প্রবাসী নারীদের পাশে দুই মন্ত্রণালয়

মত ও পথ প্রতিবেদক

প্রবাসী নারী শ্রমিক
প্রবাসী নারী শ্রমিক। ফাইল ছবি

প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশি নারীদের মধ্যে গৃহকর্মীরাই বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। প্রবাসে কর্মরত আর কোনো বাংলাদেশি নারী যেনো নির্যাতনের শিকার না হয়, সেজন্য দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলেছে দুটি সংসদীয় কমিটি।

গত ২৫ নভেম্বর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি এবং ২৭ নভেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

universel cardiac hospital

বৈঠক সূত্র জানায়, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি নারী শ্রমিকদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের একের পর এক ঘটনা সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে। সৌদি আরবে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধে সংসদ অধিবেশনে এমপিরা দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন মহল থেকেও একই দাবি ওঠেছে।

এ পরিপেক্ষিতে দ্রুত প্রবাসে কর্মরত নারী নির্যাতন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। এমনকি কোনো নারী নির্যাতনের শিকার হলে সাথে সাথে পররাষ্ট্র বা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় পক্ষে থেকে বাদী হয়ে মামলা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নারীদের নিশ্চিন্তে কাজ করতে বলা হয়েছে।

কোনো নারী শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হলে সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস কিংবা পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে জানানোর জন্য বলা হয়েছে।

পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশী নারী কর্মীদের মধ্যে নির্যাতনের শিকার এক শতাংশেরও কম। প্রবাসে কর্মরত নারীদের মধ্যে গৃহকর্মীরাই বেশি নির্যাতনের শিকার হন। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বাংলাদেশি নারী শ্রমিক অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার না হন সেজন্য এ দুই মন্ত্রণালয়কে এক সঙ্গ কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো অভিযোগ আসার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের জুন থেকে এ পর্যন্ত (চলতি মাসের ২০ নভেম্বর পর্যন্ত) ৭৪টি দেশে কাজ নিয়ে আট লাখ ৬৮ হাজার ৩৬৩ জন নারীকর্মী বিদেশ গেছেন। এর মধ্যে সৌদি আরবে গেছেন তিন লাখ ৩০ হাজার ৫৯০ জন। এদের মধ্যে আট হাজার কর্মী ফিরে এসেছেন এবং ৫৩ জন নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছেন।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি ফারুক খান বলেন, ছয় লাখের বেশি নারী কর্মী বিদেশে আছেন। এরমধ্যে নির্যাতনের হার এক শতাংশেরও কম। সংখ্যায় যেটাই হোক, নির্যাতন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ দ্রুত নিতে হবে। কোনো নারী নির্যাতনের শিকার হলে পররাষ্ট্র বা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে বাদী হয়ে মামলা করতে বলা হয়েছে।

বৈঠকের বিষয়ে সংসদ সচিবালয় থেকে জানানো হয়, তুলনামূলকভাবে পুরুষ কর্মীদের থেকে নারীকর্মীরা বেশি রেমিটেন্স পাঠান। পুরুষরা তাদের আয়ের ৬০ শতাংশ রেমিটেন্স পাঠান, সেখানে নারীরা পাঠান ৯০ শতাংশ।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, অধিকতর সুরক্ষা নিশ্চিত করে সৌদি আরবসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে নারী শ্রমিক পাঠানো অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিদেশে নারী শ্রমিক পাঠানো বন্ধের পক্ষে আমরা নই। আমরা মনে করি, তাদেরকে বিদেশে পাঠানো অব্যাহত রাখতে হবে। তবে যেসব অভিযোগ আছে, সেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে সাথে সাথে ব্যবস্থা নিতে হবে।

তিনি বলেন, নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তার ওপর জোর দিতে হবে। দরকার হলে সৌদি সরকারের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

বৈঠকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিদেশে নারী শ্রমিকদের হয়রানি-নির্যাতনের বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় চিন্তিত। তবে বিষয়টি এই পর্যায়ে নয় যে, পাঠানো বন্ধ করে দিতে হবে। বিদেশে নারী শ্রমিকরা যাতে নিরাপদে কাজ করতে পারেন, তার জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সৌদি আরবে কর্মরত গৃহকর্মীদের অভিযোগ শুনতে অনলাইন ব্যবস্থা মুসানেদ (সহায়তা) ২০১৫ সাল থেকেই কার্যকর রয়েছে। এ ব্যবস্থায় নির্যাতিত গৃহকর্মীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। পাশাপাশি ফোনেও অভিযোগ করতে পারেন। কিন্তু সৌদি আরব থেকে নির্যাতিত নারীরা দূতাবাসের শেল্টারহোমে অভিযোগ না করে দেশের আত্মীয়দের কাছে অত্যাচারের কথা বলেন। তবে অভিযোগ যেখান থেকে করা হোক, সব অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একইসঙ্গে নারী শ্রমিকদের বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে।

বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, গত ১০ বছরে ৪০ হাজার মরদেহ বিদেশ থেকে আনা হয়েছে। মরদেহ পরিবহন ও দাফনে ৯৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে এবং তাদের পরিবারকে ৭২০ কোটি ২৮ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেন, বিদেশে নারী শ্রমিকরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

সৌদি আরবে নারী শ্রমিকদের নির্যাতনের খবরে সরকার চিন্তিত জানিয়ে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় সৌদি আরব দূতাবাসের শার্জ দ্য অ‌্যাফেয়ার্সকে ডেকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সৌদি আরবে বাংলাদেশের যিনি রাষ্ট্রদূত রয়েছেন, তাকেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ওই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি তোলার জন্য।

তিনি আরও বলেন, এছাড়া দেশে মহিলা কর্মী পাঠানো রিক্রুট এজেন্সিদের মধ্যে অনিয়মের কারণে ১৬০টির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। ৩টি এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। জরিমানা করা হয়েছে কোটি টাকার বেশি। এক্ষেত্রে সরকারের অবস্থান জিরো টলারেন্স।

উল্লেখ্য, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে ৮৫০ জন নারী দেশে ফিরে আসেন। তাদের মুখে সেখানে যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের নির্যাতনের খবর গণমাধ্যমে আসার পর বিভিন্ন নারী সংগঠনগুলো সরব হয়।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে