আজ হলি আর্টিজান মামলার রায়, আদালতপাড়ায় বাড়তি নিরাপত্তা

মত ও পথ প্রতিবেদক

হলি আর্টিজান হামলা
হলি আর্টিজান হামলা। ফাইল ছবি

তিন বছর আগে ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার আলোচিত মামলার রায় ঘোষণা হবে আজ বুধবার। আলোচিত মামলাটির রায় ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী।

মঙ্গলবার দুপুর থেকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত চত্বরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর অবস্থা এড়াতে র‌্যাব-পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় নজরদারি করছে।

universel cardiac hospital

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের ওই রেস্তোরাঁয় ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে গলাকেটে ও গুলি করে হত্যা করে নব্য জেএমবির জঙ্গিরা। হামলা ঠেকাতে গিয়ে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। পরে কমান্ডো অভিযানে হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত পাঁচ তরুণের সবাই মারা পড়েন।

বিচার শুরুর এক বছরের মুখে আজ বুধবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মজিবুর রহমান এ রায় ঘোষণা করবেন।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার আদালত পাড়া পরিদর্শন করেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মীর রেজাউল আলম ও কৃষ্ণ পদ রায়। পরিদর্শন শেষে তারা আদালত পাড়ার বিশেষ নিরাপত্তায় লালবাগ ডিভিশন ও আদালতের ডিসি প্রসিকিউশনকে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান বলেন, রায়কে কেন্দ্র করে ওই রকম কোনো নিরাপত্তা জোরদারের কিছু নেই। তবে আমরা এলার্ট আছি। সাধারণত সব সময় আদালত এলাকায় আমাদের সদস্যরা থাকে। সেই তুলনায় আগের চেয়ে সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে এবং গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মাঠে আছে।

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় জঙ্গিরা। অস্ত্রের মুখে বিদেশি অতিথিদের জিম্মি করে বাংলাদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে। তাদের গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন। পরে অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়। ওই ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় একটি মামলা করে পুলিশ।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যমে শাখার প্রধান লে. কর্নেল সারওয়ার-বিন-কাশেম বলেন, রায়কে ঘিরে কোনো ধনের অপ্রীতিকর অবস্থা এড়াতে আমাদের সদস্যরা মাঠে আছে। বিশেষ করে আদালত চত্বর ছাড়াও নিয়মিত ডিউটি হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আমাদের সদস্যরা কাজ করছে।

ঢাকা মহানগর আদালতের হাজতখানার ওসি মঈনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আসামিদের হাজাতখানা থেকে এজলাসে আনা নেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মীর সোহেল রানা বলেন, আইনশৃঙ্খলা প‌রি‌স্থি‌তি স্বাভা‌বিক র‌য়ে‌ছে। পর্যাপ্ত নির‌াপত্তা আ‌য়োজন র‌য়ে‌ছে। তারপরও সং‌শ্লিষ্ট পু‌লিশ সদস্য‌দের‌কে দা‌য়িত্ব পাল‌নে যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন কর‌তে নি‌র্দেশ দেয়া হ‌য়ে‌ছে।

হলি আর্টিজান হামলার মামলায় গ্রেপ্তার ৮ জঙ্গি হলো- জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজিব গান্ধী, রাশেদ ওরফে র‌্যাশ, রাকিবুল ইসলাম রিগ্যান, মিজান ওরফে বড় মিজান, হাদিসুর রহমান সাগর, সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশীদ।

এছাড়া এ মামলায় আসামিদের মধ্যে বিভিন্ন ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানে নিহত আটজন হলো- তামিম আহমেদ চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী, মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম ওরফে মুরাদ, রায়হান কবির তারেক, সারোয়ান জাহান মানিক, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান।

ফিরে দেখা সেই রাত

২০১৬ সালের ১ জুলাই। সাপ্তাহিক ছুটির দিন, সঙ্গে রমজানও শেষের দিকে। সব মিলিয়ে ঈদের আমেজে ছিল ঢাকাবাসী। ইফতার পর্যন্ত সবকিছু চলছিলও স্বাভাবিক। তখন কেউ জানতো না কী ভয়াবহতার মুখে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ।

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি ও রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলায় সেদিন ১৭ বিদেশিসহ নিহত হন ২২ জন। তাদের মধ্যে দুজন পুলিশ কর্মকর্তা। জঙ্গিদের গুলি ও বোমায় আহত হন পুলিশের অনেকে।

পরদিন অর্থাৎ ২ জুলাই সকালে সেনা কমান্ডোদের উদ্ধার অভিযানে পাঁচ জঙ্গি ও রেস্তোরাঁর একজন পাচক নিহত হন। এই অভিযানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় শ্বাসরুদ্ধকর জিম্মি দশা। রেস্তোরাঁর আটক আরেক কর্মী জাকির হোসেন শাওন পরে হাসপাতালে মারা যান।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে