ঢাকা সিটিতে বিএনপি মেয়র প্রার্থী নিয়ে নির্ভার, দুশ্চিন্তা কাউন্সিলর বাছাইয়ে

মত ও পথ প্রতিবেদক

তাবিথ আউয়াল-ইশরাক হোসেন
তাবিথ আউয়াল-ইশরাক হোসেন। ফাইল ছবি

বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে তাদের সংশয় ও অভিযোগ থাকলেও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

জানা যায়, দলের প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে মেয়ের পদে লড়তে তাদের প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত। তবে মেয়র প্রার্থীর বিষয়ে অনেকটা চিন্তামুক্ত বিএনপির দুশ্চিন্তা ওয়ার্ডগুলোতে কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে।

universel cardiac hospital

প্রথমবারের মতো এবার দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে নির্বাচন হবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে। তবে কাউন্সিলরর পদে নির্দলীয় প্রতীকে ভোট হবে। আগামী ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ৩১ ডিসেম্বর।

বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও দুই সিটিতেই তরুণ দুই নেতাকে বেছে নেয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। তাদের বিষয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও স্থায়ী কমিটির প্রাথমিক সম্মতি রয়েছে।

ঢাকা উত্তরে ২০১৫ সালের নির্বাচনের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল এবং দক্ষিণে প্রয়াত মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেবে সরকাররিরোধী দলটি। এ বিষয়ে দলীয় আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।

ইতিমধ্যে দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে ওই দুই প্রার্থী মাঠে নামার সবুজ সংকেত পেয়ে কাজ শুরু করেছেন। প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন ২৭ ডিসেম্বরের মধ্যে দলের মনোনয়নপত্র জমার প্রক্রিয়া শেষ করবেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

বর্তমানে বিদেশে অবস্থানরত তাবিথ আউয়ালের আজ দেশে ফিরে আসার কথা রয়েছে। দেশে ফিরে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহের আনুষ্ঠানিকতা শেষে নির্বাচনের মাঠে নামবেন বলে জানা গেছে।

ইশরাক হোসেন কাল বৃহস্পতিবার দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করবেন জানিয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কয়েক মাস আগে আমাকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছিল। সেই আলোকে কাজ করে গেছি। এখনো কাজ করছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। তাদের নির্দেশনামতো কাজ করছি।

গত রোববার ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। দলীয় প্রতীকে এবারের নির্বাচনে সব কেন্দ্রে ভোট হবে ইভিএমে। তবে বিএনপির আপত্তি আছে  ইভিএমে ভোটে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার দিনই তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসনকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দেন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এরপর সোমবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও তাদের বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়।  আগামী শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে দুই প্রার্থীর নাম।

দুই প্রার্থী অনেকটা চূড়ান্ত হলেও দলে একাধিক মনোনয়নপ্রতাশী রয়েছেন। তাদের মধ্যে উত্তর সিটিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শাকিল ওয়াহেদ, ঢাকা উত্তর বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাউয়ুমের স্ত্রী শামীম আরা বেগম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম কফিল উদ্দিন আহমেদ রয়েছেন।

আর দক্ষিণে ইশরাক ছাড়াও মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাসের কথা শোনা যাচ্ছে। যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলও মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে জানা গেছে।

২০১৫ সালের নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটিতে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন তাবিথ আউয়াল। ওই নির্বাচন বিএনপি শেষ মুহূর্তে বর্জন করার পরও তিনি তিন লাখের বেশি ভোট পেয়েছিলেন। এ ছাড়া তাবিথকে তার শিক্ষা, নির্বাচনের অভিজ্ঞতা, তারুণ্য- এসব বিষয় বিবেচনা করে চূড়ান্ত করা হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

অন্যদিকে ইশরাকের বাবা প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকা অবিভক্ত ঢাকার মেয়র ছিলেন। একাধিকবার সাংসদ নির্বাচিত হন পুরান ঢাকার এই জনপ্রিয় নেতা। খোকার উচ্চশিক্ষিত ছেলে ইশরাক বিদেশে পড়াশোনা করলেও রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে বেড়ে ওঠায় একটা পরিচিতি ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে তার। গত সিটি নির্বাচন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল। শেষ পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে সরে যান তিনি। এসব কারণে এবার তার মনোনয়ন পাওয়ার পথ অনেকটা নির্বিঘ্ন।

কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী বের করা চ্যালেঞ্জ

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মেয়র প্রাথী নিয়ে অতটা চাপ না থাকলেও কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে ভোগান্তির আশঙ্কা করছেন নেতারা। ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ঠিক করার জন্য একটি কমিটি গঠনের কথা ভাবছে দল। আর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে সমন্বয় করার জন্য আলাদা দুটি কমিটি গঠন করা হবে। এসব কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।

নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করা বিএনপির প্রধান চ্যালেঞ্জ মনে করে সাধারণত এর তালিকা তৈরির কাজ করেন মহানগর নেতারা। এবারও কয়েকজন এই কাজ করছেন। এ ক্ষেত্রে মহানগরের দুই অংশের শীর্ষ নেতারা তাদের পছন্দের লোকদের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে।

বিএনপির শীর্ষ নেতারা অবশ্য বলছেন, এ নিয়ে তেমন সমস্যা হবে না তাদের। যোগ্য ও জনসমর্থন আছে এমন প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, যারা ভালো করতে পারবেন, যারা যোগ্য এবং ত্যাগী, তাদেরই বেছে নেয়া হবে। লবিং গুরুত্বপূর্ণ নয়।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার বলেন, কাউন্সিলরদের সম্ভাব্য তালিকা তৈরি করতে শিগগিরই বৈঠকে বসব। মহানগর নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে আমরা একটি তালিকা করে কেন্দ্রে পাঠাব। তবে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করার কাজটা অত সহজ হবে না।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে