মুসলিমবিরোধী বিল রাজ্যসভায়ও পাস, উত্তাল আসাম-ত্রিপুরায় সেনা মোতায়েন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

উত্তাল ভারত
ফাইল ছবি

লোকসভার পর ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভাতেও পাস হলো বিজেপি সরকারের উত্থাপিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল বা সিএবি। ধর্মীয় বিবেচনায় তৈরি বিলটি নিয়ে বিতর্কের পর ২৪০ সদস্যবিশিষ্ট রাজ্যসভায় এর পক্ষে ১২৫ এবং বিপক্ষে ১০৫ আইনপ্রণেতা সমর্থন দেন। রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর করলেই বিলটি এখন আইনে পরিণত হবে।

বিজেপি সভাপতি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উত্থাপিত বিলটির পক্ষে-বিপক্ষে ভোটাভুটির আগে তা সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো হবে এ নিয়েও ভোটাভুটি হয়। বিরোধী দলের সাংসদরা মোট ১৪টি সংশোধনীর প্রস্তাব করেন। কিন্তু ভোটাভুটিতে বিরোধীদের তোলা সব সংশোধনী প্রস্তাব খারিজ হয়।

ভারতীয় পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার বিতর্ক এবং বিরোধীদের প্রবল আপত্তির পর মধ্যরাতে বিলটি পাস হয়। তারপর আজ বুধবার বিলটি নিয়ে রাজ্যসভাতেও জোরালো প্রতিবাদ করে বিরোধীরা। বিশেষ করে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসে ধর্মীয় বিবেচনায় নাগরিকত্ব প্রদানের এই বিল নিয়ে বিজেপির সমালোচনা করেন।

এদিকে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম ও ত্রিপুরা। পরিস্থিতি সামাল দিতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে রাজ্য দুটির বেশ কিছু এলাকায়। দেশটির গণমাধ্যমের খবরে এমন জানানো হয়েছে।

সোমবার সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিলটি উত্থাপন করেন। ক্ষমতাসীন দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় বিলটি পাসে কোনো বেগ পেতে হয়নি তাদের।

আসামের গোহাটিসহ বিভিন্ন স্থানে বিলের প্রতিবাদে উত্তর-পূর্বের ছাত্র সংগঠনের পক্ষে বনধ্ ডাকা হয়। মূল রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদে শামিল হন বিক্ষোভকারীর। স্থানীয় রেল কর্তৃপক্ষ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, অবরোধের কারণে অনেক ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও বাজার।

এনডিটিভি জানিয়েছে, আসাম ও ত্রিপুরায় ৫ হাজার সেনা পাঠানো হয়েছে। বিক্ষোভ সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রেখেছে সেনাবাহিনীর সদর দফতর। সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র বলেন, ইতোমধ্যে সেনা সদস্যদের পাঠানো হয়েছে। তারা পুলিশ ও প্রশাসনকে সহায়তা করবে। শান্তি বজায় রাখতে সেনাবাহিনী ওইসব এলাকায় ফ্ল্যাগ মার্চ করবে।

উত্তর ত্রিপুরায় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে পুলিশ। ওই এলাকার আতঙ্কিত অন্য জাতির বাসিন্দারা বাড়ি ফিরতে না পেরে থানায় এসে আশ্রয় নেন। স্থানীয় একটি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে ৭০টি পরিবার। তাদের বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।

বিলের প্রতিবাদে মিছিলে অংশ নেন গোহাটি মেডিকেল কলেজ ও আসাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসহ বেশির ভাগ কলেজের শিক্ষার্থীরা। গোহাটি-শিলং সড়ক অবরোধ করেছেন তারা। ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানেগ্যাস ছুড়েছে পুলিশ। এছাড়া পুলিশের লাঠিতে আহত হয়েছেন বেশকিছু শিক্ষার্থী।

বিক্ষোভের কারণে ডিব্রুগড় ও গোহাটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যাবতীয় পরীক্ষা অর্নির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে। উত্তর ত্রিপুরায় বেশকিছু দোকানে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভকারীরা। এছাড়া আগরতলা শহরের উত্তর গেট এলাকায় বিক্ষোভকারীরা অবরোধে নামেন। পুলিশ শতাধিক অবরোধকারীকে গ্রেফতার করেছে।

এদিকে ত্রিপুরায় মোবাইল ইন্টারনেট ও এসএমএস পরিষেবা আগামী ৪৮ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য সরকার। দক্ষিণ ত্রিপুরার সিপাহিজলায় বিক্ষোভকারীরা রাস্তা অবরোধ করে রাখায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে দুই বছর বয়সী একটি অসুস্থ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

বুধবার সকাল থেকেই আসাম ও ত্রিপুরার বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক ও রেললাইন অবরোধ করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভের তেজ বাড়তে থাকে। নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে তারা ইটপাটকেল, পেট্রলবোমা ছুড়তে শুরু করে।

২০১৫ সালের আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে আসা অমুসলিম নাগরিকদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে এই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে। দেশের স্বনামধন্য ব্যক্তি, আন্দোলনকারী এবং বিরোধী রাজনৈতিক নেতানেত্রীরা অতি সত্ত্বর এই বিল প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন এবং একে পক্ষপাতদুষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন তারা।

তবে বিজেপি সভাপতি ও মোদি সরকারের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা করেছেন যে, প্রস্তাবিত আইন থেকে উত্তর-পূর্বের অনেকটা অংশই বাদ দেয়া হবে। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের দাবি, এর ফলে এসব এলাকায় প্রচুর অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ঢুকে পড়বে।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা, এনডিটিভি, দ্য হিন্দু, হিন্দুস্তান টাইমস

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে