বিএনপি গত বছরের অক্টোবরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করার সময় ২০ দলীয় জোটের বৈঠক ডেকে জামায়াতে ইসলামীসহ শরিক দলগুলোর অনুমতি নিয়েছিল। কিন্তু বিএনপির অনুমতি না নিয়ে প্রধান শরিক জামায়াত ড. অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন ‘জাতীয় মুক্তিমঞ্চে’র কর্মসূচিতে নিয়মিত যোগ দিচ্ছে। এতে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ বিএনপি। জামায়াতের কাছে দলটি এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাইবে বলে জানা গেছে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ নির্বাচনেও পরিস্থিতি অনুকূলে না আসায় বৈশ্বিক রাজনীতির নানা সমীকরণ ও পর্যালোচনায় সাম্প্রতিককালে আবারও জামায়াতের কথাই উঠছে ঘুরেফিরে। বলা হচ্ছে, জামায়াত সঙ্গে থাকার কারণেই আন্তর্জাতিক মহল এবারও বিএনপির ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। সে কারণে সংসদে বিরোধী দলে বসার সুযোগও দলটি পায়নি।
সূত্র মতে, বিএনপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতির এমন আলোচনায় জাতীয় মুক্তিমঞ্চের কর্মসূচিতে জামায়াতের যোগদানের ঘটনাটি নতুন করে সামনে এসেছে। শিগগিরই ২০ দলীয় জোটের বৈঠক হলে এ বিষয়ে তাই ব্যাখ্যা চাওয়া হতে পারে।
গত বছরের ১৫ অক্টোবর ২০ দলীয় জোটের বৈঠক শেষে জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ঘোষিত দাবি ও লক্ষ্যগুলো নিয়ে জোটের বৈঠকে পর্যালোচনা করেছি। আলোচনা করে ২০ দলীয় জোট একমত হয়েছে যে একটি স্বৈরাচারী সরকারকে হটিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটা অগ্রগতি হয়েছে। সে জন্য আমরা এই ফ্রন্টকে স্বাগত জানিয়েছি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মত ও পথকে বলেন, জামায়াতের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া খুবই সংগত। কারণ তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপির কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে থাকে।
তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন থেকে শুরু করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা পর্যন্ত সব ইস্যুতেই ২০ দলীয় জোটের বৈঠক ডেকে জামায়াতসহ শরিকদের সম্মতি নেওয়া হয়েছে। অথচ অলি আহমদের নেতৃত্বে তারা যে জাতীয় মুক্তিমঞ্চে গেল, সে বিষয়ে আমাদের জানায়নি।
অবশ্য ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেন, জামায়াত জাতীয় মুক্তিমঞ্চে যায়নি বলে বিএনপিকে জানিয়েছে। তারা বলেছে যে তারা ২০ দলীয় জোটেই আছে।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আমরা জানতে চাইলে জামায়াত বলেছে যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে অলি আহমদ সাহেব একটি কর্মসূচি পালন করেছেন এবং সেখানে তাদের দাওয়াত দিয়েছেন বলে তারা অংশ নিয়েছে। কিন্তু অ্যাজ সাচ তারা মুক্তিমঞ্চে নেই।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বিএনপি এখনো কিছু বলেনি। বললে নিশ্চয়ই আমরা উত্তর দেব। বিএনপির সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ আছে। বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের মধ্যে কথা হয়।
বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সংসদে যোগদানসহ নানা কারণে বিএনপির ওপর ক্ষুব্ধ এলডিপি সভাপতি ড. অলি আহমদের নেতৃত্বে গত ২৭ জুন ‘জাতীয় মুক্তিমঞ্চ’ নামের আলাদা একটি প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কল্যাণ পার্টির মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম ও জাগপা নেতাদের তখন অলির পাশে দেখা যায়।
ওই সময় জানা যায়, জামায়াতও অলির সঙ্গে আছে। পরে সিলেট ও চট্টগ্রামে মুক্তিমঞ্চের সভায় জামায়াতের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। গত ১০ অক্টোবর অলি আহমদের সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার।
সর্বশেষ গত ২৬ অক্টোবর এলডিপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দেয় জামায়াত। ওই সভায় বিএনপির কঠোর সমালোচনা করেন এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ।
বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা মনে করেন, মুক্তিমঞ্চের নামে অলি আহমদের তৎপরতায় সার্বিকভাবে ক্ষতি হচ্ছে বিএনপির। তাই প্রকাশ্যে অলিকে কিছু না বললেও যেসব দল তাঁর সঙ্গে ওই মঞ্চে গেছে, তাদের ফেরানোর চেষ্টা করছে বিএনপি। প্রথম দিকে জাগপা চলে গেলেও এখন আবার বিএনপির সঙ্গে ফেরার চেষ্টা করছে। অন্যদিকে এলডিপিতেও সম্প্রতি ভাঙন দেখা দিয়েছে।