ভারতের বর্ণবাদী ও ইসলামবিদ্বেষী নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে বিভিন্ন রাজ্যে পুলিশের গুলি ও সংঘর্ষে এ পর্যন্ত অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন।
আটটি রাজ্যে সপ্তাহব্যাপী চলমান বিক্ষোভ সহিংসতার প্রেক্ষিতে শনিবার মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। খবর আল জাজিরার।
২০১৫ সালের আগে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে যেসব অমুসলিম ‘ধর্মীয় নিপীড়নের’ শিকার হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের নাগরিকত্ব দিতেই এই আইন আনা হয়েছে। এ আইনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন বলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
রয়টার্সকে এক সরকারি কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে, জরুরি বৈঠকের জন্য সব মন্ত্রীকে তলব করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। নাগরিক সংশোধনী আইনের বিরোধিতা করে দেশজুড়ে চলমান বিক্ষোভ ও সহিংসতার বিষয়ে আলোচনা করতেই এ বৈঠক ডেকেছেন তিনি।
দেশটির সবচেয়ে জনবহুল শহর উত্তর প্রদেশে শুক্রবার বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিলে হাতহতের সংখ্যা হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। রাজ্যটিতে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে পদপিষ্ট হয়ে আট বছর বয়সী একটি শিশুও মারা গেছে।
উত্তরপ্রদেশের অনেক মানবাধিকার কর্মী জানিয়েছেন যে, পুলিশ তাদের বাড়ি এবং কার্যালয়ে অভিযান চালাচ্ছে। নতুন করে সমাবেশ বা বিক্ষোভে যেন তারা অংশ না নেন সেজন্য তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।
উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন স্পর্শকাতর এলাকায় সহিংসতার ঘটনায় কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছে। প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর প্রদেশে গত দুদিনে ১৩ জেলায় সহিংসতার ঘটনায় ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আজ শনিবার তামিলনাড়ুর রাজধানী চেন্নাই ও বিহারের উত্তরাঞ্চলীয় শহর পাটনাসহ বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার লোক নতুন করে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন।
রাজধানী নয়াদিল্লিতেও সড়কে ব্যাপক জমায়েত দেখা গেছে। ধর্মভিত্তিক এই আইনটি নিয়ে মানুষের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। গত ১১ ডিসেম্বর পার্লামেন্টে আইনটি পাশ করে হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার।
সমালোচকরা বলছেন, আইনটি মুসলমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্যেপূর্ণ ও নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডার অংশ। যদিও ক্ষমতাসীন দল বিজেপি তা অস্বীকার করে আসছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে ২০ কোটি মুসলমানের মধ্যে ২০ শতাংশের বসবাস উত্তর প্রদেশে। রাজ্য পুলিশের মুখপাত্র শিরীষ চন্দ্র বলেন, গুলিবিদ্ধ হয়ে ১০ জন নিহত হন। অন্যান্য ঘটনাবলীও আমরা তদন্ত করে দেখছি।
বারাণসী জেলা পুলিশ প্রধান প্রভাকর চৌধুরী বলেন, পবিত্র শহরটিতে শিশুসহ আড়াই হাজার লোক বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। এ সময় ওই বালকটি নিহত হয়েছে।
তিনি বলেন, পুলিশ যখন বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করেন, লোকজন পালানোর জন্য দৌড়াচ্ছিলেন। এতে পদদলিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ওই সময় বালকটি নিহত হয়েছেন।