অবশেষে বিজ্ঞানীরা মোটর নিউরন ডিজিসের কারণ জানতে পারলেন। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব এক্সিটারের এক দল গবেষক দাবি করছেন, তারা এ স্নায়ুরোগের একটি সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়েছেন।
তারা বলছেন, কোলেস্টেরলের ভারসাম্যহীনতা বা কোষে অন্য ধরনের চর্বি জমে যাওয়ার সঙ্গে এ রোগের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এ আবিষ্কারের ফলে এ রোগ শনাক্ত আরও সহজ ও নির্ভুল হবে। পাশাপাশি চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কার হতেও আর বেশি দেরি হবে না বলে আশা করা হচ্ছে।
শুধু যুক্তরাজ্যেই বর্তমানে অন্তত ৫০ হাজার লোক মোটর নিউরন ডিজিস বা এমএনডিতে আক্রান্ত। এ রোগে দেশটিতে প্রতিবছর ২ সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যু হয়।
মোটর নিউরন রোগে আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ও বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত ছিলেন তত্ত্বীয় পদার্থবিজ্ঞানী, জনপ্রিয় মহাবিশ্ব সৃষ্টিতত্ত্ব বিগ ব্যাং ও ব্ল্যাকহোলের অন্যতম ব্যাখ্যাকার স্টিফেন হকিং। ১৯৬৩ সালে রোগ শনাক্তের পর ডাক্তার তাকে বলেছিলেন তিনি দুই বছরের বেশি বাঁচবেন না। কিন্তু তাবত চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের অবাক করে দিয়ে তিনি আরও ৫৫ বছর বেঁচে ছিলেন।
জানা যায়, মোটর নিউরনের সাধারণ ধরন অ্যামিওট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্ল্যারোসিসে (এএলএস) আক্রান্ত ছিলেন হকিং। এমএনডির সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতি এটি। হকিংয়ের চলাচল ও কথা বলার ক্ষমতা ছিল না। এমনকি তিনি কম্পিউটারে বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে চোখ দিয়ে লিখেছেন তার বিখ্যাত সব তত্ত্ব।
মোটর নিউরন ডিজিস হলো কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের একটি রোগ। এ রোগে আক্রান্ত হলে মানুষের মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ অকেজো হয়ে যায়। পাশাপাশি স্পাইনাল কর্ড (সুষুম্না কাণ্ড বা মেরুরজ্জু যা মেরুদণ্ডের ভেতরের একটি দীর্ঘ, সরু, নলাকার স্নায়ুগুচ্ছ) আক্রান্ত হয়। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন পেশীতে মস্তিষ্কের কোনো নির্দেশনা পৌঁছায় না।
এ রোগটি এএলএস নামেও পরিচিত। এ রোগের ফলে পেশী দুর্বল বা শক্ত হয়ে যায়। আক্রান্ত ব্যক্তি এক পর্যায়ে চলাচলের শক্তি হারিয়ে ফেলে। এমনকি কথা বলা, খাদ্য গলাধকরণ এবং শেষ অবধি শ্বাস নেয়ার ক্ষমতাও থাকে না।
এতদিন এ রোগের সঠিক কারণ খুঁজে পাননি চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। এ কারণে চিকিৎসাও আবিষ্কার হয়নি। রোগটি জিনগত কারণেও হতে পারে। আবার ভারী ধাতু এবং কৃষি দূষণের (কীটনাশক, আগাছানাশক) কারণেও কেউ মোটর নিউরন ডিজিসে আক্রান্ত হতে পারে।
ইউনিভার্সিটি অব এক্সিটারের বিজ্ঞানীরা বলছেন, যখন তারা দেখলেন ১৩টি জিনে পরিবর্তন আনলে মোটর নিউরন ডিজিস হয় এবং এসব জিন সরাসরি কোলেস্টেরল প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে সম্পর্কিত তখন তারা বুঝলেন কোলেস্টরলের সঙ্গে এ রোগের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাদের তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে এখন রোগের আক্রমণ ও জটিলতা সম্পর্কে আগেভাগেই অনুমান করা যাবে। পাশাপাশি সম্ভাব্য নতুন ওষুধের প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতেও এ তত্ত্ব কাজে লাগবে।
এ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদন ব্রেইন: অ্যা জার্নাল অব নিউরোলজি সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি