ট্রেনের টিকিট সংরক্ষণ পদ্ধতি বাতিলের আদেশ

ডেস্ক রিপোর্ট

ট্রেনের ফিরতি টিকিট বিক্রি শুরু সোমবার
ফাইল ছবি

নিরাপদ বাহন হিসেবে দিন দিন বাড়ছে ট্রেনে ভ্রমণকারীর সংখ্যা। কিন্তু রেলের টিকিট প্রাপ্তি যেন সোনার হরিণ। তাছাড়া টিকিট বিক্রির ক্ষেত্রেও পাহাড়সম অভিযোগ। বিশেষ করে ভিআইপির নামে টিকিট সংরক্ষণ (ব্লকিং) ব্যবস্থার জন্য টিকিট পাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। তবে সম্প্রতি এই ব্লকিং বন্ধ ঘোষণা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। এখন সারাবছরই টিকিট সংরক্ষণ পদ্ধতি তুলে নেয়ার পাশাপাশি ভিআইপিদের জন্য সংরক্ষিত টিকিটও ৪৮ ঘণ্টা আগে উন্মুক্ত করা হয়েছে।

গত ২২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়া জাহান স্বাক্ষরিত এক আদেশে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়।

পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত এ আদেশ কার্যকরের জন্য ম্যানেজিং ডিরেক্টর সিএনএস লিমিটেডকে (অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বিক্রির প্রতিষ্ঠান) বলা হয়েছে।

এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম), বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম), প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (সিসিএম) ও প্রধান পরিবহন কর্মকর্তাকে (সিওপিএস) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগীরা জানান, রেল স্টেশনে টিকিট কাউন্টারে গেলে প্রায়ই জানানো হয়, আসন খালি নেই অর্থাৎ টিকিট নেই। অথচ প্রায় প্রতিদিনই একেকটি আন্তঃনগর ট্রেনে ১৫ থেকে ৩৫ শতাংশ টিকিট অবিক্রীত থাকে।

লোকাল ট্রেনে অবিক্রীত থাকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত। আর ট্রেনের ভেতরের নিত্যদিনের চিত্র হচ্ছে- পা ফেলার জায়গা নেই। অথচ দিন দিন লোকসানের ঘানি টানছে রেল, যাত্রীরাও পাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা।

সূত্রমতে, বর্তমানে ৩৫৮টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। এর ৯৬টি আন্তঃনগর। এসব ট্রেনে প্রতিদিন প্রায় ৭৫ হাজার টিকিট বরাদ্দ থাকে। বাকি ট্রেনের মধ্যে রয়েছে কমিউটার, লোকাল ও মেইল।

রেলওয়ে বাণিজ্যিক বিভাগের সূত্র বলছে, মাসের প্রায় ২৫ দিনই আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট ১৫ থেকে ৩৫ শতাংশ অবিক্রীত থাকে। আর লোকাল ও মেইল ট্রেনের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ টিকিট প্রায়ই অবিক্রীত থেকে যায়। অথচ লোকাল ও মেইল ট্রেনে শুধু কোচের (বগির) ভেতর নয়, ভেতরে জায়গা না পেয়ে ছাদে পর্যন্ত লোকজন ওঠেন।

রেলসূত্র জানায়, রেলের টিকিট বিক্রিতে নানা ধরনের কোটা রয়েছে। কিন্তু এর বাইরেও রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও প্রভাবশালীদের চাপে বিভিন্ন সময়ে নির্ধারিত কোটার বাইরেও টিকিট সংরক্ষণ করতে হয়। চাহিদার তুলনায় রেলের টিকিটের সরবরাহ কম থাকায় বিশেষ বিশেষ ট্রেনগুলোতে নিয়মের বাইরে টিকিট সংরক্ষণের চাপ আসে। নতুন নিয়ম চালু হলে রেলের টিকিট বিক্রি ও স্টেশন কেন্দ্রিক কর্মীরা নাজেহালের শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি রেলওয়ের পরিপত্র অনুযায়ী সকল আন্তঃনগর ট্রেনে সংসদ সদস্য, বিচারপতি, ভিআইপি, প্রতিবন্ধী, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্য কোটায় নির্ধারিতসংখ্যক সংরক্ষিত আসন ব্যতীত সকল আসন যাত্রীদের জন্য উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরিপত্রে আসন সংরক্ষণ বাতিল করতে ৫টি বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।

অপরদিকে ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর রেলভবনে অনুষ্ঠিত মাসিক পরিচালন পর্যালোচনা সভায় (ওআরএম) কাউন্টারের টিকিট ও অনলাইনের টিকিট এক তারিখে উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি ভিআইপিদের জন্য বিশেষভাবে সংরক্ষিত টিকিটগুলো ৪৮ ঘণ্টা আগে কাউন্টার বা অনলাইনে উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে