রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দুর্নীতির বর্ণনা দিলেন শিক্ষকরা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, লুটপাট, নিয়মবহির্ভূত নিয়োগ ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বেশ কয়েকটি দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন সরকারদলীয় শিক্ষকদের একাংশ।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের শিক্ষক লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে পাহাড়সম অভিযোগ তুলে ধরেন তারা।

এর মধ্যে প্রশাসনের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, নিয়োগ বাণিজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থের অপচয়, বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ লুটপাট, আইন লঙ্ঘন করে উপাচার্য শিক্ষক থেকে অবসরগ্রহণ ও পুনরায় দায়িত্বগ্রহণ, জয় হিন্দ স্লোগান, নিয়মবহির্ভূতভাবে অযোগ্যদের অস্থায়ী নিয়োগসহ বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ করেন তারা।

উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের দুর্নীতির বিষয়গুলো তুলে ধরে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাবি’ আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম টিপু বলেন, রাবি প্রশাসনের চলমান লাগামহীন দুর্নীতি দুদক পর্যন্ত পৌঁছে গেছে, যা আমাদের জন্য চরম লজ্জার। উপাচার্য যখন প্রথম মেয়াদে এসেছিলেন তখনো তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সীমা ছিল না। এরপর দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পেয়ে আবারও দুর্নীতি ও অনিয়মের পাহাড় গড়েছেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম হলো- তার কন্যা ও জামাতার যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তন করে নিয়োগ, কর্মচারীদের আবেদনের বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে ৩৫ বছর করে নিয়োগ প্রদান, নিয়োগ বোর্ড না করে অর্ধশতাধিক আত্মীয়কে নিয়োগ, ১৯৭৩ সালের অ্যাক্ট ভঙ্গ করে আইন ও ভূমি প্রশাসন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে নিয়োগ বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে সভাপতি নিয়োগ দেন ভিসি।

তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ২১ জুন আইন লঙ্ঘন করে উপাচার্য শিক্ষক পদ থেকে অবসর ও পুনরায় দায়িত্বগ্রহণ করেন। এটি উপাচার্য পদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে। পাশাপাশি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. চৌধুরী মো. জাকারিয়ার মেয়ের জামাতাকে নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু কোনো নীতিমালা অনুযায়ী চাকরির আবেদন করার যোগ্যতা ছিল না তার। শুধু তাই নয়, নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে ফাঁস হওয়া অডিও নিয়েও চুপ রয়েছেন উপাচার্য।

দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষকদের এই আহ্বায়ক বলেন, উপাচার্যের অনুমোদনে উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়ার তত্ত্বাবধানে বিশ্ববিদ্যালয়ে সৌন্দর্যবর্ধনের নামে প্যারিস রোডসহ বিভিন্ন রাস্তায় অপরিকল্পিত উন্নয়ন, ঘাস লাগানো, আবার সেই ঘাস উঠিয়ে সেখানেই ফুটপাথ তৈরি করে সরকারি অর্থের অপচয় ও লোপাট করা হয়েছে। সাত পুকুর প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়নে মাঝপথে বাতিল করে দেয়া হয়।

তিনি অভিযোগ করেন, স্বজনপ্রীতি করে রাবি স্কুলের শিক্ষক, হলের আবাসিক শিক্ষক, ও অযোগ্য আত্মীয়কে খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ, রেজিস্ট্রার নিয়োগ এবং ছাত্র উপদেষ্টার স্বামীর যোগ্যতা শিথিল করে প্রিন্সিপাল নিয়োগ দিয়ে পড়ালেখার মান ধ্বংস করা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পুরস্কার থাকা সত্ত্বেও কারণ ছাড়াই তায়কোয়ান্ড বন্ধ করে দেন তিনি। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা, তদন্ত কমিটি, এনওসি না দেয়া, পদোন্নতির ও বিভিন্ন ফাইল আটকে রাখা হয়েছে।

এ সময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সফিকুন্নবী সামাদী, আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এক্রাম উল্লাহ, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. জিন্নাত আরা, অধ্যাপক আলী রেজা অপু, সংগীত বিভাগের অধ্যাপক অসিত রায়, অধ্যাপক পদ্মীনি দে, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস ও ক্রীড়া উপ-পরিচালক মো. কামরুজ্জামান চঞ্চল প্রমুখ।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে