সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) শিক্ষক-কর্মচারীরাও স্বল্প সুদে গৃহ নির্মাণ ঋণ পাবেন। সরকারের ব্যবস্থাপনায় ব্যাংক থেকে এলাকা ও পদ অনুযায়ী সর্বনিম্ন পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সরল সুদে সর্বনিম্ন ২০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যাবে।
আজ বৃহস্পতিবার ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের শিক্ষক/কর্মচারীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ নীতিমালা-২০১৯’ জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে এই নীতিমালা কার্যকর হবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, জাতীয় বেতন স্কেলে প্রথম থেকে পঞ্চম গ্রেডভুক্ত শিক্ষক-কর্মাচারীরা যাদের মূল বেতন ৪৩ হাজার বা এর চেয়ে বেশি, তারা ঢাকাসহ সব সিটি কর্পোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৭৫ লাখ, জেলা সদরের জন্য ৬০ লাখ এবং অন্য এলাকার জন্য ৫০ লাখ টাকা ঋণ নিতে পারবেন।
৬ষ্ঠ থেকে ৯ম গ্রেডভুক্তরা ঢাকাসহ বিভাগীয় সদর এলাকার জন্য ৬৫ লাখ, জেলা সদরের জন্য ৫৫ লাখ এবং অন্য এলাকার জন্য ৪৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।
১০ম থেকে ১৩তম গ্রেডভুক্তরা ঢাকাসহ বিভাগীয় সদরের জন্য ৫৫ লাখ, জেলা সদরের জন্য ৪০ লাখ এবং অন্য এলাকার জন্য ৩০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।
১৪তম থেকে ১৭তম গ্রেডভুক্তরা ঢাকাসহ বিভাগীয় সদরের জন্য ৪০ লাখ, জেলা সদরের জন্য ৩০ লাখ এবং অন্য এলাকার জন্য ২৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন এবং ১৮তম থেকে ২০তম গ্রেডভুক্তরা ঢাকাসহ বিভাগীয় সদরের জন্য ৩০ লাখ, জেলা সদরের জন্য ২৫ লাখ এবং অন্য এলাকার জন্য ২০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।
এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই অর্থ বিভাগ থেকে ‘সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং-ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা-২০১৮ প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়। ওই প্রজ্ঞাপনে এসব ঋণের সুদহারের ক্ষেত্রে বলা হয়, এ ঋণের জন্য ব্যাংক ১০ শতাংশ হারে সরল সুদ নেবে। অর্থাৎ চক্রবৃদ্ধি সুদ (সুদের ওপর সুদ) নেয়া হবে না। তবে ঋণগ্রহীতাকে দিতে হবে ৫ শতাংশ। বাকিটা সরকারের পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হবে ভর্তুকি হিসেবে।
তবে নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য নতুন নীতিমালার আওতায় গৃহ নির্মাণ ঋণের সুদের হার হবে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সরল সুদ, অর্থাৎ সুদের ওপর কোনো সুদ আদায় করা যাবে না। ঋণগ্রহীতা ব্যাংক রেটের সমহারে (প্রায় ৫ শতাংশ) সুদ পরিশোধ করবে। সুদের অবশিষ্ট অর্থ সরকার ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করবে। সরকার সময়ে সময়ে সুদের এ হার পুনর্নির্ধারণ করতে পারবে। তবে পুনর্নির্ধারণ অনুরূপ সুদের হার কেবলমাত্র নতুন ঋণগ্রহীতার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।
ঋণগ্রহীতাকে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রাপ্তির জন্য প্রসেসিং ফি, অথবা আগাম ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার অতিরিক্ত ফি প্রদান করতে হবে না। তবে স্বত্ব রিপোর্টের জন্য সরকারি প্লট বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা এবং বেসরকারি প্লট বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকা সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে প্রদান করবে।
ঋণ প্রাপ্তির যোগ্যতা
নীতিমালা অনুসারে আবেদনকারীকে শিক্ষক বা কর্মচারী হতে হবে। গৃহ নির্মাণ ঋণের জন্য আবেদনের সর্বশেষ বয়সসীমা হবে অবসরোত্তর ছুটিতে গমনের ১ বছর আগ পর্যন্ত এবং সরকার প্রদত্ত সুদ ভর্তুকি অবসরোত্তর ছুটি ভোগের সর্বশেষ দিন পর্যন্ত প্রাপ্য হবে।
কোনো শিক্ষক-কর্মচারীর বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের অভিযোগ থাকলে এবং ওই অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কোনো আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করলে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এবং দুর্নীতির মামলার ক্ষেত্রে চার্জশিট দাখিল হলে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ নীতিমালার আওতায় কোনো শিক্ষক-কর্মচারী ঋণগ্রহণের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না।
চাকুরিতে চুক্তিভিত্তিক, খণ্ডকালীন ও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্ত কোনো শিক্ষক-কর্মচারী এই নীতিমালার আওতায় ঋণ পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না।
ঋণ প্রাপ্তির শর্ত
এ নীতিমালার আওতায় একজন আবেদনকারী দেশের যেকোনো এলাকায় গৃহ নির্মাণের জন্য ঋণ গ্রহণ করতে পারবে। গৃহ নির্মাণ ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে ভবনের নকশা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। ঋণ প্রাপ্তির উদ্দেশ্যে প্রস্তাবিত ভূমি ও বাড়ি বা ফ্ল্যাট সম্পূর্ণ দায়মুক্ত হতে হবে।
বাস্তবায়নকামী সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত ব্যাংক শাখায় আবেদনকারীর একটি হিসাব থাকতে হবে। ওই হিসাবের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতার বেতন/ভাতা/পেনশন এবং গৃহ নির্মাণ বা ফ্ল্যাট ক্রয়ের ঋণ বিতরণ ও কিস্তি আদায় সংক্রান্ত সমুদয় কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র সম্পূর্ণ তৈরি ফ্ল্যাটের জন্য ঋণ প্রদান করা হবে। তবে সরকারি সংস্থা কর্তৃক নির্মাণকৃত ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ তৈরি ফ্ল্যাটের শর্ত শিথিলযোগ্য।
বাস্তবায়নকারী সংস্থা
নীতিমালায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র মালিকানাধীন তফসিলি ব্যাংকসমূহ এবং বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স কর্পোরেশন বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে কার্যক্রমটি পরিচালনা করবে। সরকার অন্য যেকোনো বাণিজ্যিক ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বাস্তবায়নকারী সংস্থা হিসেবে নিয়োগ করতে পারবে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কেবলমাত্র একটি বাস্তবায়নকারী সংস্থা নির্ধারিত থাকবে যা সরকার, বাস্তবায়নকারী সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সম্মিনিতভাবে একমত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
তহবিলের উৎস
বাস্তবায়নকারী সংস্থাসমূহ তাদের নিজস্ব তহবিল হতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান কার্যক্রম পরিচালনা করবে। ঋণ গ্রহণে ইচ্ছুক শিক্ষক-কর্মচারীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বাস্তবায়নকারী সংস্থা এই নীতিমালা অনুযায়ী শর্তাবলী এবং ওই প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সরকার নির্ধারিত সিলিং অনুসরণে ঋণ অনুমোদন করবে এবং ঋণ পরিশোধের সিডিউল প্রস্তুত করবে।
ঋণ পরিশোধের মেয়াদকাল হবে সর্বোচ্চ ২০ বছর। গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রথম কিস্তির ঋণের অর্থ প্রাপ্তির সর্বোচ্চ এক বছর পর এবং ফ্ল্যাট ক্রয়ের ক্ষেত্রে ঋণের অর্থ প্রাপ্তির সর্বোচ্চ ছয় মাস পর ঋণগ্রহীতা কর্তৃক মাসিক ঋণ পরিশোধের কিস্তি শুরু হবে।
ঋণের মাসিক কিস্তি আদায় পদ্ধতির ক্ষেত্রে নীতিমালায় বলা হয়, সংশ্লিষ্ট বাস্তবায়নকারী সংস্থার সংশ্লিষ্ট শাখায় ঋণগ্রহীতাকে তার মাসিক বেতনের হিসাব খুলতে হবে। ঋণগ্রহীতার মাসিক বেতন-ভাতা ওই ব্যাংক হিসাবে জমা হবে এবং সরকার প্রদত্ত ভর্তুকি সংশ্লিষ্ট বাস্তবায়নকারী সংস্থার চাহিদার প্রেক্ষিতে উক্ত হিসাবে জমা হবে।
ঋণের কিস্তি ঋণগ্রহীতার বেতন হিসাব হতে ঋণের মেয়াদকাল পর্যন্ত মাসিক ভিত্তিতে কর্তন করা হবে। ঋণগ্রহীতার ব্যাংক হিসাব হতে প্রতি মাসে বেতন-ভাতা জমা হওয়ার পর ঋণের কিস্তির টাকা প্রথমেই বাস্তবায়নকারী সংস্থা কর্তন করবে এবং অবশিষ্ট অর্থ ঋণগ্রহীতা কর্তৃক উত্তোলনযোগ্য হবে।
কোনো শিক্ষক-কর্মচারী প্রেষণে থাকলে তার কিস্তির অংশ নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে জমা হওয়া সাপেক্ষে সরকার প্রদত্ত সুদ ভর্তুকির অংশ বাস্তবায়নকারী সংস্থার চাহিদার প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক শাখায় জমা হবে। ঋণগ্রহীতার অবসর গ্রহণের ক্ষেত্রে তার অবসরোত্তর ছুটি সময় পর্যন্ত সরকার প্রদত্ত সুদ বাবদ ভর্তুকি সুবিধা প্রাপ্য হবেন। অবসর গ্রহণের পর সরকার কোনো ভর্তুকি প্রদান করবে না।
অবসর গ্রহণের পর ঋণের কিস্তি অপরিশোধিত থাকলে সুদের হার অপরিবর্তিত রেখে বাস্তবায়নকারী সংস্থা গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে অবশিষ্ট ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ করা যাবে।
এই নীতিমালার আওতায় ঋণ গ্রহণ করেছেন এমন কোনো শিক্ষক-কর্মচারীকে নিয়মিত মাসিক বেতন প্রাপ্তি এবং কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে অন্তরায় সৃষ্টিকারী কোনো ছুটি মঞ্জুরির আগে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানকে এ মর্মে নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে যে, সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতার নেয়া ঋণের মাসিক কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে এই ছুটি কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না।
- জনস্বার্থ নয়, আ.লীগের কাছে ক্ষমতাই বড় : মির্জা ফখরুল
- আপনারা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশ মেনে চলবেন : প্রধানমন্ত্রী
স্বেচ্ছায় অবসর, চাকুরিচ্যুতি বা বাধ্যতামূলক অবসর প্রাপ্তির ক্ষেত্রে আদায় পদ্ধতির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষক-কর্মচারী স্বেচ্ছায় চাকরি ত্যাগ করলে অথবা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কোনো শিক্ষক কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান, চাকরি থেকে বরখাস্ত, চাকুরিচ্যুত করা হলে আদেশ জারির তারিখ হতে ঋণের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য সুদ বাবদ সরকার প্রদত্ত ভর্তুকি সুবিধা প্রত্যাহার করা হবে।
এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বরখাস্ত, চাকুরিচ্যুত শিক্ষক-কর্মচারীর তথ্য সরকারকে যথা সময়ে অবহিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতাকে বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব পোর্টফোলিও অনুযায়ী নির্ধারিত সুদ প্রদান করতে হবে। অপরিশোধিত অর্থ (যদি থাকে) সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর পেনশন সুবিধা হতে আদায় করা যাবে।
কোনো ঋণগ্রহীতা মৃত্যুবরণ করলে ঋণের অপরিশোধিত কিস্তি তার প্রাপ্য পেনশন বা আনুতোষিক হতে জমা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি আনুতোষিক দ্বারা সম্পূর্ণ ঋণ আদায় নিশ্চিত না হয়, তাহলে সুদের হার অপরিবর্তিত রেখে তার উত্তরাধিকারীর কাছ থেকে ঋণের অপরিশোধিত অংশ আদায়যোগ্য হবে। অপরিশোধিত পাওনা আদায়ের জন্য বাস্তবায়নকারী সংস্থার প্রচলিত নিয়ম প্রযোজ্য হবে।