উন্নত জীবনের আশায় অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের অনেকেই এখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। কর্মসংস্থানের অভাব, প্রতিনিয়ত পুলিশের হয়রানি, কারাবাস-সব মিলিয়ে মালয়েশিয়ার জীবন এখন তাদের কাছে দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতে অন্তত এক হাজার রোহিঙ্গা মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরে ফিরতে প্রস্তুত।
কক্সবাজার থেকে মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ ইমরান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানিয়েছেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন ইমরান। ১৮ হাজার ক্যাম্পের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। ভুয়া বাংলাদেশি পাসপোর্টের মাধ্যমে ২০১৭ সালের শেষ দিকে তিনি থাইল্যান্ড যান। সেখান থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া পৌঁছান তিনি। এর জন্য মানবপাচারকারীদের চার হাজার ৭২০ মার্কিন ডলার দিতে হয়েছিল তাকে।
বাংলাদেশের পর রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদানের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় দেশ হচ্ছে মালয়েশিয়া। দেশটিতে এক লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে। এদের অধিকাংশই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আন্দামান সাগর পাড়ি দিয়ে এসেছে।
উন্নত জীবনের আশায় মালয়েশিয়া এলেও তাদের সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইমরান ও প্রায় ২৪ জন রোহিঙ্গা। এর কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, একে তো চাকরি পাওয়া যাচ্ছে না, তার ওপর অবৈধ অভিবাসী হওয়ায় প্রতিনিয়ত পুলিশের হাতে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। বাংলাদেশে আশ্রয় শিবিরে থাকা বন্ধু ও স্বজনদের জানিয়েছেন, এই প্রতিকূল অবস্থায় থাকার চেয়ে তারা বাংলাদেশে ফিরে আসতে চান।
ইমরান জানান, তিনি মায়ের একমাত্র ছেলে। মা সৌদি আরব থাকেন, আর দুই বোন থাকে বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরে। প্রতি মাসে নিজে খেয়ে না খেয়ে তাদের জন্য টাকা পাঠান তিনি।
মালয়েশিয়ার জীবন নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে ইমরান বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ এখানে স্পষ্ট : আমাদের কোনো ভবিষ্যৎ নাই। বাংলাদেশে অন্তত চারপাশে আপনার বন্ধু ও স্বজনরা থাকে, নিজের ভাষায় কথা বলতে ও বুঝতে পারেন, আপনার কথা ব্যক্ত করতে পারেন।
রয়টার্স জানিয়েছে, মালয়েশিয়ায় প্রবেশের পর অনেক রোহিঙ্গাই কয়েক মাস কারাগারে কাটিয়েছেন। পরে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের অনুরোধে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। এদের অনেকে এখন অবৈধভাবে ভারী কাজ করছেন। তৃতীয় কোনো দেশে আশ্রয়ের সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক রোহিঙ্গা এখন মানসিক আঘাত পরবর্তী অসুস্থতা ও হতাশায় ভুগছেন।
ইউএনএইচসিআরের হিসেবে মালয়েশিয়ায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মাত্র এক তৃতীয়াংশ কাজ করত পারছেন।
সাক্ষাৎকারে রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, মালয়েশিয়া জাতিসংঘের শরণার্থী কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি। তাই রোহিঙ্গারা গ্রেপ্তার, আটক ও প্রত্যাবাসন আতঙ্কে বসবাস করছেন।
গত বছর নির্মাণখাতে কর্মরত ২৮৮ জন রোহিঙ্গার ওপর এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এদের এক চতুর্থাংশ অন্তত একবার কারাগারে গিয়েছে। এছাড়া তাদের প্রায় অর্ধেক আটকের হাত থেকে বাঁচতে পুলিশকে ঘুষ দিয়েছে।
ইমরান জানান, তার জানামতে অন্তত এক হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ফিরতে প্রস্তুত রয়েছে। তবে তারা জানে এর মানে হচ্ছে আবারও পাচারকারীদের অর্থ দেওয়া এবং আটকের ঝুঁকি মাথায় নেয়া।
২০১৩ সালে মালয়েশিয়া যাওয়ার পর ছয় মাস কারাগারে ছিলেন মোহাম্মদ ইরফান।
তিনি বলেন, আমরা ভাইয়ের মাঝে মাঝে জানতে চায়, তারা আসবে কিনা। আমি তাদেরকে বলেছি, ঘড়ির কাঁটা যদি উল্টো দিকে ঘুরাতে পারতাম, তাহলে আমি কখনোই এখানে আসতাম না।