ছয় বছরের পরিশ্রম, ১৬শ কোটি টাকা খরচের পরও বাতিল হতে বসেছে আসামের জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি)। বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় এমন ইঙ্গিত দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানিয়েছেন, পুরো দেশের সঙ্গেই আসামে নতুন করে এনআরসি হবে।
এর সূত্র ধরে আসামের অথর্মন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেন, রাজ্যে হওয়া জাতীয় নাগরিক তালিকা (এনআরসি) পুরোপুরি বাতিল করে সারা দেশের সঙ্গে আসামেও নতুন করে এনআরসি হোক।
সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে আসামে হওয়া এনআরসিরর চূড়ান্ত তালিকায় বাদ পড়েছে ১৯ লাখ মানুষ। এদের মধ্যে অন্তত ১৩ থেকে ১৪ লাখই হিন্দু। তালিকা প্রকাশ হতেই অস্বস্তিতে পড়েছে শাসক দল বিজেপি। ওই এনআরসি সঠিক নয় বলেও বিতর্ক শুরু হয়।
এনআরসিতে বেশির ভাগ হিন্দুদের নাম বাদ পড়ায় ভোট ব্যাংকে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে শীর্ষ নেতৃত্বকে জানায় আসাম বিজেপি। এতে চাপ বাড়ছিল। এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার আসামে নতুন করে এনআরসি হবে বলে বিতর্ক তৈরি করেছেন অমিত।
সরকারের ওই সিদ্ধান্তকে অবশ্য স্বাগত জানিয়েছে এনআরসি মামলার মূল আবেদনকারী আসাম পাবলিক ওয়ার্কস। তাদের দাবি ছিল সব তথ্য আবারও যাচাই করা হোক। এই মামলার পরের শুনানি ২৬ নভেম্বর। সংগঠনের সভাপতি অভিজিৎ শর্মা বলেন, ১৬শ কোটি টাকা খরচের সম্পূর্ণ অডিটও হোক।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, আসামে এনআরসি হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। আসাম চুক্তি অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চকে এনআরসি তৈরির ভিত্তিবর্ষ বলে ধরা হয়েছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভবিষ্যতে দেশের সব রাজ্যে যখন এনআরসির কাজ শুরু হবে তখন অতীতের একটি নির্দিষ্ট দিনকে ধরে তার ভিত্তিতে তালিকা তৈরি হবে। কোন বছরের কোন তারিখের ভিত্তিতে ওই কাজ শুরু হবে তা এখনও ঠিক হয়নি। তবে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ ভিত্তিবর্ষ হচ্ছে না। তাই মন্ত্রণালয়ের যুক্তি, এক দেশে দু’টি ভিত্তিবর্ষ হতে পারে না। তাই পুরো দেশে যে ভিত্তিবর্ষ ধরা হবে, সেটির হিসাবে আসামেও নতুন তালিকা তৈরি করা হবে।
অপরদিকে বিরোধীদের মতে, এনআরসিতে হিন্দুরা বাদ যাচ্ছেন বলে যে প্রচার শুরু হয়েছে তা আটকাতেই ১৬শ কোটি টাকা জলাঞ্জলি দিতে চান মোদি-অমিত শাহ।
কংগ্রেস মুখপাত্র অভিজিৎ মজুমদারের মতে, নোট বাতিল, জিএসটির পরে এনআরসি বাতিল বিজেপির জন্য বড় ব্যর্থতা। ১৬শ কোটি টাকা খরচ হল, কোটি কোটি মানুষকে হয়রানি করা হলো, কতো মানুষ আত্মঘাতী হলেন এই ক্ষতিপূরণ কে দেবে? এনআরসি বাতিল অবশ্যই সুপ্রিম কোর্টের অবমাননা। বহ্মপুত্র উপত্যকা নাগরিক সমাজের উপদেষ্টা হাফিজ রশিদ চৌধুরীর মতে, রাজনৈতিক দলের একাংশ চেয়েছিল বেশি করে মুসলিমের নাম বাদ পড়ুক। উদ্দেশ্য পূরণ না হওয়াতেই হয়তো এনআরসি বাতিল করার কথা বলা হচ্ছে।