শর্ত জুড়ে দিয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহার

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির বৈঠক।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ট্রাক কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির বৈঠক। ছবি: সংগৃহীত

নতুন সড়ক পরিবহন আইন স্থগিতের দাবিতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। ২০ নভেম্বর (বুধবার) দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে ধানমন্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে রাত সোয়া ৯টার পর এ বৈঠক শুরু হয়।

রাত ১২টা ৫০ মিনিটে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা তাদের ৯ দফা দাবি নিয়ে আলোচনা করেছি। লাইসেন্স, ফিটনেস সনদ আপডেটের জন্য তাদের ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। তারা আইন সংশোধনের যে দাবি জানিয়েছেন সেটা বিবেচনার জন্য সুপারিশ আকারে আমরা যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। তারা এগুলো বিবেচনা করে আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করবে।

universel cardiac hospital

দাবিগুলো সম্পর্কে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যে লাইসেন্স দিয়ে তারা গাড়ি চালাচ্ছে সেগুলোর অনেকগুলো সঠিকভাবে বিআরটিএ সময়মতো দিতে পারেনি। অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন বা নবায়নের জন্য তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিআরটিএ নির্দিষ্ট সময়মতো তা দিতে পারেনি। ফলে তারা সঠিক ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদের লাইসেন্সগুলো ঠিক করতে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় চেয়েছে। আমরা তা মেনে নিয়েছি। এখন তারা বর্তমানে যে লাইসেন্স আছে সেগুলো দিয়ে গাড়ি চালাতে পারবে।

আবার অনেকে গাড়ির ফিটনেস হালনাগাদ করার জন্য নিয়মমাফিক কর প্রদান করেনি। ফলে তাদের কাছে ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই গাড়ির ফিটনেস থাকা সত্ত্বেও। তাদের ক্ষেত্রেও এ সমস্যা সমাধানে বা বিআরটিএর ফিটনেস সার্টিফিকেট নবায়ন করতে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। এ সময় পর্যন্ত তাদের যে ফিটনেস সার্টিফিকেট আছে সেগুলো দিয়ে গাড়ি চালাতে পারবে।

তিনি বলেন, পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘসময় ধরে আলোচনা হয়েছে। যেসব দাবি সংগত সেগুলোর মধ্যে কয়েকটা মেনে নিতে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। আর বাকি দাবি অনুসারে আইন সংশোধনের বিষয়ে বেশকিছু সুপারিশ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আমরা পাঠাব। এ আশ্বাসে সন্তুষ্ট হয়ে তারা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছে। আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে সারাদেশে স্বাভাবিকভাবে গাড়ি চলাচল করবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, নতুন আইনের ১২৬টি ধারার ৯টি ধারায় তাদের আপত্তি ছিল। আইনটি ইতোমধ্যে প্রয়োগ হয়ে গেছে। আর যে ধারাগুলো সংশোধনের দাবি এসেছে সেগুলো বিচার-বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আমরা পাঠাব।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আজ বৈঠকের মাধ্যমে প্রণীত আইনের বিষয়ে এ সিদ্ধান্ত মোটেও আইনপরিপন্থী নয়। আইনটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু অসঙ্গতি আমাদেরও রয়েছে যেমন, পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত জায়গা আমরা করতে পারিনি। সেগুলোই বিবেচনা করা হবে।

এ সময় পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের পক্ষে রুস্তম আলী খান বলেন, নতুন আইন নিয়ে দীর্ঘক্ষণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি দাবিগুলো ইতিবাচকভাবে মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এ কারণে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিচ্ছি।

বৈঠকে বাস-ট্রাক কাভার্ডভ্যানসহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তা, বিআরটিএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে পূর্বনির্ধারিত এই বৈঠকে যোগ দিতে রাত সাড়ে ৮টার পর থেকেই বিভিন্ন পরিবহন শ্রমিক নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনে আসতে শুরু করেন।

মঙ্গলবার ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ স্থগিত ও সংশোধনসহ ৯ দফা দাবি আদায়ে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেয় বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ।

ট্রাক শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে সড়কে চলছিল হাতেগোনা কয়েকটি গণপরিবহন। এছাড়াও কয়েকটি সড়কে বাস থামিয়ে চালকদের কাছ থেকে চাবি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটিয়েছেন ট্রাকচালকরা।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে