এনআরসি ইস্যুতে ব্যাকফুটে বিজেপি!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

এনআরসি ইস্যুতে ব্যাকফুটে বিজেপি!
ছবি : ইন্টারনেট

ভারতজুড়ে এনআরসি অর্থাৎ নাগরিকপঞ্জি নিয়ে সরব বিজেপি৷ দুদিন আগেও রাঁচিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি বলেছেন, গোটা দেশে এনআরসি হবে৷ কিন্তু বাংলায় তিনটি উপনির্বাচনের পর কার্যত এনআরসি শব্দটিই বলতে ভয় পাচ্ছেন বিজেপি নেতারা৷

মাত্র কয়েক মাস আগে যে রাজনৈতিক তাস পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে বিপুল পরিমাণ ভোট এনে দিয়েছিল, সেই তাসই কি এখন তাদের জন্য বুমেরাং হয়ে গিয়েছে? বাংলায় তিনটি উপনির্বাচনে পরাজয়ের পর এই প্রশ্নই ঘুরছে রাজ্য বিজেপির অন্দরে৷

দলীয় নেতৃত্বের বক্তব্য, আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে৷ রাজ্যের সাধারণ মানুষের কাছে এনআরসি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে ঠিকভাবে পৌঁছতে পারেনি দল৷ তিনটি উপনির্বাচনে তার অনেকটাই প্রভাব পড়েছে৷

সূত্রের খবর, কীভাবে এই পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানো যায়, তার প্রস্তুতিও ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে রাজ্য বিজেপি৷ সিদ্ধান্ত হয়েছে, এনআরসি নয়, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়েই প্রচার চালানো হবে৷ বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা এই বিলে সবুজ সংকেত দিয়েছে৷ সংসদের চলতি অধিবেশনেই যা লোকসভা এবং রাজ্যসভায় পেশ হওয়ার কথা৷

রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, উপনির্বাচনে এনআরসির প্রভাব যে পড়েছে, দল তা অস্বীকার করছে না৷

এ বছর লোকসভা নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ একাধিকবার পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে জাতীয় নাগরিকপঞ্জির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছিলেন৷ লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলেও তার প্রভাব পড়েছিল বলে মনে করেছিল রাজনৈতিক মহলের একাংশ৷ বিজেপির বক্তব্য ছিল, নাগরিকপঞ্জি প্রসঙ্গে অনুপ্রবেশকারীর বিষয়টিও সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া গিয়েছিল৷

বলা হয়েছিল, হিন্দু বাঙালি এর ফলে উপকৃত হবে৷ কিন্তু লোকসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণার কিছু দিনের মধ্যেই আসামে নাগরিকপঞ্জির তালিকা প্রকাশিত হয়৷ সেখানে দেখা যায়, ১৯ লক্ষের তালিকায় ১১ লক্ষ মানুষই হিন্দু৷ রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, মাত্র কয়েকমাস আগে ধর্মীয় মেরুকরণের যে তাস খেলে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছিল, আসামের তালিকা তাতে জল ঢেলে দিয়েছে৷

পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু ভোটব্যাংকও এখন আর বিজেপিকে বিশ্বাস করতে পারছে না৷ রাজ্যের শাসক দলও তাদের প্রচারে বারবার সে কথাই তুলে ধরছে৷ যার সরাসরি প্রভাব ভোটের বাক্সে পড়েছে বলেই তৃণমূলের দাবি৷ দলের রাজ্যসভা সাংসদ মানস ভুঁইঞা দাবি করছেন, এনআরসি নিয়ে ক্ষোভের কারণেই রাজ্যে বিজেপি শেষ হয়ে যাবে৷

বস্তুত, আসামের তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরে পশ্চিমবঙ্গে যে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে, তা আগেই আশঙ্কা করেছিলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব৷ পুজোর আগে রাজ্যে এসে অমিত শাহও দলীয় কর্মীদের বলেছিলেন, এনআরসি নয়, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়েই মানুষের কাছে যেতে হবে৷ এনআরসি শব্দটি উচ্চারণও করা যাবে না৷

রাজ্য বিজেপির আর এক সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুও কার্যত স্বীকার করে নিচ্ছেন, তারা মানুষের কাছে পৌঁছতে পারেননি৷ উপনির্বাচনের ফলাফলে তার স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে৷ ফলে আপাতত তারা অপেক্ষা করছেন সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হওয়ার জন্য৷

সেই বিল পাস হলে তারা হিন্দু উদ্বাস্তুদের বোঝাবেন, এনআরসি হলেও তাদের ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই৷ প্রতিবেশী রাজ্য থেকে আসা অমুসলিম মানুষদের শরণার্থী হিসেবেই দেখবে ভারত এবং দ্রুত তাদের নাগরিকত্বের সুযোগ করে দেওয়া হবে৷ যদিও ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল কতটা সাংবিধানিক তা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন আছে৷ বিরোধীরা তা নিয়ে সরবও হয়েছেন৷

তবে একইসঙ্গে বিজেপির অভিযোগ, যে কায়দায় এবার পশ্চিমবঙ্গে উপনির্বাচন হয়েছে, তাতে শাসক দলের দাদাগিরি সকলেই দেখতে পেয়েছেন৷ করিমপুরের প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদারকে টেলিভিশন ক্যামেরার সামনেই লাথি মেরে ঝোপে ফেলে দেওয়া হয়েছে৷ ভোটারদেরকেও বহু জায়গায় শাসানো হয়েছে৷

তবে একই সঙ্গে বিজেপির কোনো কোনো নেতার বক্তব্য, এ সমস্ত ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে কম বেশি ঘটতেই থাকে৷ মানুষ সঙ্গে থাকলে এর পরেও যে জেতা যায়, গত লোকসভা ভোটে এবং অন্য কয়েকটি উপনির্বাচনে তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছিল৷ ফলে এক্ষেত্রে নিজেদের ভুল স্বীকার করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে৷

সূত্র : ডয়চে ভেলে

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে