রাজধানীতে পানির অভাবে তালাবদ্ধ গণশৌচাগার!

মত ও পথ প্রতিবেদক

পাবলিক টয়লেট
ফাইল ছবি

মানুষের ভোগান্তি কমিয়ে আনতে রাজধানীর দুটি ব্যস্ততম এলাকায় অত্যাধুনিক গণশৌচাগার অর্থাৎ পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এর একটি ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডের মূলসড়কের পাশে। নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে প্রায় আট মাস আগে। তবে ওয়াসা থেকে পানি না পাওয়ায় পাবলিক টয়লেটটির তালাও খুলছে না।

আর পুরান ঢাকার ব্যস্ততম বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকায় পাবলিক টয়লেটটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে তিন মাস আগে। একই কারণে এই গণশৌচাগারটিও তালাবদ্ধ পড়ে আছে।

এই দুই এলাকাতেই প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের পদচারণা। তবে চলতি পথে শৌচকর্ম সারতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। এজন্য নগর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দুষছেন তারা।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যবহারের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত হলেও ওয়াসা থেকে পানি না মেলায় পাবলিক টয়লেট দুটি খোলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ডিএসসিসির কাছে বকেয়া বিল থাকায় পানি দিচ্ছে না বলে ভাষ্য ওয়াসা কর্মকর্তাদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, নির্মাণ শেষ হয়েছে রাজধানীর ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডের মূলসড়কের পাশের পাবলিক টয়লেটটি। তবে আধুনিক এই টয়লেটটির ফটক বন্ধ। বাইরের দেয়ালে লেপ্টে আছে অসংখ্য পোস্টার। আর ফ্লোর ও দেয়ালে জমে আছে ময়লার স্তুপ। জনবহুল স্থানে টয়লেটটি ব্যবহার করতে না পেরে ক্ষুব্ধ এখানকার ব্যবসায়ী ও এই পথে চলাচলকারী হাজার হাজার পথচারী।

তিনমাস আগে নির্মাণ শেষ হলেও তালাবদ্ধ হয়ে পড়ে আছে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কের পাশের সিটি করপোরেশন মার্কেটের পাবলিক টয়লেটটি। সরকারি কবি নজরুল কলেজের পাশের এই মার্কেটে নির্মিত অত্যাধুনিক টয়লেটটি ব্যবহার করতে না পেরে দুর্ভোগে আছেন এখানকার প্রায় ৪০টি দোকানের লোকজন এবং পথচারীরা।

টয়লেট দুটি খুলে না দেয়ার জন্য সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের দুষলেন এলাকাবাসী। তারা বলছেন, কর্তৃপক্ষ তৎপর হলে এতদিন এগুলো বন্ধ থাকত না।

সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ওয়াসার বিল বাকি থাকায় সংস্থাটি পানি সংযোগ দিচ্ছে না। তাই টয়লেটগুলো চালুও করা যাচ্ছে না। তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন বিষয়টির সুরাহা করতে।

অন্যদিকে কবি নজরুল কলেজের পাশে সিটি করপোরেশনের মার্কেটের পুরানো টয়লেটটি সংস্কার করে অত্যাধুনিকভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। অন্যান্যগুলোর মতো টয়লেটটিতে পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভেতরে টাইলস, বেসিন, লাইট-ফ্যান সবই লাগানো আছে। কিন্তু মূল ফটকে তালা দেয়া। ভেতরের ফ্লোরে জমে আছে কয়েকস্তরের ধুলো।

এখানকার ‘এম বি ব্যাটারি’র দোকানের খলিল মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে গণমাধ্যমকে বলেন, এই মার্কেটে প্রায় ৪০টা দোকান। কিন্তু টয়লেট নাই। আশপাশে মসজিদ, ন্যাশনাল মেডিকেলে গিয়ে পায়খানা-প্রস্রাব করতে হয়। কবে খুলবে টয়লেটটা তাও জানি না।

টয়লেটটি নির্মাণের সময় সিটি করপোরেশন থেকে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি তাই ক্ষোভ আছে ৪২ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার হাজী মোহাম্মদ সেলিমের।

তিনি বলেন, আমার এলাকায় পাবলিট টয়লেট হয়েছে অথচ আমি কিছু জানি না। কেন খুলে দিচ্ছে না তাও জানি না। মেয়র কখন কি করে আমাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনাও করেন না। কাজ শেষের পরও এটা বন্ধ থাকা দুঃখজনক। দ্রুত এটা খুলে দেয়ার দাবি করছি। কারণ এলাকার মানুষের দুর্ভোগ হচ্ছে।

ফুলবাড়িয়ায় মূল সড়কের পাশে নির্মাণ করা পাবলিক টয়লেটটিরও একই দশা। গতকাল সেখানকার বেশ কয়েকজন দোকানির সঙ্গে কথা হয়। তাদের কণ্ঠেও ক্ষোভের সূর। তারা জানেন না কবে খুলবে টয়লেটটি।

ওয়াটার এইডের সহযোগিতায় নির্মিত অন্যান্য টয়লেটগুলোর মতো দেখা গেছে, এখানেও নারী ও পুরুষের জন্য রয়েছে আলাদা চেম্বার, লকার, হ্যান্ড ওয়াশিং, শাওয়ার এবং বিশুদ্ধ খাবার পানির সুবিধা আছে। এছাড়া ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুতের ব্যবস্থাও আছে। দক্ষিণ সিটিতে উন্নতমানের এসব পাবলিক টয়লেট নির্মাণে ৫০ লাখ টাকা থেকে শুরু করে কোটি টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে ফুলবাড়িয়ার টয়লেটটি বন্ধ থাকার জন্য অঞ্চল-৪ এর কর্মকর্তা উদয়র দেওয়ান দুষলেন ঠিকাদারকে। তিনি বলেন, ঠিকাদার পুরো কাজ শেষ করে এটি বুঝিয়ে দেয়নি তাই খোলা যাচ্ছে না।

তবে তার অঞ্চলের প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ওয়াসা বিল বাকি থাকায় পানি সংযোগ দেয়নি তাই এটা চালু করা সম্ভব হয়নি। গত ১৫ দিন আগে বৈঠক হয়েছে ওয়াসার সঙ্গে। তারা বলছে শিগগিরই পানির ব্যবস্থা করবে। তখন খুলে দেয়া হবে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে