ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নূরের পদত্যাগ চেয়েছেন ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত ডাকসু নেতৃবৃন্দ। আজ রবিবার দুপুরে ডাকসু ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন তারা।
এ সময় দুর্নীতির দায়ে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত সংগঠনটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানীসহ ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত সকল প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ডাকসুর সদস্য রাকিবুল হাসান রাকিব।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সম্প্রতি দুটি টেলিফোন ফোনালাপ ফাঁস হবার মাধ্যমে নূরের স্বরূপ সকলের সামনে উন্মোচিত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাবার অভিনয় করতে করতে নূর যে টেন্ডারবাজি, তদবির বাণিজ্য, অনৈতিক লেনদেন ইত্যাদিতেও দক্ষতা অর্জন করেছে তা ছাত্রসমাজের সামনে পরিষ্কার হয়েছে। এই ফোনালাপ প্রকাশিত হবার পর নূরের বিভিন্ন বক্তব্য, বিজ্ঞপ্তি, মন্তব্য আমরা গভীরভাবে লক্ষ্য করেছি। সেখানে তিনি যেভাবে নিজের অভিমত ব্যক্ত করেছেন তা ছাত্র সমাজকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের শামিল। কোন ভবনের কি কাজের কথা সে আলাপে আলোচিত হয়েছে তা আপনাদের মাধ্যমে আমরা স্পষ্টভাবে জানতে চাই। আমরা চাই আলোচিত সেই আন্টির ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক পুরো বিবরণ জাতির সামনে উপস্থাপন করা হোক। যে ‘পরিচিত ভাইয়ের’ সাথে কথোপকথন তার পরিচয় প্রকাশ করা হোক। যুক্তরাজ্য প্রবাসী যার সাথে কথোপকথন ফাঁস হয়েছে, তার পরিচয়ও প্রকাশ করা হোক। আমরা এও জানতে চাই যে, কি এমন কথা, লেনদেন, সম্পর্ক তাদের মধ্যে বিদ্যমান যা হোয়াটসঅ্যাপে বলতে হবে? অভিযোগ যেহেতু নূরের দিকে, তাই নূরকেই এসব প্রকাশ করতে হবে বলেও জানান তিনি।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ডাকসু ভবনের বাইরে নূর সাংবাদিকদের বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করতে পারলে কেউ বলার আগেই আমি ভিপি পদ থেকে পদত্যাগ করব। তবে রাতের ভোটে নির্বাচিত ছাত্রলীগের কথায় আমি পদত্যাগ করব না।
সংবাদ সম্মেলনে নূরকে জাতীয় বেঈমান আখ্যা দিয়ে রাকিবুল হাসান রাকিব বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবেগকে ব্যবহার করে নূর আজ ডাকসুর ভিপি পদের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে অবস্থান করছে। নিজেকে জাতীয় বীর হিসেবে হাজির করতে গিয়ে তিনি আজ জাতীয় বেঈমানে পরিণত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে প্রত্যাশা নিয়ে তাকে নির্বাচিত করেছে, নূর একদিকে তার কিছুই পূরণ করতে পারেনি, অন্যদিকে তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা করেছে, জাতির সামনে শিক্ষার্থীদের লজ্জিত করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কল্যাণার্থে নূরের নামে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঁচ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে, যার এক পয়সাও এ নয় মাসে ব্যয় না করে নূর শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করেছে, নিজের দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। বিগত নয় মাসে ডাকসু ভিপির উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি কাজও সম্পন্ন না হলেও এই ভিপি পদকে ব্যবহার করে তিনি নিজের রাজনৈতিক অভিলাষ পূরণের কাজ করেছেন পুরোদমে।
লিখিত বক্তব্যে রাকিবুল আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের কথা না বলে তিনি দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার অধিকার নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের অন্যায্য উন্নয়ন ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদ না করে, বনানী অগ্নিকান্ডে সেলফি তুলতে গিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে বিভিন্ন বিভাগ ও অনুষদে না গিয়ে, দৌড়ে বেরিয়েছেন বিভিন্ন দেশের দূতাবাসের অভিজাত নাইট পার্টিতে। শিক্ষার্থীদের ন্যূনতম স্বস্তি-প্রশান্তির উদ্যোগ না নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন বিভিন্ন টক শো তে চটকদারি বক্তব্য দিয়ে। খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলাকে ‘মাত্র দুই কোটি টাকার বিষয়’ বলে, নিজের সম্পর্কে বলেছেন, ‘ডাকসু ভিপির জন্য মাত্র ১৩ কোটি টাকা কোন বিষয় নয়’।
ভিপি নূরের পদত্যাগ চেয়ে তিনি বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা দেশের আপামর ছাত্র সমাজের পক্ষে নুরুল হক নূরের প্রতি আহ্বান জানাই, নিজের সকল অপকর্ম, ব্যর্থতা, অক্ষমতা স্বীকার করে ডাকসুর ভিপি পদ থেকে আপনাকে পদত্যাগ করতে হবে। এসময় তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং ডাকসুর সভাপতির নিকট আহ্বান জানান অপরাধ স্বীকার করে নূর যদি পদত্যাগ না করে, তাহলে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে তাকে ডাকসু থেকে বহিষ্কার করে ডাকসু তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কমুক্ত করা হোক ।
- আরও পড়ুন >> সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে আহত ৭০
এর আগে ডাকসুর সহ-সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ডাকসুর ভিপি পদটি অত্যন্ত সম্মানের এবং সর্বোচ্চ নির্বাহী পদ। এই পদকে ব্যবহার করে শুধু আর্থিক অনিয়ম না এটি ব্যবহার করে তিনি রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করছেন। এই পদকে ব্যবহার করে তিনি বিভিন্ন দূতাবাসে দূতিয়ালী করছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি ।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূরের একটি ফোনালাপ ফাঁস হয় যেখানে নূরকে বিভিন্ন আর্থিক লেনদেন এবং একজন প্রবাসীর সাথে টাকা নিয়ে কথা বলতে দেখা যায়। তবে এই ফোনালাপের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, এটি তার ব্যক্তিগত বিষয়। এখানে অন্যায় কিছু বলা হয়নি। আর এই ফোনালাপে অতিরিক্ত কিছু সংযোজন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি ।