রাজাকারদের তালিকা : সরকারকে ধন্যবাদের সঙ্গে প্রশ্ন ড. কামালের

মত ও পথ প্রতিবেদক

ড. কামাল হোসেন
ড. কামাল হোসেন। ফাইল ছবি

রাজাকারদের তালিকা তৈরির জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তবে রাজাকারের তালিকা তৈরিতে দীর্ঘ সময় লেগে যাওয়ায় তিনি সরকারের সমালোচনাও করেছেন।

মহান বিজয় দিবসের দিন আজ সোমবার সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর কামাল হোসেন বলেন, ‘৫০ বছর পরে কেন? এ সরকার তো ১০ বছর ধরে আছে। এতদিন কী হল? মানে এ ১০ বছরে কেন এটা সম্ভব হল না?’

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দীর্ঘ নয় মাস তাদের এদেশীয় দোসর জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ, রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস ও শান্তি কমিটির সহায়তায় বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করে। সন্ত্রমহানি ঘটায় দুই লাখ মা-বোনের।

রবিবার সরকারের হাতে থাকা নথির তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে একাত্তরের সেই স্বাধীনতাবিরোধীদের মধ্যে প্রথম ধাপে ১০ হাজার ৭৮৯ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয়।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রাজাকারদের তালিকা করতে দেরি হলো কেন প্রশ্ন রেখে কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা এই জঘন্য অপরাধ করেছে, তাদের দোষী হিসেবে চিহ্নিত করে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু কথা হচ্ছে এত দেরী হলো কেন?’

বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে বাঙালির ‘সবচেয়ে বড় অর্জন’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘এই স্বাধীনতা এসেছিল জনগণের ঐক্যের শক্তিতে। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে এখনও সেই ঐক্য প্রয়োজন।’

‘স্বাধীনতা অর্জনের পরে আমাদের কী কী লক্ষ্য, আমরা কী ধরনের সমাজ চাই, সমাজ পরিবর্তন চাই, ব্যবধান আছে ধনী এবং গরীবের মধ্যে, তা থেকে যদি আমরা মুক্ত করতে চাই সমাজকে, ক্ষমতা চাই, সমান সুযোগ সবাইকে নিশ্চিত করা উচিত আত্মবিকাশের জন্য…।’

বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত সংবিধানেই এই চিত্রটি তুলে ধরা আছে মন্তব্য করে ড. কামাল বলেন, ‘এখন এটা সবাইকে মিলে করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘একাত্তরে সারা পৃথিবী বলেছে, বাংলাদেশ স্বাধীন হতে পারবে না। কিন্তু আমরা সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলাম।’

‘এখন যেটা হচ্ছে, আমাদের অনেক রকম সমস্যা আছে, এগুলো মোকাবেলা করার জন্য সুষ্ঠু রাজনীতির প্রয়োজন আছে। জাতীয় ঐক্য, জনগণের ঐক্যের প্রয়োজন আছে।’

আর এজন্য বিভক্তির রাজনীতি পরিহার করার আহ্বান জানান গণফোরাম সভাপতি। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি বিভক্ত হয়ে থাকি, তাহলে যারা শোষণ করতে চায়, দুর্নীতি করতে চায়, তারা সুযোগ পেয়ে যায়। এগুলোকে মোকাবেলা করতে হলে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন আছে।’

‘দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পূর্বশর্ত হলো ঐক্য, জনগণের ঐক্য। আর বিভক্তির রাজনীতি যদি হয়, তখন কিন্তু মানুষের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হয়, আমরা একে অন্যের পেছনে লেগে থাকি, কিন্তু মূল যে চ্যালেঞ্জগুলো আমরা সেগুলো মোকাবেলা করি না। আমাদের এটা আবেদন, ঐক্য, জনগণের ঐক্য।’

সংবিধানের চার মূলনীতির মধ্যে গণতন্ত্র এক নম্বর মূলনীতি উল্লেখ করে কামাল বলেন, ‘গণতন্ত্র কার্যকর করতে হলে দরকার অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন। সেটা হচ্ছে না।’

‘দেশের রাজনীতিতে কালো টাকার যে অভিশাপ ঢোকানো হয়েছে, এ কালো টাকা সুস্থ রাজনীতিকে অসুস্থ রাজনীতিতে পরিণত করেছে। টাকা দিয়ে আমরা ভোট কিনতেছি, ভোটবাক্স ভর্তি করছি।’

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে