বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) দীর্ঘ দুই মাসের অচলাবস্থা শেষে ফের সচল হয়েছে। বুয়েট কর্তৃপক্ষ তিন দফা দাবি পূরণ করায় আন্দোলন থেকে সরে আসার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
২৮ ডিসেম্বর থেকে টার্ম পরীক্ষায় বসতেও সম্মতি জানিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শুরু থেকেই সচেষ্ট থাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারা।
আজ বুধবার বিকালে বুয়েটের শহীদ মিনারের পাদদেশে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা জানান তারা। বুয়েট কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি মেনে নেয়ার পর নিজেদের অবস্থান জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অন্যতম মুখপাত্র ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাহমুদুর রহমান সায়েম।
বক্তব্য রাখেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আরেক মুখপাত্র মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অন্তরা মাধুরী তিথী।
সার্বিক বিষয়ে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, শিক্ষার্থীদের সবগুলো দাবি আমরা মেনে নিয়েছি। সর্বশেষ ছাত্র রাজনীতি ও র্যা গিং নিষিদ্ধের একটি সারাংশ আমরা প্রকাশ করেছি। শিক্ষার্থীরা একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরে যাবে। সবার সহযোগিতায় আমরা কাজগুলো করতে পেরেছি। শনিবার একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে ২৮ ডিসেম্বরের পরীক্ষার বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।
তিনি আরও বলেন, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়টি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা নোটিশ আকাড়ে প্রকাশ করেছি। এটি অধ্যাদেশে অন্তর্ভুক্তির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
গত ৬ অক্টোবর বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদকে শেরেবাংলা হলে পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। এরপর থেকে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা। ১৪ নভেম্বর সংবাদ সম্মেলন করে তিনটি দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। যা বাস্তবায়নে তিন সপ্তাহ সময় নেয় বুয়েট কর্তৃপক্ষ।
দাবিগুলো ছিল- মামলার অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার, বুয়েটের আহসানউল্লাহ, তিতুমীর ও সোহরাওয়ার্দী হলে আগে ঘটে যাওয়া র্যা গিংয়ের ঘটনাগুলোয় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী শাস্তি, সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি এবং র্যা গিংয়ের জন্য সুস্পষ্টভাবে বিভিন্ন ক্যাটাগরি ভাগ করে শাস্তির নীতিমালা প্রণয়ন করার পর একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে অনুমোদন করে বুয়েটের অধ্যাদেশে সংযোজনের জন্য পরবর্তী ধাপগুলোয় পাঠানো।
শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ২১ নভেম্বর আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২৬ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং ৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেয়া হয়েছে। ২৭ নভেম্বর র্যা গিং-এর ঘটনায় ৯ জনকে হল থেকে স্থায়ী বহিষ্কারসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সর্বশেষ গত সোমবার রাতে র্যা গিং ও সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতিতে জড়িত হলে শিক্ষার্থীদের স্থায়ী বহিষ্কারসহ বিভিন্ন ধরনের শাস্তির বিধান রেখে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়। এতেই বিশ্ববিদ্যালয়টির অচলাবস্থা নিরসন হয়। শিক্ষার্থীদের তিন দাবির মধ্যে কেবল তিতুমীর হলে আগের র্যা গিংয়ের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি বাকি রয়েছে। এটি হলেই শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হবে।
চলতি সপ্তাহের মধ্যেই তিতুমীর হলে র্যা গিংয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান।
প্রসঙ্গত, ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে খুন হন বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। চুক্তির বিরোধিতা করে গত ৫ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ।
এর পরদিন ৬ অক্টোবর রাতে শিবির সন্দেহে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
- বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী : ১০ জানুয়ারি কাউন্টডাউন শুরু
- সিনহার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে ফাঁসলেন নাজমুল হুদা
আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় ২৫ জনকে আসামি করে ১৩ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে পুলিশ। অভিযোগপত্রভুক্ত ২৫ আসামির মধ্যে ২১ জনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২১ জনের মধ্যে ১৬ জনের নাম আবরারের বাবার করা হত্যা মামলার এজাহারে আছে।
তদন্ত শেষে পুলিশ বলেছে, আবরারকে হত্যায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন ১১ জন। তারাই আবরারকে কয়েক দফায় মারপিট করেন। বাকি ১৪ জন বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্নভাবে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।