যুক্তরাষ্ট্রের ছোট্ট শহর মেডিনা। মাত্র তিন হাজার মানুষের বসবাস এখানে। তবে এই তিন হাজার মানুষের কাছেই গোটা পৃথিবীর অধিকাংশ সম্পদ। কেননা এই মেডিনাতেই বাস করছেন জেফ বেজোস, বিল গেটস আর লরেন স্যানচেজের মতো বিশ্বের শীর্ষ ধনীরা। অথার্ৎ বিশ্বের প্রথম ও দ্বিতীয় ধনীর শহর এই মেডিনা।
অথচ ভীষণ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শহরটি। অর্থসংকটে পড়ে ঠিক মত নাগরিক পরিষেবা দিতে পারছে না মেডিনার প্রশাসন।
যে শহরের দুই বাসিন্দার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ২০ হাজার নয়শ’ কোটি ডলার সেই শহরের পুলিশ বা পৌর কর্মকর্তারা পাবলিক সার্ভিস দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। ঠিকমত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে পড়ছে অনেক অবকাঠামো।
আর দিনে দিনে মেডিনার অর্থসংকট বাড়ছেই। শহর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আগামী বছর মেডিনার বাজেট ঘাটতি দাঁড়াবে ৫ লাখ ডলারে! আর এভাবে ঘাটতি চলতে থাকলে আগামী পাঁচ বছরে এটি ৩৩ লাখ ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
বিবিসি জানিয়েছে, মেডিনায় একটি বাড়ির দাম গড়ে ২৮ লাখ ডলারের ( প্রায় ২৪ কোটি টাকা) নিচে নয়। এই শহরের বাসিন্দাদের গড় আয় যুক্তরাষ্ট্রে ধনী এলাকা হিসেবে সাত নম্বরে।
যুক্তরাষ্ট্রের এক পরিসংখ্যান বলছে, মেডিনার প্রতিটি পরিবারের গড় আয় যেখানে এক লাখ ৮৬ হাজার ডলার সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবার পিছু গড় আয় ৬০ হাজার।
তাহলে মেডিনার প্রশাসনিক কার্যক্রম চালাতে এমন অর্থ সংকটে কেন পড়েছেন স্থানীয় পুলিশ ও পৌর মেয়র?
জানা গেছে, শহরের বাসিন্দাদের অর্থবিত্ত যাই থাকুক, মেডিনায় আইনের কারণেই আজ তাদের এমন করুণ দশা।
আইনানুযায়ী, পৌর কর্মকর্তারা চাইলেও এক শতাংশের বেশি কর বাড়াতে পারেন না। যে কারণে শহরে এত এত ধনী থাকতেও তাদের সম্পদ শহর উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। তাই ঘাটতি মেটাতে গত ১৭ বছর ধরে জমানো অর্থ খরচ করে গেছেন মেয়র।
জানা গেছে, বাড়ির ওপর বসানো কর থেকে মেডিনা শহর কর্তৃপক্ষ বছরে পান ২৮ লাখ ডলার। এক শতাংশ কর বাড়িয়ে সেখান থেকে বাড়তি আসবে মাত্র ২৮ হাজার ডলার।
জরুরি স্বাস্থ্য সেবা, ফায়ার সার্ভিস, বিভিন্ন পার্ক এবং প্রাকৃতিক উদ্যান সংরক্ষণ, প্রশাসনিক খরচ- এতকিছুর জন্য এই অর্থ যথেষ্ট নয়। এভাবেই অর্থাভাবে ধুঁকছে বিশ্বের শীর্ষ দুই ধনীর শহর মেডিনা।
তবে ইতিমধ্যে এই সংকট কাটাতে শহরটি বেশ কিছু পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে।
শহরের বাসিন্দাদের কাছে একটি নিউজলেটার পাঠিয়েছেন পৌর কর্তৃপক্ষ। সেখানে বলা হয়েছে:
‘এরকম একটি শহর যে নানা রকম নাগরিক সুবিধা এবং সেবা চালু রাখার জন্য যথেষ্ট অর্থ আয় করতে পারছেন না, এটা কল্পনা করতেও হয়ত আপনার কষ্ট হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই শহরে বাড়ি-ঘরের দাম বাড়ছে, কিন্তু তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কর কিন্তু বাড়ছে না।’
এমন নিউজলেটার পাঠানোর পরই চলতি মাসে মেডিনার কর্মকর্তারা তাদের শহরকে বাঁচাতে বাড়িঘরের ওপর নতুন কর ধার্য করার প্রস্তাব দিয়েছেন। আগামী ছয় বছরের জন্য কার্যকর হবে এই প্রস্তাব।
প্রস্তাব অনুযায়ী, মেডিনার ধনী বাসিন্দাদের এখন কিছুটা বাড়তি কর দিতে হবে। শহরকে বাঁচাতেই এই বাড়তি ডলার দেবেন বিল গেটস ও জেফ বেজোসরা। এ অর্থ তাদের জন্য অতি সামান্য হলেও এর ফলে পৌর কর্তৃপক্ষ তাদের শহরের নাগরিক সুবিধা আর নানা রকম সেবা কোনো কাটছাঁট ছাড়াই বজায় রাখতে পারবেন।
এ মাসের শুরুতেই প্রস্তাবটি পাশ হয়েছে। এখন পৌর কর্মকর্তারা কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতেই পারবেন।
সূত্র: বিবিসি।