নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রয়োগ হলেও ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেসসহ কয়েকটি বিষয়ে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত শিথিলতা প্রদর্শন করবে পুলিশ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন নির্দেশনা ও আইনের কয়েকটি ধারা পুনর্বিবেচনার আশ্বাসে ৩০ জুন পর্যন্ত আন্দোলনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ও সংসদ সদস্য শাজাহান খান।
২৩ নভেম্বর (শনিবার) রাতে রাজধানীর ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে পরিবহন নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও শাহজাহান খান এসব কথা জানান।
বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রয়োগ শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু এরপর থেকে আইন প্রয়োগে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা কিছু ক্ষেত্রে আপত্তি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে সড়ক পরিহন ও সেতু মন্ত্রণালয় আমাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, মালিক-শ্রমিকরা আমাদের কাছে কিছু দাবি জানিয়েছেন। তাদের দাবি অনুযায়ী আমরা কিছু সুপারিশ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। কিন্তু সুপারিশ অনুযায়ী আইনের কিছু ধারা সংশোধন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। এসব বিষয় নিয়ে আমরা শাহজাহান খানের নেতৃত্বে পরিবহন নেতাদের নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্সের বিষয়ে যে যেভাবে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন, তারা সেভাবেই চালাবেন। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে তারা লাইসেন্স হালনাগাদ বা উপযুক্ত লাইসেন্স সংগ্রহ করার সুযোগ পাবেন। বিআরটিএ এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন। তবে কারও কাছে ভুয়া লাইসেন্স পেলে সঙ্গে সঙ্গে বাজেয়াপ্ত করা হবে। তারা নতুন করে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে লাইসেন্স করে নিবেন।
এক্ষেত্রে লাইট, মিডিয়াম, হেবি লাইসেন্সের বিষয়টি বিবেচনায় উপযুক্ত লাইসেন্স করতে এবং যাদের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তারা নবায়ন করতে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় পাবেন বলে উল্লখ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যারা গাড়ির ফিটনেস নবায়ন করেননি তাদের বিরাট একটা টাকা জরিমানা হয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে তারা শুধুমাত্র সরকারি ফি জমা দিয়ে ফিটনেস সার্টিফিকেট পেতে জরিমানা মওকুফ চেয়েছেন। আমরা তাদেরকে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে আবেদন করতে বলেছি, তাদের জরিমানা মওকুফের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। অনেক ট্রাকে কনটেইনার টানার জন্য নির্ধারিত ডিজাইনের বাইরে বাড়তি ডিজাইন করেছেন। এ বিষয়ে একটি টেকনিক্যাল কমিটি করা হবে। পরিবহন মালিকরা টেকনিক্যাল কমিটির সঙ্গে বসে ৩০ জুনের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন। নতুন আইন প্রয়োগ ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমন কয়েকটি ক্ষেত্রে শিথিলতা প্রদর্শন করবেন। এছাড়া বাকি ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সেবার মান বাড়াতে হাইওয়ে পুলিশ এবং বিআরটিএর লোকবল বাড়ানোর সুপারিশের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আইনের কয়েকটি ধারা পরিবর্তনের দাবির প্রেক্ষিতে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একটি সুপারিশ পাঠাবো। তারা যদি বিষয়গুলো যথোপযুক্ত মনে করেন তাহলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন, তবে অবশ্যই যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে।
শাজাহান খান বলেন, আইন হওয়ার সময় থেকেই কিছু কিছু বিষয় সংশোধনের দাবি আমরা জানিয়েছিলাম। আমরা কখনোই আইনের বিরোধিতা করিনি। আমরা আইন মানি এবং মানব। কিন্তু আইনে কিছু অস্পষ্টতা রয়ে গেছে, সেগুলো দূর করে সঙ্গতিপূর্ণ করার দাবি জানিয়েছি আমরা। আইনে উল্লেখিত জেলের বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই, আমরা বলেছি জরিমানার কথা। কারণ এত পরিমাণ জরিমানা চালকরা কখনো দিতে পারবে না। আমরা বলেছি আগের আইনে যে জরিমানা ছিল, বর্তমান সময়ে সেই টাকার অনুপাতে বর্তমানে যে টাকা দাঁড়ায় সে পরিমাণ জরিমানা নির্ধারণ করা হোক।
তিনি আরও বলেন, আমাদের যে দাবি সেগুলো যদি ন্যায়সঙ্গত ও যুক্তিসঙ্গত মনে করেন, তাহলে ব্যবস্থা নিবেন। আর ন্যায়সঙ্গত মনে না করলে আমাদের সঙ্গে কথা বলবেন, আমরা মেনে নেব।
- আরও পড়ুন >> গ্রামীণফোনকে ২ হাজার কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ
শাজাহান খান বলেন, আমরা ধর্মঘট ডাকিনি। ধর্মঘট-আন্দোলন আমাদের পেশা নয়। বিপদ হলে আমরা কথা বলি, না শুনলে আন্দোলনে যেতে হয়। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় দিয়েছেন, আমরা সে পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। তারপর যদি আমাদের দাবি মানা না হয়, তখন আমরা কর্মসূচি দেব।