বিতর্কিত ও সুবিধাবাদীদের দলে না টানতে নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এমন লোকেরা দলের সব অর্জন খেয়ে ফেলবে বলে মনে করেন তিনি।
আজ রোববার বিকালে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, পোস্টার, ব্যানার ও বিলবোর্ডে সুন্দর ছবি দিয়ে নেতা হওয়া যাবে না। নেতা হতে হলে মানুষের হৃদয়, মানুষের ভালোবাসাকে জয় করতে হবে। সুবিধাবাদী খারাপ লোকদের আওয়ামী লীগে দরকার নেই। এরা উন্নয়ন অর্জন উইপোকার মতো খেয়ে ফলবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, মাদক, ভূমিদস্যু ও দখলদারদের দরকার নেই। শীতের অতিথি পাখি, মৌসুমী পাখিদের দরকার নেই। আমরা মৃত্যুর মিছিলে দাঁড়িয়ে বিজয়ের জয়গান গাই, ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে দেশের পতাকা উড়াই, জনগণই আমাদের ক্ষমতার উৎস।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচাতে হবে, মুক্তিযোদ্ধাকে বাঁচাতে হলে আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হবে। আওয়ামী লীগকে বাঁচাতে হলে ত্যাগী কর্মীদের বাঁচাতে হবে, ত্যাগী নেতাদের বাঁচাতে হলে শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে হবে।
তাই দেশের চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বারবার ক্ষমতায় আনার আহ্বান জানান তিনি।
‘বিএনপি নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই’
বিএনপির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বিএনপির আন্দোলনের মরাগাঙ্গে আর জোয়ার আসবে না। তারা এখন দেশ ছেড়ে বিদেশিদের কাছে কথায় কথায় নালিশ করছে। এ কারণে তারা এখন নালিশ পার্টিতে পরিণত হয়েছে।
বিএনপির নেতা নেই, নেতৃত্ব আসবে কোথা থেকে-এমন প্রশ্ন তুলে ওবায়দুল কাদের বলেন, টেমস নদীর ওপার থেকে নির্দেশ আসে আর পুতুল ফখরুল নাচে। বিএনপির অস্থিত্ব কোথায়? তাদের দুই উইকেট পড়ে গেছে। আরও যাবে। অস্তিত্ব সংকটে আছে বিএনপি। বিএনপিকে নিয়ে বিচলিত হওয়ার কিছুই নেই।
আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ঝড়, দুর্যোগ, অন্ধকারে লড়াই করে গণতন্ত্রকে শৃঙ্খলমুক্ত আর জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন শেখ হাসিনা। শুধু বাংলাদেশ নয়, তিনি সারা বিশ্বে প্রশংসিত। বিশ্বের তিনজন সৎ রাষ্ট্রনায়কের মধ্যে শেখ হাসিনা একজন, চারজন পরিশ্রমী নেতার মধ্যে তিনি একজন, ১০ জন প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়কের একজন শেখ হাসিনা। ৪৪ বছরের জনপ্রিয় রাষ্ট্রনায়ক, জনবান্ধব সরকার, সাহসী রাজনীতিবিদ, সফল কূটনীতিকের নাম শেখ হাসিনা।
ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০ বার হত্যা চেষ্টা করেছে। কিন্তু আল্লাহর রহমতে তিনি বেঁচে গেছেন। আওয়ামী লীগকে নিয়ে এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। সরকার উৎখাতের পাঁয়তারা করছে তারা। চক্রান্তে চোরাগলি বেছে নিয়েছে বিএনপি। এদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে।
বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের বিদায়ী সভাপতি গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলালের সভাপতিত্বে ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে উদ্বোধক হিসেবে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু-এমপি। বিশেষ বক্তা ছিলেন পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটির মন্ত্রী মর্যাদার আহ্বায়ক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি।
এছাড়া বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ মল্লিক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রহমান, বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাসিম, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিম, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম, আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মি আহমেদ।
এর আগে স্বাগত বক্তব্য দেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। আর সাংগঠনিক রিপোর্ট উপস্থাপন করেন মহানগরের সাধারণ সম্পাদক একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন।
সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, সদস্য গোলাম রাব্বানি চিনু, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শহীদ জননী শাহানারা আবদুল্লাহ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য আনোয়ার হোসেন, সদর আসনের সাবেক এমপি জেবুন্নেছা আফরোজ, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য প্রমুখ।
- বঙ্গবন্ধু বিপিএলের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
- চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে হবে: নাসিম
এর আগে বেলা ১১টায় জাতীয় সঙ্গীতের সাথে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং পরে বেলুন-ফেস্টুন ও পায়রা উড়িয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু। পরে একাত্তরের শহীদদের স্মরণে শোক প্রস্তাব উত্থাপন ও দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
পরে উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশন শেষে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। তাছাড়া দুপুর আড়াইটায় সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষ হলে বিকাল ৩টায় নগরীর বরিশাল ক্লাবে কাউন্সিল শুরু হয়। এতে ৩৭১ জন কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন।