ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে বিভিন্ন খাতে বাজারকে অশান্ত করে তুলছে বলে মন্তব্য করেছেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন।
তিনি বলেন, দেশে অচল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে অধিক মুনাফা অর্জন করছে। বড় বড় দেশে এ প্রবণতাগুলো নেই। কিন্তু আমাদের দেশে এগুলো বিদ্যমান। এক ধরনের অসাধু ব্যবসায়ীরা এটা করে। অধিক মুনাফা করার জন্য তারা জনগণকে জিম্মি করে ব্যবসা করতে চায়।
আজ সোমবার রাজধানীতে শিল্প মন্ত্রণালয় এবং ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত চামড়া ও চামড়াজাতপণ্য উন্নয়ন নীতিমালা ২০১৯ অবহিতকরণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ব্যবসা আপনার করবেন, এর লাভও আপনারা নেবেন। আপনারা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তিগতভাবে এগিয়ে যান। সরকার সব ধরনের সুবিধা দেবে। তবে মানুষকে জিম্মি করবেন না। এটা হতে দেয়া যাবে না।
দেশে একটি টেকসই, পরিবেশবান্ধব ও কমপ্লায়েন্ট চামড়া শিল্পখাত গড়ে তোলাই আমাদের সরকারের লক্ষ্য জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের সব ধরণের নীতি সহয়তা প্রদান অব্যাহত রেখেছে। ট্যানারি স্থানান্তরের জন্য সরকারের প্রতিশ্রুত ক্ষতিপূরণের অর্থও ইতোমধ্যে উদ্যোক্তাদের দেয়া হয়েছে। এরপরও কতিপয় অসাধু ট্যানারি মালিক কমপ্লায়েন্ট কারখানা স্থাপনে গড়িমসি করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে নিয়ম মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী কারখানা নির্মাণসহ উৎপাদন কার্যক্রম শুরুতে ব্যর্থ হওয়ায় সাভার চামড়া শিল্প নগরীর ১১টি প্লটের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে। চামড়া শিল্পের অপার সম্ভাবনা কাজে লাগাতে শিল্প মন্ত্রণালয় চামড়া ও চামড়াজাতপণ্য উন্নয়ন নীতিমালা ২০১৯ প্রণয়ন করেছে। এর আলোকে চামড়া শিল্পের পরিবেশগত উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, চামড়া শিল্পের কাঁচামালে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু দেশীয় চামড়াজাত পণ্যের অনুকূলে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের ছাড়পত্র বা সার্টিফিকেশন না থাকায় আমাদের রপ্তানি আশানুরূপহারে বাড়ছে না। এ বাস্তবতা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় শিল্প মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সকল ট্যানারি কারখানা সাভারে পরিবেশবান্ধব চামড়া শিল্পনগরিতে স্থানান্তর করেছে।
সাভার চামড়া শিল্পনগরী সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার সুবিধার্থে ইতোমধ্যে ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড গঠন করা হয়েছে। যেহেতু এলডব্লিউজি সার্টিফিকেশন অর্জন চামড়াখাতে রপ্তানি বৃদ্ধির একটি অন্যতম পূর্বশর্ত, সেহেতু আমাদের সরকার চামড়া শিল্পখাতে কোনো ধরনের অনিয়ম বা বিচ্যুতিকে প্রশ্রয় দেবে না।
ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে এবং এর লাভ অথবা ক্ষতি দু’টিই ব্যবসায়ীদের বিষয় জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, এলডব্লিউজি সার্টিফিকেশনের জন্য সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে প্রজেক্ট ডকুমেন্ট অনুযায়ী যথাযথভাবে চামড়া শিল্প নগরী প্রকল্প সমাপ্ত করা। আর এ কাজটি সম্পন্ন করতে শিল্প মন্ত্রণালয় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং আমরা চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই এটি সম্পন্ন করব। এরপর বাকি সকল কাজ ট্যানারি মালিক ও চামড়া শিল্প উদ্যোক্তাদের। তাদের বিষয়ে আমরা কোনো দায়-দায়িত্ব নেব না।
তিনি বলেন, তৈরি পোশাক শিল্প উদ্যোক্তারা যেভাবে নিজেদের স্বার্থে কারখানার উন্নয়ন ঘটিয়েছেন, ক্রেতাদের কমপ্লায়েন্স অনুসরণ করেছেন, ঠিক একইভাবে ট্যানারি মালিকাদেরও নিজ উদ্যোগে কারখানার উন্নতি ঘটাতে হবে এবং ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী কমপ্লায়েন্ট হতে হবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশের গণমাধ্যম বিভিন্ন ইস্যুতে জনমত সৃষ্টিতে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে।
শিল্প সচিব মো. আবদুল হালিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, ইআরএফ সভাপতি সাইফুল ইসলাম দিলাল, বিটিএ চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ, ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলামসহ শিল্প মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও চামড়া শিল্প সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দরা।