আ.লীগের রণাঙ্গনের যোদ্ধাদের হিসাব জানতে চাইলেন মির্জা ফখরুল

মত ও পথ প্রতিবেদক

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
ফাইল ছবি

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কতজন রণাঙ্গনের যোদ্ধা ছিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে এর হিসাব চেয়েছেন।

আজ রোববার বিকালে সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় ফখরুল এই প্রশ্ন রাখেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীরা যারা কোনো নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে আসেনি তারা অনেক বড় বড় কথা বলেন। তারা আমাদেরকে বাণী দেন, আমাদেরকে উপদেশ দেন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ ছিল স্বাধীন মত প্রকাশের দেশ, কিন্তু আজকে আমাদের এই দেশকে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ধ্বংস করে ফেলেছে। আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই এই গণতন্ত্র কাদের হাতে হত্যা হয়েছে? যারা আজ দাবি করে স্বাধীনতা যুদ্ধের একমাত্র ধারক-বাহক (আওয়ামী লীগ) তাদের হাতে গণতন্ত্র হত্যা হয়েছে। তারাই ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত যখন দেশ শাসন করেছে তখন একে একে গণতান্ত্রিক সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়ে সর্বশেষ একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রবর্তন করেছেন। এদেশের মানুষ এত সহজেই এটা ভুলে যায়নি।

আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, আজকে যখন আপনাদের নেতা এই অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী, তিনি যখন বলেন ‘জিয়াউর রহমান পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেন এবং তিনি কোনো মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না’, এই ধরনের বক্তব্য দেন তখন একবারও কি তারা চিন্তা করেন তাদের অতীতটা কী ছিল? আর জিয়াউর রহমানের ভূমিকা কী ছিল? সেদিন (স্বাধীনতাযুদ্ধ) আপনারা পালিয়ে গিয়েছিলেন এবং জিয়াউর রহমান এই মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, আজকে লক্ষ্য করে দেখেন রোহিঙ্গারা এসেছে বাংলাদেশে, সেই রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশ একবারও উচ্চারণ হয়নি যে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের কোনো হত্যার শিকার হয়েছেন। মিয়ানমার গণহত্যা করেছে এই সরকার কোথাও  বলেছে বলে আমি শুনিনি। গাম্বিয়া আফ্রিকার একটি ছোট দেশ, তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে মামলা করেছে যে রোহিঙ্গারা গণহত্যার শিকার হয়েছে। আর আমাদের বাংলাদেশের সরকার বলছে তারা নাকি সাহায্য করার জন্য সেখানে গেছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ওখানকার আন্তর্জাতিক আদালতে যারা কাজ করছেন তারা বলছেন, বাংলাদেশ এখানে আগে কোন এপ্লাই করে নাই, তাই তাদেরকে কাজ করার মতো আর কোনো সুযোগ নেই।

ভারতের এনআরসি সম্পর্কে ফখরুল বলেন, আমরা প্রথম থেকে বলে আসছি এই এনআরসি বিষয়টিতে আমাদের সরকারের মনোযোগ দেয়া উচিত। তাদের ভারতের সাথে কথা বলা উচিত। কারণ, এখানে আমাদের স্বার্থ আছে। আজকে বারবার বলা হচ্ছে— বাংলাদেশিরা বেআইনিভাবে ভারতে প্রবেশ করছে, এটা একটা মারাত্মক কথা। তার মানে এনআরসি করে তারা বলছে কাউকে থাকতে দেয়া হবে না। তাদের মন্ত্রীরা বারবার ঘোষণা দিচ্ছেন সেইসব মানুষকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে, একটাকেও রাখা হবে না। আমাদের নাগরিক না অথচ বাংলাদেশি বলে তারা ফেরত পাঠিয়ে দিবেন এবং সেটা আমাদের ওপর লক্ষ লক্ষ মানুষের আরেকটি চাপ আসবে। এটাতো আমাদের রাষ্ট্রের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, স্থিতিশীলতা সকল কিছুর ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। সেসব বিষয়ে এ সরকারের কোনো কথা নেই।

মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকার নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এদেশে আর কখনো সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হবে কি না আমি জানি না। আমরা জানি এখন ৯ শতাংশ, ৮ শতাংশ এমনকি ৭ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে যায় না। কারণ ভোট ব্যবস্থার ওপর তাদের আস্থা চলে গেছে।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আরও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম-মহাসচিব খাইরুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে