ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে কোনো বিতর্কিত প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, যাকে জনগণ ভালোবাসে, যার জনপ্রিয়তা বেশি এবং যে প্রার্থী বিজয়ী হতে পারবেন তাকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আজ বৃহস্পতিবার ভোগরা-জয়দেবপুর-মদনপুর (ঢাকা-বাইপাস) সড়কে নির্মাণাধীন ছয় লেন বিশিষ্ট এক্সপ্রেসওয়ে সড়কের নির্মাণ কাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২ জানুয়ারি, প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ জানুয়ারি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে দক্ষিণের মেয়র পদে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন। এছাড়া সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও হাজী মোহাম্মদ সেলিম ও বুধবার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।
উত্তরের মেয়র পদে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ ওসমানী ও বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর নবনির্বাচিত এক সদস্য বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলামই পুনরায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে পারেন। কারণ তিনি অল্প সময় পেয়েছেন নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে। সেদিক বিবেচনায় পুনরায় তাকেই দলীয় মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি অনেকটা অনিশ্চিত। যেহেতু বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য ও ক্লিন ইমেজের ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন, সেহেতু তিনিই মনোনয়ন পাবেন বলে আমার ধারণা।
চলতি বছর ডেঙ্গু ইস্যুতে অনেকটাই বিতর্কিত হয়ে পড়েন ঢাকার দুই সিটি মেয়র। এতে সরকারের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। মেয়র থেকে শুরু করে কাউন্সিলর সকলেই দলীয় নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করেছেন, যাতে বিভিন্ন এলাকায় দেখা দেয় নানামুখী বিরোধ। এ কারণে এবার মেয়র পদে কোনো বিতর্কিত প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রদানের পক্ষে নয় দলটি। নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের আজকের বক্তব্যে বিষয়টি প্রায় পরিষ্কার।
বৃহস্পতিবার মেয়র পদে দলীয় ফরম সংগ্রহের পর সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া জানানোর সময় কেঁদে ফেলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন।
‘রাজনীতিতে কঠিন সময় পার করছেন’- এমনটি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিগত সময়ে দায়িত্ব পালনকালে কখনও আমি অবহেলা করিনি। গত পাঁচ বছরে অনেক কাজ করেছি। এখনও কিছু কাজ বাকি আছে। আগামীতে নির্বাচিত হলে এ কাজগুলো সম্পন্ন করতে চাই।’ এ সময় সেখানে উপস্থিত কেউ কেউ বলেন, ‘এবার সাঈদ খোকনের খাওয়া নেই। পাঁচ বছর তার বড় কোনো অর্জন নেই।’
রূপগঞ্জে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজের অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে করতে নির্বাচন কমিশনকে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে। সরকার ও সরকারি দল সিটি নির্বাচনে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।
তিনি বলেন, ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে। মাঝখানে প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ নিয়ে কিছু জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার কারণে এক্সপ্রেসওয়ের কাজ কিছুটা মন্থর গতিতে চলছিল। অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি ইতোমধ্যে সমাধান হয়েছে। যে কারণে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
অনুষ্ঠানে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক), সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী জাওয়াদ আলম, এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প পরিচালক সবুজ উদ্দিন খান, চীনের রাষ্ট্রদূত এইচ ই লি জিমপিংসহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন ।