পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিক নয়, এমন কেউ যদি ভারত থেকে এ দেশে প্রবেশ করে, তবে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হবে।’
আজ রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সম্প্রতি কথিত অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতে ভারতের আসামে নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) প্রকাশ এবং কেন্দ্রীয় সংসদে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাসের পর দেশটি থেকে সীমান্ত দিয়ে অনেকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে বলে খবর বেরিয়েছে সংবাদমাধ্যমে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন দেখে ভারত থেকে ফড়িয়া ধরে এদেশে লোক আসছে। যারা আসছে তারা কাজকর্ম পাচ্ছে। ভারতের তুলনায় আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো। ফড়িয়ারাও গরিব মানুষদের বলছে, বাংলাদেশে গেলে তোমাদের না খেয়ে থাকতে হবে না। তবে বাংলাদেশের লোক ছাড়া অন্য কেউ এদেশে ঢুকলে তাদের বিদায় করে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, আমরা ভারতকে বলেছি, আমাদের কোনো অবৈধ লোক তোমাদের দেশে থাকলে স্ট্যান্ডার্ড প্রসিডিউরের (যথার্থ প্রক্রিয়ায়) মাধ্যমে তাদের ফেরত পাঠাও।
এনআরসি প্রকাশের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের নাগরিকপঞ্জি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে। এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তাছাড়া রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দেশটির কোনো কোনো নেতা বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন। আমরা সেসব বক্তব্য আমলে নিচ্ছি না। কারণ, সরকারের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাসের জন্য সংসদে উত্থাপনকালে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পাকিস্তান, আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের নামও উল্লেখ করে বলেন, এসব দেশে সংখ্যালঘুরা (অমুসলিমরা) নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সেই নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের ভারত আশ্রয় ও নাগরিকত্ব দেবে, সেজন্য নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন করা হয়েছে।
অমিত শাহর এ অভিযোগ নাকচ করে দেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ বিষয়ে অসন্তোষও প্রকাশ পায় ড. মোমেনের বক্তব্যে। পরে তিনি তার নির্ধারিত ভারত সফর বাতিল করেন।
ড. মোমেন তার সাম্প্রতিক ভারত সফর বাতিলের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, বঙ্গবন্ধু সরকারের একটি অলিখিত নিয়ম আছে, মন্ত্রী-সচিব একই সময়ে বিদেশে যাওয়া যাবে না।
যদিও সম্প্রতি মন্ত্রী-সচিব একই সাথে বিদেশ সফর করেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ডিসেম্বর গৌরবের মাস। এ মাসে আমার ভারত সফরে যাওয়ার সময় প্রতিমন্ত্রী-সচিব বিদেশে অবস্থান করছেন। সে কারণে সফর বাতিল করা হয়েছে। তবে এজন্য দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্কে প্রভাব পড়বে না।
- ১০৭৮৯ রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়
- ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েন হোক চাই না: ওবায়দুল কাদের
প্রসঙ্গত, এনআরসি প্রকাশের পর নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাসকে কেন্দ্র করে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় বিক্ষোভ দমনে সংঘাতে জড়াচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। বিজেপি সরকারের কর্মকাণ্ডে উদ্বেগের তথ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থা জেনোসাইড ওয়াচের প্রতিষ্ঠাতা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা ড. গ্রেগরি স্ট্যানটন সম্প্রতি এক আলোচনা অনুষ্ঠানে বলেন, ভারতে গণহত্যার প্রস্তুতি প্রক্রিয়াধীন। আসাম এবং কাশ্মীরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন গণহত্যার আগের পর্যায়ে রয়েছে। এর পরের পর্ব হলো নির্মূলকরণ- আমরা যেটাকে গণহত্যা বলে থাকি।