বিজয় দিবস: আমাদের ভাবনা

সম্পাদকীয়

র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী
র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি। ফাইল ছবি

বাংলাদেশের যুদ্ধ জয়ের ৪৮তম দিবস ২০১৯ এর ১৬ ডিসেম্বর। ১৯৭১ এর এই দিনে বাঙলাদেশ দখলকারী পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ও মিত্র বাহিনী তথা ভারতীয় বাহিনীর সম্মিলিত কমান্ডের নিকট ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (আজকের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) আত্মসমপর্ণ করে। ১৯৭১ এর ২৬ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে যে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল, সুদীর্ঘ ৯ মাস মুজিবনগর সরকারের বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচরদের দ্বারা যে যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল ১৬ ডিসেম্বরে সে যুদ্ধের সমাপ্তি হয় পাকিস্তানীদের আত্মসমপর্ণের মধ্য দিয়ে। বাঙালিরা আধুনিক বিশ্বে সর্বপ্রথম একটি স্বাধীন, স্বার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙলা ভাষাভাষিদের এই রাষ্ট্র গণতন্ত্র, সামাজিক সাম্য, মানবতাবাদ তথা জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা আর সমাজতন্ত্রের আদর্শকে ধারণ করে পথচলা শুরু করে।

আজকে ৪৮ বছর পেরিয়ে ৪৯ বছরে পা দিয়েছে আমাদের এই রাষ্ট্র। কিন্তু ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর থেকে এক নাগারে ২১ বছর আমাদের এই রক্তে কেনা স্বাধীন রাষ্ট্রটি কক্ষচ্যুত ছিল। পরবর্তীতে আরও একবার প্রায় ৪ বছর গণতন্ত্র ভূলণ্ঠিত হয়েছিল এই রাষ্ট্রে ফখরুদ্দিন-ইয়াজউদ্দিন আর মঈনউদ্দিনদের দ্বারা। অর্থাৎ মোশতাক-জিয়া-এরশাদ আর উদ্দিন-ত্রয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রায় ৩০ বছর আদর্শহীনতার নষ্ট চরিত্রে পরিচালিত হয়েছিল। মাঝখানে ১৯৯৬ এর জুন থেকে ২০০১ এর জুলাই পর্যন্ত এবং ২০০৯ এর জানুয়ারী থেকে অদ্যাবধি আমাদের পথ পরিক্রমার নেতৃত্বে আছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমৃদ্ধ নেতৃত্ব। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি। দারিদ্র্যের ও অতি-দরিদ্রের হার সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে। এমডিজি-তে আমাদের অর্জন ঈর্ষনীয়। এসডিজি-তে আমাদের অগ্রগতি প্রশংসনীয়। ২০৪১ সনে আমরা উন্নত দেশে রুপান্তরের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব আমাদেরকে সামনের পথে হাঁটতে শিখিয়েছে।

এতসব স্বত্বেও ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান, লুটপাটতন্ত্র আর চৌর্য্যবৃত্তি, ধর্মীয় সংকীর্ণতার উত্থান, সামাজিক অসাম্য আর অগণতান্ত্রিকতা আমাদের সব অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। যে লক্ষ্য ও আদর্শকে সামনে রেখে আমদের এই রক্তে কেনা স্বাধীন দেশের পথ চলা শুরু হয়েছিল, তা থেকে আমরা সরে দাঁড়াচ্ছি কি না, এ প্রশ্নও আজ দেখা দিয়েছে। পাকিস্তানী ভাবাদর্শের বৈষম্যবাদী পুঁজিবাদী রাষ্ট্র আর জনকল্যানকামী সুষম বন্টনের ভাবাদর্শের বাঙলা রাষ্ট্র কি এক হতে পারে কখনও ? এ প্রশ্নের উত্তরের খোঁজে আমরা ২০১৯ এর বিজয় দিবসের ভাবনায় নিয়ে যাত্রা শুরু করব। নতুন প্রজন্মের নাগরিক ভাবনায় এই প্রশ্নগুলি উত্থাপন করতে আমরা সচেষ্ট হব এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারই হোক এবারের বিজয় দিবসের অঙ্গীকার।

জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধ্। জয়তু বিজয় দিবস।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে