নেত্রকোনায় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত ১৫ শিক্ষক

নেত্রকোনা প্রতিনিধি

উত্তরপত্র সরবরাহের সময় শিক্ষকসহ আটক ৩২ জন
উত্তরপত্র সরবরাহের সময় শিক্ষকসহ আটক ৩২ জন

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র সরবরাহ করার ঘটনায় আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।

ছয় মাস তদন্ত শেষে ৩৮ জনকে আসামি করে গতকাল বৃহস্পতিবার নেত্রকোনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পুলিশ পরিদর্শক মো. রফিকুল ইসলাম এ অভিযোগপত্র দাখিল করেন বলে আজ শুক্রবার জানা গেছে।

চার্জশিটে অভিযুক্তরা সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকসহ বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং পরীক্ষার্থীদের স্বজন। এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনজন প্রধান শিক্ষকসহ ১৫ শিক্ষক রয়েছেন।

এ মামলার তদারকির দায়িত্বে থাকা নেত্রকোনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মাদ শাজাহান মিয়া আজ শুক্রবার বিকেলে জানিয়েছেন, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ এবং প্রশ্নোত্তর পরীক্ষার্থীদের সরবরাহের ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ ও পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন-১৯৮০-ধারায় মামলা করা হয়। এটি দেশের আলোচিত ঘটনা। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হয়েছে। তদন্তে ৩৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেয়া হয়েছে।

এর আগে সর্বশেষ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা চলাকালে গত ২৮ জুন ৩৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ এবং প্রশ্নোত্তর পরীক্ষার্থীদের সরবরাহ করেছেন।

কেন্দুয়া পৌরসভার টেঙ্গুরি-ছয়আনী এলাকার শিল্পপতি মনিরুজ্জামান ভূঁইয়ার বাড়ি থেকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার উত্তরপত্র সরবরাহকালে অভিযান চালিয়ে তাদের ৩২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই সময় তাদের কাছ থেকে কয়েকটি মুঠোফোন, ল্যাপটপ ও প্রিন্টারসহ ইলেকট্রনিকস ডিভাইস ও সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।

গ্রেফতার ৩২ জনের মধ্যে ১২ জন ছিলেন নারী। এদের মধ্যে নয়জন ছিলেন বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। এরই মধ্যে অভিযুক্ত নয় নারী শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

পাশাপাশি গ্রেফতার পুরুষদের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন দুজন। ঘটনার অন্যতম হোতা কেন্দুয়া উপজেলার বলাইশিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান ছোটনসহ তার আত্মীয় পুরাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সাকিকে ৩০ জুন সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ওই সময় গ্রেফতার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন দুজন। বাকিরা বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীদের স্বজন।

৩২ জনকে গ্রেফতারের পর এ ঘটনায় মামলা করা হয়। কেন্দুয়া থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল বাশার বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ ও পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন-১৯৮০-এর দুটি ধারায় মামলাটি করেন।

মামলায় প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূলহোতা বলাইশিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মান্নান ওরফে ছোটনকে প্রধান করে ৩৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়।

মামলার তদন্ত শেষে এজাহারে ৩৮ জনকে আসামি করা হয়। এজাহারনামীয় আসামির তালিকায় গ্রেফতার ৩২ জন ছাড়াও রয়েছেন নেত্রকোনা সরকারি কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের শিক্ষক মোমেন খান, নেত্রকোনা সদরের উন্মেষ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আরিফুল ইসলাম রিপন ও কৃষ্ণগোবিন্দ হাই স্কুলের ঝন্টু।

এজাহারে অভিযুক্ত তিন প্রধান শিক্ষক হলেন- কেন্দুয়ার বলাইশিমুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মান্নান, পুরাবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস সাকি, পানগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তুহিন আক্তার।

এছাড়া কেন্দুয়ার দিগদাইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মজিবুর রহমান, নওয়াপাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাওয়া বেগম, একই বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিপা মোনালিস, বলাইশিমুল বিদ্যালয়ের শিক্ষক মরিয়ম আক্তার, কেন্দুয়া মডেল বিদ্যালয়ের শিক্ষক তাহমিনা আক্তার, আটপাড়ার তেলিগাতি বিদ্যালয়ের শিক্ষক স্মৃতি খানম, মদনের খাগুরিয়া বিদ্যালয়ের শিক্ষক লাকি আক্তার, মদনের জঙ্গল টেংগা বিদ্যালয়ের শিক্ষক জেবুন্নাহার ডলিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

অভিযুক্তরা বর্তমানে জামিন রয়েছেন। এ অবস্থায় দীর্ঘ তদন্ত শেষে চাঞ্চল্যকর এ মামলার এজাহারনামীয় সব আসামিসহ ৩৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কেন্দুয়া থানা পুলিশের তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রফিকুল ইসলাম মত ও পথকে বলেন, দীর্ঘ তদন্ত শেষে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ, উত্তরপত্র পরীক্ষার্থীদের সরবরাহ করায় ৩৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। এজাহারনামীয় ৩৭ আসামিসহ কেন্দুয়া উপজেলার নওপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন অফিস সহায়ককে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

কেন্দুয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বলেন, চাঞ্চল্যকর এ মামলায় এজাহারনামীয় ৩৭ আসামিসহ ৩৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে