মন্ত্রী-ব্যবসায়ী রুদ্ধদ্বার বৈঠক : পেঁয়াজের দাম কমবে ১০ দিন পর

বিশেষ প্রতিবেদক

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দুই মন্ত্রীর রুদ্ধদ্বার বৈঠক
ছবি : সংগৃহিত

বাজারে অস্থিরতার মধ্যে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দুই মন্ত্রী। আজ রোববার রাজধানীর মতিঝিলে এফবিসিসিআই সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচিত ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও খাদ্যমন্ত্রী সাধনচন্দ্র মজুমদার। এ ছাড়াও এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

universel cardiac hospital

বৈঠক সূত্র জানায়, নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখতে আমদানিকারক, পাইকারি বিক্রেতাদের সঙ্গে এ রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়েছে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর বছরব্যাপী চাহিদা, উৎপাদন, আমদানি, মজুদ ব্যবস্থা, সরবরাহ ব্যবস্থাপনা ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

পরে একই দিন এফবিসিসিআই’র সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।

বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, কথা দিয়েও ভারত পেঁয়াজ রফতানি না করায় সংকট দেখা দিয়েছে। মিসর-তুরস্ক থেকে জাহাজে আমদানি করা এবং নতুন পেঁয়াজ বাজারে উঠলে পেঁয়াজের দাম কমে আসবে।

অন্যদিকে, খাদ্যমন্ত্রী সাধনচন্দ্র মজুমদার বলেছেন, মোটা চালের দাম বাড়েনি। খুচরা পর্যায়ে সরু চালের দাম সামান্য বেড়েছে।

বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, মিসর থেকে জাহাজে আমদানি করা পেঁয়াজ আগামী ১০ দিনের মধ্যে বাজারে আসবে। এ পেঁয়াজ চট্টগ্রাম পর্যন্ত আমদানি খরচ কেজিপ্রতি ৩২ টাকা পড়বে। কিন্তু খুচরা বাজারে এটি সর্বোচ্চ ৬০ টাকায় বিক্রি হবে। এ ছাড়া ডিসেম্বরের প্রথমেই বাজারে দেশি নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করবে। সবমিলিয়ে আগামী ১০ দিনের মধ্যে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

মন্ত্রী জানান, পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৪ লাখ টনের মতো। ১৮ লাখ টন দেশে উৎপাদন হয়। বাকি পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়, যার ৯৫ শতাংশই আসে ভারত থেকে। সংকট হয়েছে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায়। রফতানি বন্ধের সঙ্গে সঙ্গেই দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়েছে। যারা এ কাজ করেছে তারা ঠিক করেনি। পরবর্তীকালে ভারত কথা দিয়েও আর রফতানি করেনি। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার ভোক্তা অধিকার ও অন্য সংস্থার মাধ্যমে আড়াই হাজার মামলা করেছে, জেল-জরিমানাও করেছে।

তিনি বলেন, বুলবুলের কারণে টেকনাফ থেকে পেঁয়াজ আমদানি ৪ দিন বন্ধ ছিল। বিমানে আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ২০০ টাকার বেশি পড়ছে। কিন্তু জনগণের সুবিধার্থে ৪৫ টাকায় তা বিক্রি করা হচ্ছে। বেসরকারি খাতের আমদানি করা পেঁয়াজ খুচরা বাজারে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় তারা বিক্রি করবে।

খাদ্যমন্ত্রী সাধনচন্দ্র মজুমদার বলেন, চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে আছে, দাম বাড়েনি। সরু চালের দাম খুচরা বাজারে সামান্য বেড়েছে। মোটা চালের দাম ঠিকই আছে। বাজারে চালের ঘাটতি নেই। প্রচুর মজুদ আছে। তারপরও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মন্ত্রণালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন খাদ্য সচিব শাহাবুদ্দিন আহমদ, শিল্প সচিব আব্দুল হালিম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপার্সন মফিজুল ইসলাম ও ট্যারিফ কমিশনের সদস্য আবু রায়হান প্রমুখ।

এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ব্যবসায়ীদের নৈতিকতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। এখন বাজারে নিত্যপণ্যের ঘাটতি নেই। যদি কেউ মজুদ করে অহেতুক দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে ব্যবসায়ীদের শাস্তি দেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, পেঁয়াজের ক্ষেত্রে যা হয়েছে, এরপর অন্য কোনো দ্রব্যের ক্ষেত্রে তা হতে দেয়া হবে না। লবণ, তেল, চিনি, ডাল নিয়ে ভবিষ্যতে সমস্যা হবে না।

প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মফিজুল ইসলাম বলেন, ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার পরদিনই দাম বেড়েছে। সব সংস্থা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যদি দেখা যায় ব্যবসায়ীরা যোগসাজশ করে দাম বাড়িয়েছে তবে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে