বাতাসের মান নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান এয়ারভিজ্যুয়ালের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় ১৯ নভেম্বর থেকে এক নম্বরে রয়েছে ঢাকা। তাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী গত রবিবার সকাল ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বেশির ভাগ সময় ঢাকাই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহর। এরপর কয়েক ঘণ্টার জন্য মঙ্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাটোর ও ভারতের কলকাতা শহর দূষণের দিক থেকে ঢাকাকে ছাড়িয়ে যায়। তবে রাত সাড়ে ৮টার পর ঢাকা আবার শীর্ষে চলে আসে। গবেষকরা বলছেন, চলতি মাসে এ পর্যন্ত আট দিন ঢাকা ছিল বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহর। এ খবর নিশ্চিত অনেক উদ্বেগের এবং আতঙ্কজনকও। কেননা বায়ু মানুষের জীবনধারণের সবচেয়ে অপরিহার্য উপাদান।
বাংলাদেশে বায়ুদূষণের প্রধান তিনটি উৎস হচ্ছে ইটভাটা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও নির্মাণকাজ। আট বছর ধরে এই তিন উৎস ক্রমেই বাড়ছে।অথচ আমরা একটু দৃঢ় পদক্ষেপ নিলেই এই উৎসগুলো বন্ধ করতে না পারলেও অনেকাংশে কমিয়ে আনতে পারি। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী বায়ুদূষণের জন্য নানা ধরনের উন্নয়নকাজের চেয়ে বেশি দায়ী নগরীর চারপাশে ছড়িয়ে থাকা ইটভাটাগুলো। গবেষণার ফলাফলে জানা যায় শুষ্ক মৌসুমে ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য এসব ইটভাটা দায়ী ৫৮ শতাংশ। আমরা মনে করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটু শক্ত হলেই এই দূষণের উৎসমুখগুলো অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। একই সঙ্গে জনসচেতনতাও অবশ্য জরুরি।
আমরা জানি- বায়ুদূষণের মধ্যে বসবাস করলে মানুষের তাত্ক্ষণিক মৃত্যু হয় না । তবে বিশুদ্ধ বায়ুর অভাবে মানুষ দ্রুতই মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। সামান্য কিছুটা সময় বাতাস গ্রহণ করতে না পারলে মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। ঠিক একইভাবে বায়ুর বিশুদ্ধতা না থাকলে তা-ও মৃত্যুর কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে।
দূষণ ঠেকাতে যেসব আইন আছে, সেগুলো না মানার কারণে ঢাকার দূষণ দৃশ্যমান হচ্ছে। বায়ু দূষণের কারণে ঢাকা শহরে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। বাতাসে যেসব ক্ষতিকর ধূলিকণা ও রাসায়নিক পদার্থ মিশে থাকে তা খালি চোখে দেখা যায় না। কিন্তু এসব ধূলিকণা ও রাসায়নিক পদার্থের কারণে মানুষের ফুসফুস আক্রান্ত হয়। শিশুদের স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দিচ্ছে। আর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, রাজধানী ঢাকার বাতাস এখন জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে।
আমরা আশা করব- ইটভাটা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও নির্মাণকাজের দূষণরোধে কার্যকরী ব্যবস্থাগ্রহণের পাশাপাশি জনগণও স্বতস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসবে।
- আরও পড়ুন >> জনস্বার্থে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ কার্যকর হোক