ম্যাচের পরতে পরতে ছড়িয়ে থাকল নাটক আর রোমাঞ্চ। একবার এদিকে হেলল তো আরেকবার ওদিকে দুলল। গোটা ম্যাচেই সেই চিত্রনাট্য ও দৃশ্য দেখা গেল। তবে সবশেষে ডেভিড মালানের বীরোচিত ব্যাটিংয়ে শ্বাসরুদ্ধকর ও উত্তেজনাকর ম্যাচে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে ৩ উইকেটে হারাল কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স।
জবাব দিতে নেমে সতর্ক শুরু করে কুমিল্লা। উদ্বোধনী জুটিতে ৩০ রান তোলেন স্টিয়ান ভ্যান জেল ও রবিউল ইসলাম। লিয়াম প্লাংকেটের বলে ফিনিশ হন ভ্যান জেল। ওয়ানডাউনে নেমে রবিকে নিয়ে এগিয়ে যান ডেভিড মালান। ভালোই খেলছিলেন তারা। তবে আচমকা থেমে যান রবি। মেহেদী হাসান রানার উইকেট হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তিনি।
এরপর জিয়াউর রহমানের শিকার হয়ে তড়িঘড়ি ফেরেন সৌম্য সরকার।ফলে সাময়িক চাপে পড়ে কুমিল্লা। এ অবস্থায় সাব্বির রহমানকে জোট বাঁধেন মালান। যথার্থ সমর্থনও পান তিনি। ফলে চাপ কাটিয়ে ওঠে তারা। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে দারুণ মেলবন্ধন গড়ে ওঠে। তাতে দুরন্ত গতিতে ছোটে দলটি।
তবে দারুণ খেলতে খেলতে সাব্বির রায়ান বার্লের শিকারে পরিণত হলে ফের বিপর্যয়ে পড়ে কুমিল্লা। এর জের না কাটতেই রুবেলের হোসেনের বলে সোজা বোল্ড হয়ে ফেরেন ডেভিড উইজ। এক বলের ব্যবধানে রিভার্সসুইং তারকার শিকার হন নাহিদুল ইসলাম অংকন।
সতীর্থরা ধারাবাহিক বিরতিতে যাওয়া-আসা করলেও সংগ্রাম চালিয়ে যান মালান। তবে জয় থেকে এক কদম দূরে থাকতে বিদায় নেন তিনিও। রানআউটে কাটা পড়েন। ফেরার আগে ৫১ বলে ৫ চার ও ৪ ছক্কায় ৭৪ রানের অনিন্দ্যসুন্দর ইনিংস খেলেন কুমিল্লা অধিনায়ক।
তার ফেরতে বিজয় একরকম অনিশ্চিত হয়ে যায় তাদের জন্য। তবে ক্রিকেট যে গৌরবময় অনিশ্চয়তা খেলা। এখানে নাটকীয়তা শেষ নেই ফের তা প্রমাণ পাওয়া গেল। শেষ বলে জয়ের জন্য দরকার ছিল ৩ রান। বাউন্ডারি মেরে তা নিশ্চিত করেন আফগান তুর্কি মুজিব-উর রহমান। চট্টগ্রামের হয়ে সর্বোচ্চ ২ উইকেট নেন রুবেল হোসেন।
কুমিল্লার বিপক্ষে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে দারুণ সূচনা করেন চট্টগ্রামের দুই ওপেনার লেন্ডল সিমন্স ও জুনায়েদ সিদ্দিকি। উদ্বোধনে শতরানের জুটি গড়েন তারা। তাদের বিচ্ছিন্ন করেন সৌম্য সরকার। ৩৪ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৫৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে ফেরেন সিমন্স। ফিফটির পথে ছিলেন সিদ্দিকিও। তবে পরের বলেই রানআউটে কাটা পড়েন তিনি। ফেরার আগে ৩৭ বলে ৬ চারে ৪৫ রান করেন ইমরুল কায়েসের পরিবর্তে খেলতে নামা বাঁহাতি ওপেনার।
দুজনকে হারিয়ে হঠাৎ চাপে পড়ে চট্টগ্রাম। সৌম্যর বলে দ্রুত ফেরেন রায়ার্ন বার্ল। সেই রেশ না কাটতেই সানজামুল ইসলামের শিকার হন চ্যাডউইক ওয়ালটন। পরে নুরুল হাসান সোহানকে নিয়ে খেলা ধরার চেষ্টা করেন জিয়াউর রহমান। তবে সেই যাত্রায় অপর প্রান্তের হাল ধরতে পারেননি সোহান। ডেভিড উইজের বলে পরিষ্কার বোল্ড হয়ে ফেরত আসেন তিনি।
- ছাত্রদলের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানে খালেদার মুক্তি হবে : মির্জা ফখরুল
- তাপসকে সহযোগিতার আশ্বাস অ্যাটর্নি জেনারেলের
সোহানের পর লিয়াম প্লাংকেটকে নিয়ে দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন জিয়াউর। তবে যথার্থ সঙ্গ দিতে পারেননি প্লাংকেট। আল-আমিন হোসেনের বলে বিদায় নেন তিনি। শেষদিকে সতীর্থরা যাওয়া-আসা করলেও একপ্রান্ত আগলে রাখেন জিয়াউর। বুক চিতিয়ে লড়েন তিনি। শেষ অবধি ২১ বলে ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। ৪ ছয়ে ইনিংসটি সাজান এ হার্ডহিটার।
জিয়াউরের ক্যামিওতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৫৯ রান করে চট্টগ্রাম। তাদের নাগালে রাখার নেপথ্য কারিগর মূলত কুমিল্লার দুই বোলার সৌম্য। ৪ ওভারে ২০ রান খরচায় ২ উইকেট নেন সৌম্য। ঝুলিতে কোনো উইকেট ভরতে না পারলেও নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন মুজিব-উর রহমান। ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ফল: ৩ উইকেটে জয়ী কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স।
চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স ইনিংস: ১৫৯/৬ (২০ ওভার), সিমন্স ৫৪, জুনায়েদ সিদ্দিক ৪৫, ওয়ালটন ৯, বার্ল ২, নুরুল ৪, জিয়াউর ৩৪*, প্লানকেট ৪, পিনাক ০*; মুজিব উর রহমান ০/১৮, আবু হায়দার ০/১৭, আল-আমিন হোসেন ১/৪০, ডেভিড ওয়াইজ ১/২৬, সানজামুল ১/৩৩, সৌম্য ২/২০।
কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স ইনিংস: ১৬১/৭ (২০ ওভার), রবি ১৭, ভ্যান জিল ২২, মালান ৭৪, সৌম্য ৬, সাব্বির ১৮, ওয়াইজ ১, অঙ্কন ০, আবু হায়দার ১২*, মুজিব উর রহমান ৪*; রুবেল ২/১৬, রানা ১/৩১, নাসুম ০/১৮, প্লানকেট ১/৪৬, জিয়াউর ১/৩৬, বার্ল ১/৯।
ম্যাচ সেরা: ডেভিড মালান (কুমিল্লা ওয়ারিয়র্স)।