাকা মারার জন্য তোমরা সিন্ডিকেট করেছো।

তিনি আরও বলেন-আবার কি অরাজকতা শুরু করেছ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কি আবার অরাজকতা ফিরিয়ে আনতে চাও। তিনি ওই আওয়ামী লীগ নেতা ছাড়াও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা এবং যুবলীগের এক নেতার নাম উল্লেখ করেন এই টেন্ডার দখলের সঙ্গে জড়িত বলে।

মোকতাদির চৌধুরী ছাত্রলীগের ওই নেতার নাম নিয়ে বলেন- সে বিগত এমপি’র সময় টেন্ডারবাজি করে ৫ কোটি টাকা হাতিয়েছে। এই টাকা সুদে আসলে বের করা হবে।

এ সময় জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে সিভিল সার্জন মো. শাহআলম, জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মো. শওকত হোসেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার আবু সায়ীদও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে- জেলা সদর হাসপাতালের ঔষধপত্র, যন্ত্রপাতি, কেমিক্যাল রি-এজেন্ট, লিলেন, আসবাবপত্র ক্রয়ের দরপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিলো গত ৭ই নভেম্বর। জেলার বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য একই মালামাল ক্রয়ে সিভিল সার্জন অফিসও দরপত্র আহবান করে। এই দরপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ছিলো ১৭ই নভেম্বর। এদিন সকাল থেকে সিভিল সার্জন অফিস দখল করে টেন্ডারবাজরা। ঠিক একইভাবে হাসপাতালে অবস্থান নিয়ে তারা আর কাউকে দরপত্র ফেলতে দেয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়- দুটি দরপত্রের মাধ্যমে কয়েক দফায় প্রায় ১০/১১ কোটি টাকার মালামাল সরবরাহ করবে ঠিকাদার। গত বছর জেলা সদর হাসপাতালের জন্য ৫/৬ কোটি টাকার মালামাল ক্রয় করা হয়।

সূত্র আরও জানায়- এই কাজের সমঝোতা করতে দরপত্র জমা নেয়ার শেষ সময়ের ২ দিন আগে একটি কমিউনিটি সেন্টারে ঠিকাদারদের নিয়ে বৈঠক করেন নেতারা। সদর হাসপাতালের দরপত্র পেতে আগ্রহী ঠিকাদারের সঙ্গে ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং সিভিল সার্জন অফিসের কাজের দরপত্রের জন্যে ৯০ লাখ টাকা রফাদফা হয় বলে সূত্র জানায়।

রমরমা এই টেন্ডারবাজির আগের দিন ৬ই নভেম্বর ভারত থেকে দেশে আসেন মোকতাদির চৌধুরী। এর আগে ওপেন হার্ট সার্জারি করতে ১২ই অক্টোবর সেখানে যান তিনি। এর দু-দিন পর তার ওপেন হার্টসার্জারি হয়।

মোকতাদির চৌধুরীর বিগত দু’মেয়াদে এভাবে টেন্ডারবাজির ঘটনা চোখে পড়েনি। সন্ত্রাসী, টেন্ডারবাজ ও মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বরাবরই কঠোর মনোভাব দেখিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার শারীরিক অসুস্থতার সুযোগে সাবেক প্রতিমন্ত্রী হারুন আল রশিদের বাড়ি ভাঙা হয়। শহরের প্রধান সড়কের পাশে এই বাড়িটি ভাঙায়ও জড়িত দলের নেতাকর্মীরা। দিন কয়েক আগে কাজীপাড়া একটি বাড়ি দখলের চেষ্টা করেন জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা ও তার ভাই।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে