২৩ মাস কারাভোগের পর হুজি ছেড়ে আনসারুল্লাহ’র শীর্ষ পদ

মত ও পথ প্রতিবেদক

হুজি

কম্পিউটার সায়েন্সে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা শেষ করে পূবালী ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন আদনান চৌধুরী। পাশাপাশি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদে (হুজি) সক্রিয় ছিলেন তিনি। ২০১৫ সালে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের হাতে গ্রেফতার হন তিনি। ২৩ মাস কারাভোগ করে জামিনে মুক্তি পান তিনি। তবে তাতেও সোজা হননি। কারাগার থেকে বেরিয়ে ফের জঙ্গিবাদে জড়ান তিনি।

তবে দল বদল করে হুজি ছেড়ে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে সক্রিয় হন। অনলাইনে কম্পিউটারের সামগ্রী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহের ব্যবসার আড়ালে তিনি আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে সক্রিয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।

সর্বশেষ র‍্যাবের অভিযানে রাজধানীর শাহআলী থানাধীন রাইনখােলা ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন এলাকা থেকে আরও তিন জঙ্গিসহ গ্রেফতার হন তিনি। বাকিরা হলেন- মেহেদী হাসান শাকিল ওরফে বাবু (২০), আব্দুল আল মামুন ওরফে আসাদুল্লাহ হিল গালিব (১৮) এবং নাজমুল হাসান (২৯)। তাদের কাছ থেকে জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন ধরনের উগ্রবাদী বই, লিফলেটসহ উগ্রবাদী ডিজিটাল কনটেন্ট, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স সার্কিট, ডিভাইস, ব্যাটারি ও মােবাইল উদ্ধার করা হয়।

র‍্যাবের দাবি, ধারালো অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়ার পাশাপাশি অনলাইনে জঙ্গিবাদে রিক্রুটমেন্টের কাজ করে আসছিলেন তারা।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন, র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেন, গ্রেফতাররা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তারা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার বিপক্ষে, তাদের মতে এই ব্যবস্থা তাগুতি বা বাতিল। তারা এই গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে অবৈধ হিসেবে আখ্যায়িত করে তথাকথিত খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জঙ্গিবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মােহাম্মদ আদনান চৌধুরীর বাড়ি চাঁদপুরে।তিনি কম্পিউটার সায়েন্সে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা শেষ করে পূবালী ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার হিসেবে যোগ দেন। এসময় তিনি হরকাতুল জিহাদে সক্রিয় ছিলেন। ২০১৫ সালে গ্রেফতার হয়ে ২৩ মাস জেলখাটার পর তিনি জামিনে মুক্ত হন। ব্যাংক থেকে তিনি বরখাস্ত হন। পরবর্তীতে তিনি নিষিদ্ধ ঘােষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে যােগদান এবং ঢাকা অঞ্চলের একাংশের শীর্ষ স্থানীয় পদ লাভ করেন।

ফেসবুকের মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনের অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় নেতা আব্বাস উদ্দিন ই শুকুর আলীর (২২) সাথে পরিচিত হয় এবং তার মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রমে আরাও তৎপর হয়। সে জঙ্গি সংগঠনে বিভিন্নভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আসছিল। কুমিল্লা অঞ্চলের শীর্ষ স্থানীয় জঙ্গি শুকুর আলী ইতােমধ্যে গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে আছে।

অনলাইনে কম্পিউটারের সামগ্রী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহের ব্যবসার আড়ালে অনলাইনে শীর্ষ স্থানীয় জঙ্গিদের সাথে নিয়মিত যােগাযােগের কাজটি গত ৩ বছর যাবত পরিচালনা করে আসছিলেন আদনান চৌধুরী।

গ্রেফতারকৃত জঙ্গি সদস্য মেহেদী হাসান শাকিল ওরফে বাবু প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তার বাড়ি নােয়াখালী। বাবু প্যারা মেডিকেলের দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।

শুকুর আলী অ্যাপসের মাধ্যমে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম সম্পর্কে প্রথম জানতে পারে ও দুই বছর আগে সংগঠনে যোগ দেয়। বিভিন্ন অ্যাপস যেমন ম্যাসেঞ্জার ও ইমাে এবং বিভিন্ন ছদ্ম নামে আইডি ব্যাবহার করে অনলাইনে বিভিন্ন রকম জঙ্গিবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। পরবর্তীতে সে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সাথে অনলাইন গ্রুপের মাধ্যমে পরিচিত হয় এবং নিয়মিত যােগাযােগ করাসহ সংগঠনের বিভিন্ন রকম কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।

আসাদুল্লাহ হিল গালিবের বাড়ি চাঁদপুরে। একই প্রক্রিয়ায় আনসারুল্লাহ বাংলা টিমে যোগ দেয় আলীম দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত গালিব। সে গত দুই বছর ধরে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ভিডিও, বইপত্র, অ্যাপসের মাধ্যমে সংগ্রহ ও প্রচার করতো।

গ্রেফতার নাজমুল হাসানের বাড়ি মাগুরায়। সে একটি ডেভলপার কোম্পানিতে চাকুরিরত। অনলাইনে সে ছদ্ম নাম ব্যবহার করে জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। অপর গ্রেফতার ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষস্থানীয় জঙ্গি মেহেদী হাসান শাকিলের দাওয়াতে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে। গত ৩ বছর তিনি জঙ্গিবাদে সক্রিয়। তার কাছ থেকে উগ্রবাদী ডিজিটাল কন্টেন্ট পাওয়া গেছে।

এক প্রশ্নের জবাবে র‍্যাব-৪ এর অধিনায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, কারাগারে বন্দি জঙ্গি সদস্যদের যে কেউ দেখা করার ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সদস্যদের রাখা উচিত। উচিত ডিরেডিকালাইজড কার্যক্রমকে জোরদার করা। তাহলে জঙ্গিবাদে ফের জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা কমবে বলে মনে করেন তিনি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে