ভারতীয়রা সিএএ-এনআরসি-এনপিআর নিয়ে বিভ্রান্তিতে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ভারতীয়রা সিএএ-এনআরসি-এনপিআর নিয়ে বিভ্রান্তিতে
ছবি : ইন্টারনেট

ভারতের পার্লামেন্টে পাস হওয়া সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) এবং জাতীয় জনসংখ্যা রেজিস্টার (এনপিআর) নিয়ে দেশটির জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

দেশটির পার্লামেন্টে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হওয়ার পরে দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। ইন্টারনেট বন্ধসহ, পুলিশের দমন-পীড়ন স্বত্ত্বেও বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ মোদী সরকার। সিএএ নিয়ে বেকায়দায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকার। বিরোধীদের অভিযোগ, সিএএ নিয়ে জনগণের মনোযোগ সরানোর উদ্দেশ্যেই কেন্দ্রীয় সরকার তিনটি বিষয় নিয়ে ধোঁয়াশা রেখেছেন।

universel cardiac hospital

কারণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, আধার, ভোটার, পাসপোর্ট—এসব কোনোটাই নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য যথেষ্ট নয়। আবার তিনিই বলছেন, রেশন কার্ড না থাকলেও সিএএ অনুযায়ী নাগরিকত্ব পেতে কোনো সমস্যা হবে না।

অন্যদিকে সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনেকবারই বলেছেন, সব রাজ্যে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) হবে।

আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক সমাবেশে বলেন, ২০১৪ সালে সরকার গঠনের পর কেন্দ্রীয়ভাবে কখনোই এনআরসি নিয়ে আলোচনাই হয়নি।

মোদীর এই বক্তব্যের পরে অমিত শাহও তার সুর পাল্টে ফেলেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদীর বক্তব্যই সঠিক।

অমিত শাহ সম্প্রতি বলেছেন, এনপিআর ও এনআরসির উভয়ের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই।

অথচ ২০১৫ সালের ২১ এপ্রিল তৎকালীন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হরিভাই পি চৌধুরী বলেছিলেন, এনপিআর-এর তথ্য এনআরসির ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হবে।

আবার ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ এর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বার্ষিক রিপোর্টের বক্তব্যেও ভিন্ন। ২০১৭-১৮ সালে এনপিআর নবায়ন করার কথা বলা হলেও এনআরসির কথা বলা হয়নি।

কিন্তু পরের বছরের রিপোর্টে বলা হয়, এনআরসি তৈরির প্রথম ধাপ হলো এনপিআর।

এছাড়া এনআরসির সঙ্গেই ডিটেনশন ক্যাম্পের সম্পর্ক রয়েছে। নাগরিকপঞ্জি থেকে বাদ পড়লে তাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয়। এ নিয়েও বিভ্রান্তির অন্ত নেই।

ইতিমধ্যে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে ডিটেনশন ক্যাম্পে কয়েকজনের মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়েছে।

এনআরসি থেকে বাদ পড়াদের জন্য ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি হলেও প্রধানমন্ত্রী মোদী গত ২২ ডিসেম্বর রামলীলা ময়দানে এক সভায় বলেন, দেশের কোথাও কোনো ডিটেনশন ক্যাম্প নেই।

তবে মোদীর এই বক্তব্যে বিস্মিত বিরোধীরা। কারণ ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে লোকসভা নির্বাচনে ভোটের প্রচারণাকালে আসামে মোদী বলেছিলেন, যদি তার দল ক্ষমতায় আসে, তাহলে রাজ্যের সব ডিটেনশন ক্যাম্প ভেঙে ফেলবেন।

বিরোধীদের অভিযোগ, যদি আসামে ডিটেনশনক্যাম্প নাই থাকে তাহলে মোদী কেন রাজ্যের সব ডিটেনশন ক্যাম্প গুঁড়িয়ে দেয়ার কথা বলেছেন!

২০১৯ সালের ৩১ জুলাই অমিত শাহ বলেছিলেন, ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কোনো বিদেশি নাগরিকের কাছে পর্যাপ্ত নথি না থাকলে তাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হবে। কারণ, তাদের জেলে রাখা যায় না।

এছাড়া কর্নাটক রাজ্যেও সম্প্রতি এই রকম ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরির খবর প্রকাশিত হয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ডিটেনশন ক্যাম্প নয়, বিদেশি নাগরিকরা অপরাধ করলে তাদের রাখার জন্য ওই ক্যাম্প তৈরি হয়েছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে