ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুরসহ অন্যান্য ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনাকে ‘অগ্রণযোগ্য’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। একইসঙ্গে বহিরাগতদের নিয়ে নুর কেন ডাকসু ভবনে গিয়েছিলেন- সেই প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
আজ সোমবার সচিবালয়ে নিজ দফতরে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ের সময় এ কথা বলেন মন্ত্রী।
নুরের ওপর হামলার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘প্রথমত যে ঘটনা গতকাল ঘটেছে এটি অত্যন্ত দুঃখজনক, অনভিপ্রেত ও অগ্রহণযোগ্য। আমরা কখনোই এই ধরনের হামলাকে সমর্থন করি না। হামলার পরপরই আমাদের দলের দুজন নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ সেখানে গিয়েছিলেন সমবেদনা জানাতে। তারা দলের অবস্থানের কথা পরিষ্কার করেছেন। দলের সাধারণ সম্পাদকও আজ এ বিষয়ে বলেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের বক্তব্য একই, আমরা এই ধরনের ঘটনাকে কখনও সমর্থন করি না। যারা এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা নিন্দনীয়।’
হাসান মাহমুদ বলেন, ‘কিন্তু এখানে আরও কয়েকটি প্রশ্ন থেকে যায়। সেটি হচ্ছে ডাকসুর ভিপি নুর কেন বহিরাগতদের নিয়ে ডাকসু ভবনে গেলেন? এতগুলো বহিরাগতকে নিয়ে সেখানে যাওয়ার কী প্রয়োজনীয়তা ছিল? দ্বিতীয় হচ্ছে, আপনারা দেখেছেন সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য দেশে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র আছে। রাজনৈতিকভাবে সরকারকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে আমাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও যারা দেশের পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে চায়, সেই পক্ষ যৌথভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য, সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করছে।’
তিনি বলেন, ‘সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে এই ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে কি না, এই ধরনের ঘটনা ঘটানোর ক্ষেত্রে কোন উসকানি ছিল কি না…আমরা অতীতে দেখেছি ডাকসুর ভিপি নূর এই ধরনের ঘটনার মাধ্যমে আলোচনায় থাকতে চান। ছাত্র সংশ্লিষ্ট বিষয় বাদ দিয়ে ভারতের প্রবাহ নিয়ে সেখানে আন্দোলন করার চেষ্টা…এগুলো তো ডাকসুর কাজ নয়। ডাকসুর কাজ হচ্ছে ছাত্রদের বিষয় নিয়ে কথা বলা।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বহিরাগতদের উপস্থিতি নিয়ে বাক-বিতণ্ডার এক পর্যায়ে এই ঘটনা ঘটেছে’।
তিনি বলেন, ‘সেখানে ভারতের বিষয় নিয়ে আন্দোলনের চেষ্টা এবং বহিরাগতদের নিয়ে সেখানে উপস্থিত হওয়া, এগুলো ঘটানোর জন্য ইন্ধন কি না এগুলো খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।’
এই ঘটনার সাথে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামের একটি সংগঠন জড়িত, এর সঙ্গে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট রয়েছেন- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের মধ্যে যেকোনো দলের মানুষ থাকতে পারে। ছাত্রলীগ থাকতে পারে, ছাত্র ফ্রন্ট থাকতে পারে, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ছাত্র সংগঠনের যেকোনো নেতা থাকতে পারে।’
এই হামলার বিষয়ে তদন্ত হবে কি না জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘অবশ্যই, এটার তদন্ত হবে।’
সদ্য শেষ হওয়া আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘পরপর তিনবার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে। সেই কারণে আমাদের দলের মধ্যে অনেক সুযোগসন্ধানীর অনুপ্রবেশ ঘটেছে। অনেক স্বার্থান্বেষী মহলের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এবার জাতীয় কাউন্সিল ঘিরে সারাদেশে জেলা ও উপজেলায় যে কাউন্সিল হয়েছিল, সেখানে এই বার্তাই দেয়া হয়েছিল- দলের মধ্যে যারা সুযোগসন্ধানী, যারা একসময় দলের বিরুদ্ধে কাজ করেছে, যারা অনুপ্রবেশকারী, তাদের অবশ্যই নেতৃত্বে আনা যাবে না। সেই মোতাবেক জেলা-উপজেলায় কমিটি গঠন করা হয়েছে।
- নুরের ওপর হামলা : মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের মামুন-তূর্য গ্রেফতার
- ভিপি নুরের ওপর হামলার ঘটনা নিন্দনীয় : কাদের
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে জাতির জন্য দিক-নির্দেশনা থাকে। আওয়ামী লীগের সম্মেলন থেকে যারা রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন ঘটিয়েছেন, তাদের অনেক কিছু শেখার আছে। যারা রাজনীতিতে কেনাবেচার হাট বসিয়েছিলেন তাদেরও অনেক কিছু শেখার আছে। অনেক দলেরও অনেক কিছু শেখার আছে।’
‘আওয়ামী লীগের সভাপতি আমাকে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দিয়েছেন। এজন্য তার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনি আমাকে পরিবেশ সম্পাদকদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন, সেটি আমি নিষ্ঠার সঙ্গে ১০ বছর পালন করেছি। তিনি আমাকে প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বে রেখেছিলেন দীর্ঘ ৭ বছর, আমি নিষ্ঠার সাথে পালন করার চেষ্টা করেছি।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘শেখ হাসিনা আমার ওপর যে আস্থা, বিশ্বাস স্থাপন করেছেন আমার জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে যেন সেই আস্থা ও বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা করতে পারি সেটিই হচ্ছে আমার প্রতিজ্ঞা।’