পেঁয়াজ মজুত করতে নির্মাণ হচ্ছে ৬ গুদাম

মত ও পথ প্রতিবেদক

পেঁয়াজ
ফাইল ছবি

দেশে ভবিষ্যতে আর যাতে পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট তৈরি না হয় এবং ব্যবসায়ীরা যাতে পেঁয়াজ নিয়ে কারসাজি করতে না পারেন, সে জন্য ছয়টি গুদামঘর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চট্টগ্রাম, রংপুর ও মৌলভীবাজার—এই তিন জেলায় মোট ছয়টি গুদাম নির্মাণ করা হবে।

জানা যায়, প্রতিটি জেলায় দুটি করে গুদাম নির্মাণ করবে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য এসব গুদাম নির্মাণ করা হচ্ছে। টিসিবির নিজস্ব জমিতে এসব গুদাম নির্মাণ করা হবে। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত এক আন্ত মন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়।

universel cardiac hospital

টিসিবির কর্মকর্তারা জানান, তেল, গম, ডাল ও আলুর জন্য দেশে গুদামঘর রয়েছে। কিন্তু পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য দেশে কোথাও গুদাম নেই। পেঁয়াজের দাম নিয়ে নানা সময়ে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করেন। তবে অন্যবারের তুলনায় এবার পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে রেকর্ড হয়েছে। প্রতি কেজি পেয়াজ ২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবারও সচিবালয়ের পাশে টিসিবির মাধ্যমে কম দামে দুই স্থানে পেঁয়াজ বিক্রি করতে দেখা গেছে। পাকিস্তান, তুরস্কসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করলেও এখনো পণ্যটির দাম সহনীয় পর্যায়ে আসেনি।

নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটি ঘিরে ভবিষ্যতে যাতে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করতে না পারেন এবং ভারত, মিয়ানমার, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে না হয়, সে জন্য পেঁয়াজ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান টিসিবির কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, বৈজ্ঞানিক উপায়ে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে না পারায় কৃষকের অনেক পেঁয়াজ নষ্টও হয়ে যায়।

পরিকল্পনা কমিশন থেকে পাওয়া তথ্য মতে, তিনটি জেলায় ছয়টি গুদাম নির্মাণে মোট খরচ ধরা হয়েছে ২৫ কোটি টাকা। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে এই টাকার জোগান দেওয়া হবে। প্রকল্পটিতে যেহেতু ৫০ কোটি টাকার কম খরচ হবে, তাই এটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় যেতে হবে না। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান নিজ ক্ষমতাবলে প্রকল্পটি অনুমোদন করতে পারবেন।

সভায় যেহেতু প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে, তাই শিগগিরই প্রকল্পটি পরিকল্পনামন্ত্রীর কাছ থেকে অনুমোদন মিলতে পারে। এরপর যত দ্রুত সম্ভব প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা।

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) সাহিন আহমেদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, দেশে এত দিন পেঁয়াজ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ছয়টি গুদাম নির্মাণ হলে সেখানে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে। এতে একদিকে কৃষক তাঁর পেঁয়াজ এসব গুদামে রাখতে পারবেন, অন্যদিকে ব্যবসায়ীরাও আর পেঁয়াজের দাম বাড়াতে পারবেন না।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দেওয়া তথ্য বলছে, দেশে এখন বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৪ থেকে ২৫ লাখ টন। দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ১৮ লাখ টন। আমদানি করতে হয় ছয় লাখ টনের মতো। যদিও কৃষি মন্ত্রণালয় দাবি করে আসছে, পেঁয়াজের উৎপাদন ২০ লাখ টনের বেশি। অবশ্য টিসিবির সচিব এনামুল হক বলেন, আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনতে ছয়টি পেঁয়াজের গুদাম নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, টিসিবির নিজস্ব জমিতে এসব গুদামঘর নির্মাণ করা হবে।

টিসিবির কর্মকর্তারা বলেছেন, ছয়টি গুদাম নির্মাণ শেষ হলে দুইভাবে সেখানে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা হবে। প্রথমত, কৃষকের কাছ থেকে কিনে এনে গুদামে রাখা হবে। দ্বিতীয়ত, সরকার চাইলে গুদামঘর ভাড়াও দিতে পারে। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধন্ত হয়নি। ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হলে সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

সূত্র মতে, টিসিবি এখন তেল, গম, ডাল, আলু যেসব গুদামঘরে রাখে, সেগুলো ভাড়ায় নেওয়া। বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য ভাড়া নিলেও টাকা দিতে হয় পুরো বছরের। এতে সরকারের অনেক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। সরকারের নিজস্ব গুদামঘর থাকলে আর এই সমস্যায় পড়তে হবে না। এ ছাড়া অতিরিক্ত ভাড়াও গুনতে হবে না।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে