পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আজ (শুক্রবার) শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দুই দিনব্যাপী ২১তম জাতীয় সম্মেলন। বিকাল ৩টায় ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের অনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণে গড়তে সোনার দেশ/এগিয়ে চলেছি দুর্বার, আমরাই তো বাংলাদেশ’ স্লোগান নিয়ে শনিবার সকাল ১০টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে কাউন্সিল অধিবেশন। এবার আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক বাঁকবদলে বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব আসছে বলে নির্ভরযোগ্য দলীয় একাধিক সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে।
সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে এবারও শেখ হাসিনাই থাকছেন। আগামী তিন বছরের জন্য দ্বিতীয় শীর্ষপদ সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দেখা যেতে পারে নতুন মুখ। এক্ষেত্রে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বা সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে অথবা আলোচনার বাইরে থেকে কেউ দায়িত্ব পেতে পারেন।
এছাড়া বর্তমান সভাপতিমণ্ডলী, যুগ্ম ও সাংগঠনিকসহ সম্পাদকমণ্ডলী এবং কার্যনির্বাহী কমিটিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। এর মধ্যে সভাপতিমণ্ডলীর চারটি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকে দুটি, সাংগঠনিকে তিনটি, সম্পাদকমণ্ডলীতে একডজন এবং নির্বাহী কমিটিতে বেশ কিছু পরিবর্তন ও রদবদল হতে পারে। এক্ষেত্রে বর্তমান কমিটির বেশ কিছু পরিচিত ও বিতর্কিত মুখের বদলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্য থেকে পরীক্ষিত নেতাদের দেখা যেতে পারে। তাই কার কার কপাল পুড়ছে আর কার কার ভাগ্য খুলছে, তা দেখতে আগামীকাল (শনিবার) পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
- খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করলে গণতন্ত্র মুক্ত হবে না : ফখরুল
- চলতি অর্থবছরেই শিশুশ্রম মুক্ত হবে ২২ ঝুঁকিপূর্ণ খাত
- আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণের রাজনীতি করে : প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী নেতারা জানান, এবারের সম্মেলন এমন একসময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সেটিকে দলের রাজনৈতিক বাঁকবদলের ঐতিহাসিক কাল হিসেবে দেখা হচ্ছে। নতুন কমিটির ওপর নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের আগামী দিনের রাজনীতি। তাই নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার নেতৃত্ব আসবে আওয়ামী লীগে। চলমান শুদ্ধি অভিযান এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে সেই বার্তাই দিয়েছেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।
এরই মধ্যে বুধবার রাতে গণভবনে দলটির কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে বিভিন্ন উপকমিটির সহ-সম্পাদক পদ বিলুপ্ত এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের সংখ্যা সংখ্যা ৪১ থেকে বাড়িয়ে ৫১ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এদিকে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধনের পর ২৫ মিনিটের একটি উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করা হবে। সেখানে তুলে ধরা হবে আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সরকারের উন্নয়ন ও সাফল্য। সম্মেলন ঘিরে সারাদেশেই দলটির মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার।
মহানগর, জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায় থেকে ঢাকায় আসতে শুরু করেছেন কাউন্সিলর ও ডেলিগেটরা। সাত হাজার ৩৩৭ জন কাউন্সিলর ও সমসংখ্যক ডেলিগেটসহ এবারের সম্মেলনে প্রায় ৫০ হাজার অতিথি উপস্থিত থাকবেন। তবে এবার থাকছেন না বিদেশি কোনো অতিথি। সম্মেলনে ৫০ হাজার মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হবে। আমন্ত্রিত অতিথিদের কাছে দাওয়াতপত্র পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে সম্মেলন নির্বিঘ্নে করতে ঢেলে সাজানো হয়েছে পুরো নিরাপত্তাব্যবস্থা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্বেচ্ছাসেবকরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে সম্মেলনস্থল, প্রবেশপথসহ চারপাশে দলীয় স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন সম্মেলনের শৃঙ্খলা ও স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য সচিব আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং এর আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিশাল এলাকাজুড়ে চলছে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের গেট দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ে ছয়টি নৌকা। উদ্যানের গাছে গাছে লাগানো হয়েছে মরিচবাতি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের এলাকায় ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে। মৎস্যভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে শোভা পাচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। পাশাপাশি লাগানো হচ্ছে আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্রসম্বলিত ফেস্টুন।
মঞ্চ ও সম্মেলনস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সাজানো হয়েছে অপরূপ সাজে। সভামঞ্চ বহমান পদ্মার বুকে ৪০টি থামের ওপর দাঁড়িয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতুর নিচে বিশাল জলরাশিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট নৌকা। একটি ছোট জাহাজও ভাসছে। একপাশে চরে কাশবন দেখা যাচ্ছে। বিশালাকার এক পালতোলা নৌকাও ভাসছে নিজের গতিতে। পদ্মা সেতুর ওপর বিশালাকৃতির দলীয় প্রতীক নৌকা। জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতি ধারণ করেছে নৌকাটি। নৌকাটির মাঝে বড় করে লেখা- ২১তম জাতীয় সম্মেলন-২০১৯। স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতির পেছনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার বিশাল ছবি। সবার ওপরে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ তার অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। ছবিটির ডানে জাতীয় চার নেতা ও বাম পাশে বাংলাদেশের ইতিহাসের অবিস্মরণীয় চার নেতার ছবি রয়েছে।
২০২১ সালের ১৭ মার্চ থেকে পালিত হবে মুজিববর্ষ। এর আগে ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে মুজিববর্ষের কাউন্টডাউন। আর মুজিববর্ষকে সামনে রেখে নজরকাড়া ২১তম সম্মেলন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
নির্বাচন কমিশন গঠন
আওয়ামী লীগ ২১তম জাতীয় সম্মেলন পরিচালনার জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। দলটির উপদেষ্টামণ্ডলীর তিন সদস্য এই দায়িত্বে রয়েছেন। কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে, কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন ড. মশিউর রহমান এবং প্রফেসর ড. সাইদুর রহমান খান।
অতিথিদের জন্য রয়েছে যে উপহার
বরাবরের মতো এবারও সম্মেলনে অতিথিদের জন্য কিছু উপহার বরাদ্দ রেখেছে আওয়ামী লীগ। সম্মেলনে আগত অতিথিদের পাটের ব্যাগ উপহার দেয়া হবে। প্রায় ২৫ হাজার অতিথিকে এ উপহার দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। পাটের ব্যাগে থাকছে আওয়ামী লীগের ইতিহাসসম্বলিত একটি স্মারক ও শোক প্রস্তাব। নেত্রীর ভাষণ ও সাধারণ সম্পাদকের ভাষণ ও সাংগঠনিক রিপোর্ট। এছাড়াও থাকবে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন অর্জন এবং বিএনপির সন্ত্রাস জ্বালাও-পোড়াও সম্বলিত ডিভিডি।
জানা গেছে, এবারই প্রথম ছবির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইতিহাস জানার জন্য ফটো অ্যালবাম তৈরি করা হয়েছে। হাজার হাজার ছবির মধ্য থেকে বাছাই করে দেড়শ ছবির এক-একটা অ্যালবাম করা হয়েছে। এটা বই আকারে থাকবে না প্রত্যেকটি পাতা আলাদা আলাদা বক্সে থাকবে।
দাওয়াত পেলেন বিএনপির চার নেতা
আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বিএনপির চার নেতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় তাদের আমন্ত্রণপত্র দলটির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে পৌঁছে দেয়া হয়। আমন্ত্রণ পাওয়া নেতারা হলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও মির্জা আব্বাস। তবে তারা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যাবেন কিনা, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির চলতি মেয়াদে এ পর্যন্ত আট বিভাগের ৭৮ জেলা ও মহানগর কমিটির মধ্যে ৩৭টির সম্মেলন হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা বিভাগের ১১টি জেলা ও মহানগর কমিটির সাতটি জেলা ও এক মহানগর কমিটির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রংপুর বিভাগে ৯টি জেলা ও মহানগর কমিটির মধ্যে ছয়টির সম্মেলন হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে ১৫ জেলা ও মহানগর কমিটির ছয় জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
বরিশাল বিভাগে সাত জেলা ও মহানগরের মধ্যে তিনটির সম্মেলন হয়েছে। রাজশাহী বিভাগে ৯ জেলা ও মহানগর কমিটির মধ্যে দুটির সম্মেলন হয়েছে। সিলেট বিভাগের পাঁচ জেলা ও মহানগর কমিটির মধ্যে তিনটির সম্মেলন হয়েছে। ঢাকা বিভাগে ১৭ জেলা ও মহানগরের মধ্যে দুটির সম্মেলন হয়েছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগে পাঁচটি জেলা ও মহানগর কমিটির একটিরও সম্মেলন হয়নি।
১৯৪৯ সালের ২৩ জুন রোজ গার্ডেনে জন্ম আওয়ামী লীগের। এখন ঐতিহ্যবাহী এই দলটির বয়স ৬৭ বছর। এ পর্যন্ত দলটির ২০টি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।