নানা আয়োজনে পালিত হচ্ছে বড়দিন

মত ও পথ প্রতিবেদক

বড়দিন
ছবি : সংগৃহিত

আজ শুভ বড়দিন। খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের দিন। এই দিনে খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট বর্তমান ফিলিস্তিনের বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, সৃষ্টি-কর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে প্রভু যিশুর এ ধরায় আগমন ঘটেছিল।

universel cardiac hospital

অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিষ্টধর্মানুসারীরা আজ যথাযথ ধর্মীয় আচার, আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্যদিয়ে দিনটি উদযাপন করছেন।

গত কয়েক দিন নগরের খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী-অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে তরুণ-তরুণীদের কীর্তনের দল ঘরে ঘরে ঘুরে বেড়িয়েছে।

বড়দিন উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এখানে সব ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম, আচার ও অনুষ্ঠানাদি স্বাধীনভাবে পালন করে আসছে। বিদ্যমান সম্প্রীতির এই সুমহান ঐতিহ্য আরও সুদৃঢ় করতে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, আমাদের সংবিধানে সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমান অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। সবাই মিলে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। তাই এই দেশ আমাদের সবার। বাংলাদেশ ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সব মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার-এ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে আমরা সবাই একসঙ্গে উৎসব পালন করব।

দুই সহস্রাধিক বছর আগে এই শুভদিনে পৃথিবীকে আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিষ্ট। বেথেলহেমের এক গোয়ালঘরে কুমারী মাতা মেরির কোলে জন্ম হয়েছিল যিশুর।

খ্রিষ্ট ধর্মানুসারীরা বিশ্বাস করেন- কোনো পুরুষের স্পর্শ ছাড়াই যিশুখ্রিষ্টের জন্ম হয়। সেই অর্থে তিনি ঈশ্বরের পুত্র। সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় সেখান থেকেই বিকশিত হয় মুক্তির এই আলোর দিশারী। যার আগমন পাপের আবর্তে নিমজ্জিত মানুষের অন্তরে এনে দেয় শান্তির পরশ।

উৎসবমুখর পরিবেশে দিনটি উদযাপন করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশের খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা। বড়দিন উপলক্ষে দেশের সব চার্চ ও তারকা হোটেলগুলোকে ক্রিসমাস ট্রি, রঙিন বাতি, বেলুন আর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। সেইসাথে খ্রিষ্টান পরিবারের বাসাবাড়ি একইভাবে সাজানো হয়েছে। এসব পরিবারগুলোতে নানা ধরনের পিঠা ও বিশেষ খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। খ্রিষ্টান ধর্মে বিশ্বাসীদের অনেকের ঘরেই বসানো হয়েছে প্রতীকী গোশালা। বেথেলহেমের গরিব কাঠুরের গোয়াল ঘরেই যিশুখ্রিষ্টের জন্ম। সেই ঘটনা স্মরণ করে বাড়িতে ধর্মীয় আবহ সৃষ্টি করতেই এটি করেন যিশুর অনুসারীরা।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর তেজগাঁও ক্যাথলিক গির্জায় বড়দিনের বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। প্রচুর জরি লাগিয়ে গির্জার ভেতরে রঙিন করা হয়েছে। ভেতরে সাজানো হয়েছে ক্রিসমাস ট্রি। গির্জার মূল ফটকের বাইরে ছোটোখাটো একটি মেলা বসেছে।

মেলার দোকানগুলোতে বড়দিন ও ইংরেজি নতুন বছরের কার্ড, নানা রঙের মোমবাতি, সান্তা ক্লজের টুপি, জপমালা, ক্রিসমাস ট্রি, যিশু-মরিয়ম-যোসেফের মূর্তিসহ নানা জিনিস বিক্রি হচ্ছে।

রাজধানী ঢাকার বড়ো বড়ো হোটেল—হোটেল সোনারগাঁও, র‌্যাডিসন, অস্টিনসহ অভিজাত হোটেল আলোকসজ্জায় সজ্জিত করেছে। বড়দিনে এসব হোটেলে শিশুদের জন্য রয়েছে ক্রিসমাস কিডস পার্টিসহ নানা ধরনের খেলার আয়োজন। প্রধান আকর্ষণ হিসেবে সান্তা ক্লজ আসছেন নানা উপহার ও চমক নিয়ে।

প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল সাজানো হয়েছে ক্রিসমাস গাছ ও রঙিন বাতি দিয়ে। সেখানে শিশুদের জন্য বিভিন্ন খেলার প্রতিযোগিতা, ফ্যাশন শো, জাদু প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

দিনটি উপলক্ষে অনেক খ্রিষ্টান পরিবারে কেক তৈরি করা হয়েছে, ছিল বিশেষ খাবারের আয়োজন। দেশের অনেক অঞ্চলে কীর্তনের পাশাপাশি ধর্মীয় গানের আসর বসেছে। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য অনেকে বড়দিনকে বেছে নেন। পরিবারের সদস্যদের সাথে আনন্দ ভাগ করে নিতে অনেককে গ্রামের বাড়ির দিকেও ছুটতে দেখা গেছে।

এদিকে শুভ বড়দিন নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে উদ্যাপনে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে উন্মুক্ত স্থান বা বাড়ির ছাদে গান-বাজনা, আতশবাজি ও ডিজে পার্টি। চার্চগুলোতে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে