নেত্রীর সিদ্ধান্তে আমি খুশি, আলহামদুলিল্লাহ : সাঈদ খোকন

মত ও পথ প্রতিবেদক

মেয়র সাঈদ খোকন
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। ফাইল ছবি

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করেপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন। তবে তিনি কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছেন। জনগণের সমর্থনে যিনিই মেয়র নির্বাচিত হবেন তাকে সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন।

আজ সোমবার বিকালে নগর ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সাঈদ খোকন। গতকাল রোববার দল তাকে বাদ দিয়ে ফজলে নূর তাপসকে ঢাকা দক্ষিণে নৌকার মাঝি নির্বাচন করে। এ ব্যাপারে সেদিন মুখ খুলেননি মেয়র খোকন। এর একদিন পর তিনি সাংবাদিকদের সামনে এলেন।

২০১৫ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে মেয়র নির্বাচিত হন সাঈদ খোকন। তিনি অবিভক্ত ঢাকার প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে। তবে এবার আওয়ামী লীগ তাকে বাদ দিয়ে ঢাকা-১০ আসনের সাংসদ ফজলে নূর তাপসকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নেয়।

সাংবাদিকদের উদ্দেশে সাঈদ খোকন বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে প্রিয় নগরবাসীকে এবং প্রিয় দেশবাসীকে জানাতে চাচ্ছি যে, আমি বলেছিলাম রাজনীতিতে আমি আমার বাবার হাত ধরে এসেছি। রাজনীতিতে আমার বাবাকে আমি হারিয়েছে। আমার ববার অনুপস্থিতিতে আমার নেত্রী শেখ হাসিনা আমার অভিভাবক। আমি বলেছিলাম আমার নেত্রী আমার জন্য যেটা ভালো মনে করবেন, তিনি সেটা করবেন। আমার নেত্রী শেখ হাসিনা যেটা ভালো মনে করেছেন, তিনি আমার জন্য সেটা করেছেন। আমি খুশি মনে বলতে চাই আলহামদুলিল্লাহ। আমার নেত্রী আমার জন্য যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ।’

‘সমস্ত প্রসংশা মহান রাব্বুল আলামিনের। রাব্বুল আলামিন যাকে ইজ্জত দান করেন, যাকে অপমানিত করেন, সমস্ত ক্ষমতা সমস্ত কর্তৃত্ব মহান রাব্বুল আলামিনের। আমি আবারো বলছি, আমার নেত্রী যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন আমি খুশি মনে হাসি মনে মেনে নিয়েছি। তিনি যেটা আমার জন্য ন্যায্য মনে করেছেন, ভালো মনে করেছেন, তিনি সেটা করেছেন।’

কেন আপনাকে এবার মনোনয়ন দেওয়া হলো না, এ বিষয়ে আপনার কি কোনো উপলব্ধি আছে? জবাবে মেয়র খোকন বলেন, ‘আমার অভিভাবক আমার নেত্রী। তিনি আমার জন্য যেটা ভালো মনে করেছেন তিনি করেছেন। আমি আবারও শুকরিয়া জ্ঞাপন করি মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে। আমি খুশি। আমি আনন্দিত, আমি খুশি।’

যিনি প্রার্থী হচ্ছেন তাকে আপনি সহযোগিতা করছেন কি না, জানতে চাইলে মেয়র খোকন বলেন, ‘বিষয়টি আমি আমার নেত্রীর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করবো, পরামর্শ করব। এছাড়া পুরনো ঢাকার প্রতিনিধিত্ব সাধারণত প্রথাগতভাবে ঢাকার মেয়র বিশেষ করে পুরান ঢাকার মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। আমার পুরান ঢাকার মুরুব্বিয়ানরা আছেন, অনেক বর্ষীয়ান ময়-মুরুব্বি রয়েছেন, আমি তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করব, আমি আমার প্রিয় নেত্রীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করব, পরবর্তীতে ইনশারল্লাহ সিদ্ধান্ত জানাব।’

আপনার ত্রুটিগুলো কী কী ছিল সেগুলো কি চিহ্নিত করতে পেরেছেন? কেন আপনি আওয়ামী রীগ থেকে মনোনয়ন পাননি, আপনি কী মনে করেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘সে ব্যপারটার দিকে আমি লক্ষ করছি না। আমার নেত্রী আমার জন্য যেটা ভালো মনে করেছেন উনি সেটা করেছেন। আমি খুশি, আলহামদুলিল্লাহ।’

দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কী পরিমাণ প্রকল্প বা কাজ চলমান আছে? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের মেয়াদকাল পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়ে থাকি। সে অনুযায়ী আগামী ১৭ মে, আমি যদি ভুল না করে থাকি, আইনগত ব্যাখ্যায় যদি কোনো ভুল না থাকে আগামী ১৭ মে আমাদের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। এই সময়টুকু পর্যন্ত আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাব। বিশেষ করে জল-সবুজের ঢাকা যে প্রকল্পটি আছে, আমাদের অনেক চমৎকার চমৎকার খেলার মাঠ সেগুলো ৮০-৯০ শতাংশ হয়ে গেছে, আশা করি আগামী মাসতিনেকের মধ্যে জল-সবুজে ঢাকা প্রকল্প শেষ করতে পারব।’

‘এছাড়া আরও কিছু প্রকল্প রয়েছে, এগুলো এই সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে আসবে। আরও কিছু প্রকল্প রয়েছে, যেগুলো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। বেশ কিছু কমিউনিটি সেন্টার, বেশ কিছু ফেসিলিটিস দেওয়া মাল্টি কমপ্লেক্স রয়েছে, আমরা সেগুলোর কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবো। জনগণের ভোটে নবনির্বাচিত যে মেয়র আসবেন, ইনশাল্লাহ বাকি কাজগুলো তিনি সমাপ্ত করবেন।’

খোকন বলেন, ‘একজনের পক্ষে তো সমস্ত কিছু হয় না, কিছু প্রক্রিয়াধীন তাকে। আমি শুরু করে দিয়ে গেলাম, কিছুটা কাজ আমি করে দিয়ে গেছি, বাকি কাজ যিনি আসবেন তিনি করবেন। এটাই প্রক্রিয়া, এভাবেই আমাদের শহর এগিয়ে যাবে, এভাবে আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে।’

‘আমরা একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করতে সক্ষম হয়েছি। এই ইতিবাচক পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত থাকবে, যিনি পরবর্তী নির্বাচিত মেয়র হিসেবে এ শহরের দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন, তিনি এটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। যিনিই হোন তিনি আমার সার্বিক সহযোগিতা তার প্রতি থাকবে। এই শহরের সমস্ত মানুষকে নিয়েই ইনশাল্লাহ একটি চমৎকার ঢাকা গড়ে তুলব।’

কদিন আগে আপনি বলেছিলেন আপনি সফল হয়েছেন, সে সাফল্যের ধারাবাহিকতা কিন্তু রক্ষা হলো না শেষ পর্যন্ত, আপনি কি আপনার কোনো ব্যর্থতা খুঁজে পেয়েছেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখুন, আমি বলি যে, আমরা একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের ধারা সূচনা করতে সক্ষম হয়েছি এবং আমি বলি যে, সেদিক থেকে  মৌলিক সমস্যাগুলো আমি সমাধান করতে সক্ষম হয়েছি এবং আমি অনেকটাই সফল হয়েছি। আমি মানুষ, আমি ফেরেশতা না। আমার ভুলভ্রান্তি থাকতে পারে। আমি ১০টা কাজ করি, দশটাই যে আমি সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি, এমন কিন্তু না। আমার ভুলভান্তি থাকতে পারে। সেই ভুলভ্রান্তিগুলো শুধরে নিয়ে আগামীতে যিনি আসবেন আমি তাকে আমার পরামর্শ বলেন, কিংবা সাহায্য বলেন আর অভিজ্ঞতা বলেন, সেই অভিজ্ঞতা দিয়ে আমি তাকে সাহায্য করবো। সে সেগুলো এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

মেয়র বলেন, ‘আমরা ইনসান, আমরা মানুষ আমরা ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নই। ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। সেখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাবো। এখানে দ্বিচারিক ভাব একেবারেই নেই, কারণ আমার যিনি অভিভাবক তাক দিক নির্দেশনার অবশ্যই আমার প্রয়োজন রয়েছে, আমার ঢাকাবাসী, আমার ঢাকাবাসী মুরুব্বিয়ান, যাদের হাত ধরে আজ আমি এখানে এসেছি তাদের পরামর্শের আমার প্রয়োজন আছে।’

‘আর আপনারা এও জানেন যে, আমি পূর্ণ মন্ত্রীর মর্যাদায় মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছি। সেখানে আইনগত অনেক বিষয় রয়েছে। আমরা আলাপ-আলোচনা করে আপনাদের সিদ্ধান্ত জানাব।’

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে