মুশফিক-রিয়াদের লড়াইয়ে তৃতীয় দিনে গড়াল ম্যাচ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

মুশফিকুর রহিম
মুশফিকুর রহিম। ছবি : ইন্টারনেট

শনিবারই বাংলাদেশের হার নিশ্চিত হয়ে যেতে পারত! কিন্তু মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দৃঢ়তায় ম্যাচ গড়াল তৃতীয় দিনে। ভারতের দেয়া ২৪১ রানের লিড সামনে রেখে ব্যাট করতে নেমে আজ ম্যাচের দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ১৫২ রান। অর্থাৎ, এখনো ৮৯ রান পিছিয়ে বাংলাদেশ।

আজ শনিবার দিনের দ্বিতীয় সেশনে ৯ উইকেটে ৩৪৭ রানে ইনিংস ঘোষণা করেছিল ভারত। এরপর বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নেমে ১৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলে। তারপর মুশফিক ও রিয়াদ দলকে টেনে তুলেন। দিন শেষে ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। অবশ্য মুশফিককে দুইবার আউটের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন আম্পায়ার। কিন্তু দুইবারই রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান তিনি।

অন্যদিকে, চোট পাওয়ায় ব্যক্তিগত ৩৯ রানে মাঠ ছাড়েন রিয়াদ। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে ইশান্ত শর্মা ৪টি ও উমেশ যাদব ২টি করে উইকেট শিকার করেছেন।

দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারেই দলীয় শূন্য রানে সাজঘরে ফিরে যান ওপেনার সাদমান ইসলাম। ইশান্ত শর্মার বলে এলবিডব্লিউ হন তিনি। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি সাদমান।

এরপর ক্রিজে আসেন অধিনায়ক মুমিনুল। দলীয় ২ রানে ইশান্তর বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ হন তিনি। ৬ বলে ০ করেন তিনি। প্রথম ইনিংসে ৭ বলে ০ করেছিলেন মুমিনুল। এর আগে ইন্দোরে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসে মুমিনুলের ব্যক্তিগত রান ছিল যথাক্রমে ৩৭ ও ৭।

৫ ওভারে ২ উইকেটে ৭ রান সংগ্রহ করে চা বিরতিতে যায় টাইগাররা। বিরতির পর উমেশের বলে শামির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান মিথুন। দলীয় ১৩ রানে ইশান্তর বলে কোহলির হাতে ধরা পড়েন ইমরুল।

এরপর মুশফিক ও রিয়াদ জুটি বেঁধে দলকে টেনে নিয়ে যেতে থাকেন। কিন্তু পথিমধ্যে ঘটে বিপত্তি। ইনিংসের ১৯তম ওভারে রান নিতে গিয়ে ডান হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন রিয়াদ। মাঠ ছাড়ার আগে রিয়াদের সংগ্রহ ৩৯ রান। মুশফিক ও রিয়াদ ৬৯ রানের জুটি গড়েন। শুক্রবার মাথায় আঘাত পেয়ে এই ম্যাচ থেকেই ছিটকে গিয়েছেন লিটন দাস ও নাঈম হাসান।

রিয়াদ আহত হয়ে মাঠ ছাড়ার পর মুশফিক ও মিরাজ ৫১ রানের জুটি গড়েন। দলীয় ১৩৩ রানে ইশান্তের বলে স্লিপে কোহলির হাতে ক্যাচ হয়ে ফিরে যান মিরাজ। দলীয় ১৫২ রানে উমেশের বাউন্সার মোকাবেলা করতে গিয়ে কোহলির হাতে ক্যাচ হন তাইজুল।

এর আগে ৯ উইকেটে ৩৪৭ রানে ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। অর্থাৎ, প্রথম ইনিংস শেষে স্বাগতিকদের লিড দাঁড়ায় ২৪১ রান। কারণ শুক্রবার ম্যাচের প্রথম দিন টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ১০৬ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল।

কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে শুক্রবার শুরু হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের শেষ ম্যাচ। দিবারাত্রির এই টেস্টে প্রথম দিন বাংলাদেশ অলআউট হওয়ার পর ব্যাটিংয়ে নেমেছিল ভারত। তারা ৩ উইকেটে ১৭৪ রান করে দিনের খেলা শেষ করেছিল। দিন শেষে ব্যক্তিগত ৫৯ রানে অপরাজিত ছিলেন বিরাট কোহলি। ২৩ রানে অপরাজিত ছিলেন রাহানে।

আজ দিনের প্রথম সেশনে তাইজুলের বলে ইবাদতের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান রাহানে। ফেরার আগে ৫১ রান করেন তিনি। প্রথম সেশনেই সেঞ্চুরি পূরণ করেন ভারতীয় অধিনায়ক কোহলি। ৪ উইকেটে ২৮৯ রান করে মধ্যাহ্ণ বিরতিতে যায় ভারত।

মধ্যাহ্ণ বিরতির পর প্রথম ওভারেই উইকেটের দেয়া পায় বাংলাদেশ। রবীন্দ্র জাদেজার স্ট্যাম্প ওড়ান রাহি। ৪১ বলে ১২ রান করেন জাদেজা। দ্বিতীয় সেশনে রীতিমতো জ্বলে ওঠেন টাইগার বোলাররা।

৮০তম ওভার শেষে নুতুন বল নেয় বাংলাদেশ। নতুন হাতে পেয়েই ‘ভয়ঙ্কর’ বিরাট কোহলিকে প্যাভিলিয়নে ফেরান ইবাদত হোসেন। কোহলিকে বিদায় করার পেছনে বড় কৃতিত্ব তাইজুলের। ডিপ স্কোয়ার লেগে উড়ন্ত ক্যাচ নেন তিনি। ফেরার আগে কোহলি করেন ১৩৬ রান। প্রথম ভারতীয় ক্রিকেটার হিসেবে গোলাপি বলের টেস্টে সেঞ্চুরি করেছেন তিনি।

এরপর অশ্বিনকে এলডিব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন আল-আমিন। ৮৬তম ওভারে ফিরেছিলেন অশ্বিন। এর পরের ওভারেই রাহির বলে স্লিপে সাদমানের হাতে ক্যাচ হন উমেশ। তার পরের ওভারে আল-আমিনের বলে এলবিডব্লিউ হন ইশান্ত শর্মা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

দ্বিতীয় দিন শেষে ৮৯ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১০৬ (৩০.৩ ওভার)

(সাদমান ২৯, ইমরুল ৪, মুমিনুল ০, মিথুন ০, মুশফিক ০, মাহমুদউল্লাহ ৬, লিটন ২৪, নাঈম ১৯, ইবাদত ১, মিরাজ ৮, আল-আমিন ১*, রাহি ০; ইশান্ত ৫/২২, উমেশ ৩/২৯, শামি ২/৩৬, জাদেজা ০/৫)।

ভারত প্রথম ইনিংস: ৩৪১/৯ডি (৮৮.৪ ওভার)

(আগারওয়াল ১৪, রোহিত ২১, পূজারা ৫৫, কোহলি ১৩৬, রাহানে ৫১, জাদেজা ১২, ঋদ্ধিমান ১৭*, অশ্বিন ৯, উমেশ ০, ইশান্ত ০, শামি ৪*; আল-আমিন ৩/৮৫, রাহি ২/৭১, ইবাদত ৩/৯১, তাইজুল ১/৮০)।

বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ১৫২/৬* (৩২.৩ ওভার)

(সাদমান ০, ইমরুল ৫, মুমিনুল ০, মিথুন ৬, মুশফিক ৫৯*, মাহমুদউল্লাহ ৩৯, মিরাজ ১৫, তাইজুল ১১; ইশান্ত ৪/৩৯, উমেশ ২/৪০, শামি ০/৪২, অশ্বিন ০/১৯)।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে