একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ভোট ডাকাতির নির্বাচন দাবি করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে আজ এক কলঙ্কিত ভোটাধিকার হরণ ও ভোট ডাকাতির ভয়াল রাত। তাই এই আওয়ামী লীগকে অনন্তকাল রাতের ভোট ডাকাতির কলঙ্ক তিলক বহন করে যেতে হবে। এই রাতেই ভোটারদের কাছ থেকে তাদের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছিল, দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছিল।
আজ রোববার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে অভাবনীয় রেকর্ড সৃষ্টিকারী রাতের ভোটে ক্ষমতা দখলের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে ২৯ ডিসেম্বর। আজ রাত তাই দেশবাসীর কাছে তাদের ভোটাধিকার হরনের কালোরাত হিসেবে কলঙ্কিত হয়ে থাকবে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে যেমন নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল হানাদার বাহিনী, ঠিক একইভাবে ২০১৮ সালের এই ২৯ ডিসেম্বর কালরাতে মানুষের ভোটাধিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল আওয়ামী হানাদার ও তাদের দোসররা। এই রাতেই হত্যা করা হয়েছিল গণতন্ত্রকে।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আগামীকাল ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯- এই দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। যা ইতিমধ্যেই আপনাদের অবহিত করা হয়েছে। ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে দেশব্যাপী বিএনপি সভা-সমাবেশ-মিছিল-কালো ব্যাজ ধারণ এবং দলীয় কার্যালয়গুলোতে কালো পতাকা উত্তোলন করবে। ঢাকায় দিবসটি উপলক্ষে আগামীকাল নয়াপল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে অথবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বেলা ২টায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
রিজভী বলেন, ৩০ ডিসেম্বর কোনো ভোট হয়নি বাংলাদেশে। তাই এই আওয়ামী লীগকে অনন্তকাল রাতের ভোট ডাকাতির কলঙ্ক তিলক বহন করে যেতে হবে, যেমন এখন পর্যন্ত প্রতিটি সচেতন মানুষ তাদেরকে গণতন্ত্র হত্যাকারী ও বাকশালী বলে অভিহিত করে। এরা একদলীয় মূঢ় বিশ্বাসের দ্বারা আচ্ছন্ন। গণতন্ত্রকে বারবার মর্গে পাঠানোই আওয়ামী লীগের রীতি। আমরা বলতে চাই- অতি দ্রুত মিডনাইটের সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। একই সাথে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে যেন একটি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা হয়।
তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে ফেলা হয়েছে ভোট ডাকাতির নির্বাচন ও মানুষের কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করে। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরতরাও এখন দুর্নীতি আর অবৈধ সুযোগ-সুবিধা ভোগের লোভে ভোট ডাকাতিতে সহায়তা করে নিজেদের বিবেককে অন্যায়-অনৈতিক আদেশের কাছে বিক্রি করে গণতন্ত্রকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছে।
রিজভী বলেন, এখন বিচারের নামে চলছে অবিচার। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সাহেবের পরিণতিতে ভয় পেয়ে এখন সরকারকে খুশি করতেই হচ্ছে বিচার বিভাগকে। আর এ কারণেই জামিন পাচ্ছেন না দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী, গণতন্ত্রের আপসহীন কণ্ঠস্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছের প্রতিফলন-ই ঘটছে এখন আইন-আদালতের সিদ্ধান্তে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, রাষ্ট্রের আরেকটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন। গত এক দশকে এই প্রতিষ্ঠানটিকে নির্বাচনী সন্ত্রাসের সিলমোহরে পরিণত করা হয়েছে। পরিণত করা হয়েছে একটি পাপেট, অথর্ব এবং দুর্নীতিবাজ প্রতিষ্ঠানে। এই প্রতিষ্ঠানটি এখন আর জনগণের ভোটাধিকার রক্ষার জন্য নয় বরং এটি ক্ষমতাসীনদের নির্বাচনী ভোট লুটের বৈধতা দানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে।
- সশস্ত্রবাহিনীকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে চাই : প্রধানমন্ত্রী
- প্রধানমন্ত্রীর নতুন মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস
রিজভী বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা ভোটাধিকার হরণের জন্য শুধুমাত্র দিনের আলোই নয়, রাতের অন্ধকারকেও বেছে নিয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার হরণের জন্য নির্বাচন কমিশন আরেকটি প্রধান অস্ত্র নিয়ে দহরম মহররম শুরু করেছে, সেটি হলো ইভিএম। কারণ এই যন্ত্রটি দ্রুতচারী, দ্রুতই এর মাধ্যমে ফলাফল পাল্টে দেয়া সম্ভব।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার, খায়রুল কবির খোকন, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।