না ফেরার দেশে চলে গেলেন বিশিষ্ট সংগীত গবেষক ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সাবেক মহা পরিচালক মোবারক হোসেন খান। তিনি ২৩ নভেম্বর (শনিবার) রাতে নিজ বাসভবনে ঘুমের মধ্যে ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্নাইলাহে রাজেউন)।
মরহুমের নামাজে জানাজা ও দাফন তার সন্তান দেশে এলে অনুষ্ঠিত হবে। আপাতত তার মরদেহ বারডেমের হীমঘরে রাখা হয়েছে।
মোবারক হোসেন খান ১৯৩৮ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের এক সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ একজন প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী এবং মাতা উমর-উন-নেসা খানম।
তার চাচা ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ। ছয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ।
তার বড় তিন বোন আম্বিয়া, কোহিনূর, ও রাজিয়া এবং বড় দুই ভাই প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ আবেদ হোসেন খান ও বাহাদুর হোসেন খান। মোবারক হোসেন খানের কর্মজীবন শুরু হয় বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে ১৯৬২ সালের ২০শে অক্টোবর। পরে তিনি বেতারের মহাপরিচালক হিসেবে ৩০ বছর দায়িত্ব পালন করেন।
এ সময়ে তিনি বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার সংগীত বিষয়ক লেখা প্রকাশের দায়িত্ব নেন রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই। লেখালেখি সূত্রে তার পরিচয় ঘটে কবি আল মাহমুদের সঙ্গে। আল মাহমুদ তখন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহকারী পরিচালক। তার মাধ্যমে ১৯৮০ সালে শিল্পকলা একাডেমি থেকে প্রকাশ করেন তার প্রথম সংগীত বিষয়ক বই ‘সংগীত প্রসঙ্গ’।
বিভিন্ন পত্রিকায় তার সংগীত বিষয়ক লেখা নিয়ে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশ হয় দ্বিতীয় বই ‘বাদ্যযন্ত্র প্রসঙ্গ’।
এরপর তিনি রচনা করেন ‘সংগীত মালিকা’। এই বইটিও প্রকাশ করে বাংলা একাডেমি। পরবর্তীতে তিনি সংগীত ও শিশু বিষয়ক ৫০টির মতো গ্রন্থ রচনা করেন।
মোবারক হোসেন খান সংগীতশিল্পী ফৌজিয়া ইয়াসমিনকে বিয়ে করেন। তাদের তিন সন্তান কন্যা রিনাত ফৌজিয়া সংগীতশিল্পী, পুত্র তারিফ হায়াত খান স্থপতি এবং অপর পুত্র তানিম হায়াত খান।
সংগীতে অবদানের জন্য তিনি ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত একুশে পদক, ১৯৯৪ সালে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারে ভূষিত হন এবং ২০০২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন।