বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে চলমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের উদাহরণ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, বন্ধুপ্রতীম ভারত এমনকিছু করবে না, যাতে উভয় দেশের জনগণের মধ্যে দুশ্চিন্তা বা আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
আজ শুক্রবার জাতীয় জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান ও বাংলাদেশ-ভারত স্বীকৃতির ৪৮তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ভারতের আসাম রাজ্যে চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) তৈরির প্রেক্ষাপটে সেখান থেকে অসংখ্য মানুষ বাংলাদেশে প্রবেশ করছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসে। এই সমস্যার শুরু থেকে ঢাকা নয়া দিল্লির সঙ্গে একই সুরে বলে যাচ্ছে আসামের নাগরিকপঞ্জি ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের সরকার প্রধানদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নিঃসন্দেহে অনেক বেশি শক্তিশালী করেছে। আমরা আশাবাদী যে আগামীতে আমাদের এ সম্পর্ক ক্রমান্বয়ে নিবিড়তর হবে। একইসঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা বন্ধুপ্রতীম ভারত এমন কিছু করবে না যাতে উভয় দেশের জনগণের মধ্যে দুশ্চিন্তা বা আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলমান সম্পর্কে দুই দেশ এগিয়ে যাবে আর এতে উভয় দেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের বাংলাদেশকে স্বীকৃতির অবদান তুলে ধরেন মোমেন।
তিনি বলেন, আজকের এই দিনটি নিঃসন্দেহে একই সঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারতের জন্য একটি অত্যন্ত স্মরণীয় ও ঐতিহাসিক দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে ভারত বাংলাদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভারত সরকার এবং ভারতীয় জনগণের বহুমাত্রিক অবদানের বিস্তারিত আলোচনা ছাড়া বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অসম্পূর্ণ ।
এ সময় মোমেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভারতে শরণার্থী হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে মোমেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারত বাংলাদেশের এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়। শুধু তাই নয়, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং তাদের অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে যে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে তা তুলনাহীন। এছাড়া বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে জনমত গঠনে ভারত সরকারের অপরিসীম অবদান কখনোই ভোলার নয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাশ। হাইকমিশনার বলেন, ১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে ছিল, এখন আছে, সবসময় থাকবে। যে সম্পর্ক ৭১-এ শুরু হয়েছে তা আজ সোনালী যুগে চলছে, এটিকে আরও নতুন অধ্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। ৪৮ বছরে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক, সামাজিক খাতে যে উন্নতি করেছে তা বিশ্বে অনুকরণীয়।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা ও প্রাক্তন ডেপুটি স্পিকার কর্নেল শওকত আলী, মানবাধিকার নেত্রী আরমা দত্ত ও ব্রিটিশ মানবাধিকার নেতা জুলিয়ান ফ্রান্সিস প্রমুখ।