স্থগিত হওয়া রাজাকারের তালিকা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারপ্রধান হিসেবে তারও দায় আছে জানিয়ে বিষয়টিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সঠিক তালিকা হবে জানিয়ে এ ব্যাপারে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভার সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গত ১৫ ডিসেম্বর পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়৷ ১০ হাজার ৭৮৯ জনের এই তালিকায় সরকারের গেজেটে প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ সংগঠকদের নামও রয়েছে৷
এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে তিন দিনের মাথায় আজ বুধবার রাজাকারের তালিকা স্থগিত করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। তালিকা সংশোধন করে আগামী ২৬ মার্চে পুনরায় প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
গণভবনের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এই তালিকা নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন আমাদের আওয়ামী লীগ বা মুক্তিযুদ্ধে যারা গিয়েছিল তাদের সবার নামের তালিকা করে তাদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে পাকিস্তান সরকার সেই সময় অনেকগুলো মামলা দেয়। পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে আমাদের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওই তালিকা থেকে ধরে ধরে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। এরশাদের সময়ে একটা তালিকা বের হলো কিশোরগঞ্জে এক নাম্বার সন্ত্রাসী জিল্লুর রহমান আর দ্বিতীয় হামিদ সাহেব। পরবর্তীকালে দেখা গেল ওই পাকিস্তান আমলের তালিকা সেটা রয়ে গেছে। নথি তো থেকে যায়।
শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে যে তালিকা প্রকাশ হয়েছে সেখানে সব মিলিয়ে একটা গোলমাল করে ফেলেছে। সেখানে অনেকের নাম চলে এসেছে যারা মুক্তিযোদ্ধা তাদেরও নাম। সেখানে কিন্তু এক হাজারের মতো নাম দেওয়া ছিল। এটা একটা রহস্যজনক। আসলে রাজাকারদের যেটা তালিকা সেটা কিন্তু গেজেট করা ছিল। আমাদের যে মানবাধিকার লঙ্ঘন, তখন কিন্তু ওই গেজেট থেকেই তালিকা নিয়ে আমাদের বিচারকার্য চলেছে। কাজেই এখানে একটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, আমি ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলেছি সমস্ত ফাইল খুলে দেখতে। খুব খারাপ একটা কাজ হয়ে গেছে। অনেক মুক্তিযোদ্ধার নাম সেখানে ঢুকে গেছে। ১৫ আগস্টের পর জিয়াউর রহমান সে তালিকা ব্যবহার করেছে, এরশাদ ব্যবহার করেছে, খালেদা জিয়া সে তালিকা ব্যবহার করেছে। যারাই মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছে তাদেরকে তারা সন্ত্রাসী হিসেবে বা বিভিন্ন অভিযোগে তালিকাভুক্ত করে মামলাও দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি এখানে একটা কথা স্পষ্ট বলে দিতে চাই, কোনো মুক্তিযোদ্ধাকে রাজাকার খেতাব দেওয়া হবে না। এটা পারে না, এটা অসম্ভব। এটা আমরা হতে দেবো না।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা রাজাকার তাদের তো আলাদা গেজেট করাই আছে। কোনোভাবেই এটা রাজাকারের তালিকা না। এটা যারা দেখেছেন তাদের সকলের কাছে কষ্ট লেগেছে, মনে আঘাত লেগেছে। যারা মুক্তিযুদ্ধ করলো তাদেরকে যদি রাজাকার বলা হয় এর থেকে দুঃখের, কষ্টের আর কিছু থাকে না। যারা এই দুঃখ পেয়েছেন তাদেরকে আমি বলবো তারা যেন শান্ত হন।
তিনি বলেন, রাজাকারের তালিকা, আলবদর এবং আল শামস এইগুলো কিন্তু গেজেটেড। এইগুলো আপনারা যদি একাত্তরের পত্রিকাও দেখেন সেই পত্রিকায়ও কিন্তু লিস্ট একটা আছে।
- বেতনভুক্ত ৩০ হাজার রাজাকারের তালিকা উপস্থাপন করবে ঘাদানিক
- সরকারবিরোধী আন্দোলনে সবাইকে শরিক হওয়ার আহ্বান বিএনপির
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে রাজাকাররা ক্ষমতায় এসে তারাই রাষ্ট্র পরিচালনা করতে শুরু করল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মুছে দেওয়া হলো। আমরা সেই জায়গা থেকে দেশকে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি এবং সেইখানে আরও অনেক কাজ বাকি। এইটা নিয়ে যারা কষ্ট পেয়েছেন, দুঃখ পেয়েছেন তাদেরকে বলবো দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই। যারা মুক্তিযোদ্ধার পরিবার, শহীদ পরিবার তারা সব সময় আমাদের কাছে শ্রদ্ধেয় এবং জাতির কাছে শ্রদ্ধেয় থাকবে। এর কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, সেই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর থেকে একেবারে ৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত একটা কালো অধ্যায় কেটে গেছে। কাজেই আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও করেছি। এটা অবশ্যই যাচাই-বাছাই করা হবে। আর যারা প্রকৃত দোষী অবশ্যই এটা তাদের শাস্তিযোগ্য অপরাধ।