মাইগ্রেনের যন্ত্রণা খুবই কষ্টদায়ক এবং দীর্ঘস্থায়ী। মাইগ্রেন মাথার যেকোন এক পাশ থেকে শুরু হয়ে তা ক্রমশ বাড়তে থাকে। প্রচণ্ড মাথা ব্যথার পাশাপাশি বমি বমি ভাবও দেখা দেয়। যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে, তাদের এই ব্যথার জন্য দায়ী কয়েকটি কাজ বা অভ্যাস এড়িয়ে চলাই ভাল।
পেট খালি রাখা: দীর্ঘক্ষণ পেট খালি থাকলে মাইগ্রেনের ব্যথা বা সমস্যা শুরু হতে পারে। এর কারণ হল, খালি পেটে থাকলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা মাথা চাড়া দেয় যা মাইগ্রেনের ব্যথাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
আবহাওয়া: অতিরিক্ত রোদে ঘোরাঘুরির কারণে মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হতে পারে। এছাড়াও অতিরিক্ত গরম, অতিরিক্ত আর্দ্রতার তারতম্যে মাইগ্রেনের ব্যথা বাড়তে পারে।
মানসিক চাপ: যারা অনেক বেশি চাপ নিয়ে একটানা কাজ করে চলেন এবং নিজের ঘুম ও খাওয়া-দাওয়ার কোনো নির্দিষ্ট সময় মেনে চলতে পারেন না, তাদের বেশি মাইগ্রেনে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। তাই মানসিক চাপ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। খুব মানসিক চাপে থাকলে এক কাপ লেবু চা খেয়ে নিন। এতে মস্তিষ্ক কিছুটা রিলাক্স হবে।
অতিরিক্ত আওয়াজ: অতিরিক্ত আওয়াজ, খুব জোরে গান শোনা ইত্যাদির কারণেও মাইগ্রেনের সমস্যা শুরু হয়ে যেতে পারে। প্রচণ্ড জোরে আওয়াজের কারণে প্রায় দু’দিন টানা মাইগ্রেনের ব্যথা হওয়ার আশংকা থাকে।
চিনি জাতীয় খাবার খাওয়া বেশি খাওয়া: আমরা যখন অনেক বেশি মিষ্টি খাবার খেয়ে ফেলি তখন আমাদের রক্তের সুগারের মাত্রা বেড়ে যায় যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত ইনসুলিনের উৎপাদন হতে থাকে। যার ফলে রক্তের সুগারের মাত্রা নেমে যায়। এভাবে হঠাৎ হঠাৎ রক্তে সুগারের মাত্রার তারতম্যের কারণে মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হতে পারে।
হঠাৎ কফি খাওয়া বন্ধ করে দেওয়া: সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যারা নিয়মিত ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় খেতে অভ্যস্ত, তারা হঠাৎ করে সেই অভ্যাস ত্যাগ করলে বা বন্ধ করে দিলে মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হতে পারে।
অতিরিক্ত ঘুম: মাত্র এক দিনের ঘুমের অনিয়মের কারণে শরীরের উপরে খারাপ প্রভাব পড়তে পাড়ে। যেমন, যারা নিয়মিত মোটামুটি ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা করে ঘুমান, তারা যদি হুট করে একদিন একটু বেশি ঘুমিয়ে ফেলেন, সেক্ষেত্রে মাইগ্রেনের ব্যথা শুরু হয়ে যায়।
মাইগ্রেনের সমস্যা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে যেসব খাবার
*ম্যাগনেশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার। যেমন ঢেঁকি ছাঁটা চালের ভাত, আলু ও বার্লি মাইগ্রেন প্রতিরোধক।
*বিভিন্ন ফল, বিশেষ করে খেজুর ও ডুমুর ব্যথা উপশম করে।
*সবুজ, হলুদ ও কমলা রঙের শাকসবজি নিয়মিত খেলে উপকার হয়।
*ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি মাইগ্রেন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তিল, আটা ও বিট ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে।
*আদার টুকরো বা রস দিনে দুবার জিঞ্চার পাউডার পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন।
যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন
*চা, কফি ও কোমলপানীয়, চকলেট, আইসক্রিম, দই, দুধ, মাখন, টমেটো ও টক জাতীয় ফল খাবেন না
*গম জাতীয় খাবার, যেমন রুটি, পাস্তা, ব্রেড ইত্যাদি
*আপেল, কলা ও চিনাবাদাম
*পেঁয়াজ
তবে ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ভিন্ন খাবারে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই সবচেয়ে ভালো হয় একটা ডায়েরি রাখা। যাতে আপনি নোট করে রাখতে পারেন কোন কোন খাবার ও কোন কোন পারিপার্শ্বিক ঘটনায় ব্যথা বাড়ছে বা কমছে। এ রকম এক সপ্তাহ নোট করলে আপনি নিজেই নিজের সমাধান পেয়ে যাবেন। তবে ব্যথা বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।