কালের আবর্তে মহাকালের গর্ভে হারিয়ে গেল আরও একটি বছর। বহু ঘটন-অঘটনের বছর ছিল ২০১৯। ভোরের সূর্যোদয়ের মাধ্যমে আমরা পা রাখতে যাচ্ছি নতুন আরেকটি বর্ষপরিক্রমায়। স্বাগত ২০২০।
নতুন স্বপ্ন আর সম্ভাবনা নিয়ে যাত্রা শুরু হচ্ছে ২০২০। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিধি বড় হচ্ছে। বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের পরিচিতিও ফুটে উঠছে নতুন রূপে। নতুন বছরটিকে এই ধারা অব্যাহত রাখাসহ আরো সমৃদ্ধির আশা করছেন সবাই।
সদ্য বিদায় নেয়া ২০১৯ সালের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল নতুন মন্ত্রিসভা গঠন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ জোট টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে।
বছরজুড়ে দুয়েকটি স্থান ছাড়া স্থানীয় সব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয় পেয়েছে। নতুন বছরের শুরুতেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন।
দেশের সামগ্রিক আর্থিক অবস্থা ভালো হওয়ায় ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বেড়েছে। বাংলাদেশে মানুষের বার্ষিক মাথাপিছু আয় এখন ১ হাজার ৯০৯ ডলার।
আবরার, নুসরাত, রিফাতসহ বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ছিল সদ্য বিদায়ী ২০১৯ সালের আলোচিত ঘটনা। এসব ঘটনার অধিকাংশেরই চার্জশিট জমা হয়েছে। কোনোটার রায় হয়েছে। কোনোটি আপিল পর্যায়ে রয়েছে। নতুন বছরে এসব ঘটনার রায় কার্যকরের যথেষ্ঠ সম্ভাবনা রয়েছে।
সদ্য বিদায়ী বছরে প্রাণ ও সম্পদহানিতে অন্যতম ছিল কিছু অগ্নিকাণ্ড। একদিকে যেমন ঘটেছে পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টা ও বনানীর এফআর টাওয়ারের মতো ভয়াবহ আগ্নিকাণ্ড, তেমনি বেড়েছে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা। ফায়ার সার্ভিসের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে মোট ২২ হাজার ২৮৩টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। যা গত ২৩ বছরের মধ্যে অগ্নিদুর্ঘটনায় রেকর্ড। এসব ঘটনায় ১৫৪ জন নিহত ও ৩৭৭ জন আহত হয়েছেন।
নতুন বছরে এই অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধের চ্যালেঞ্জ থাকছে সরকার এবং সংশ্লিষ্টদের জন্য।
বিদায়ী বছরে বেশকিছু আলোচিত ঘটনার মধ্যে অন্যতম ছিল ছেলেধরা আতঙ্কে গণপিটুনিতে হতাহতের ঘটনা। গত জুলাই মাসের শুরুতে হঠাৎই সারা দেশে গুজব ছড়িয়ে পড়ে- পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজে মানুষের মাথা প্রয়োজন। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ‘ছেলেধরা’ আতঙ্ক তৈরি হয়। এরপর থেকেই ছেলেধরা সন্দেহে একের পর এক গণপিটুনির খবর আসতে থাকে।
নতুন শুরু হওয়া ২০২০ সালে বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হতে যাচ্ছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরে একযোগে অনুষ্ঠিত হবে জন্মশতবার্ষিকীর মূল আয়োজন।
এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আরো নিবিড়ভাবে কাজ শুরু করবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার কাজ। এতে এরই মধ্যে মানসিকভাবে সমর্থন দিয়েছে দেশের মানুষ। কারণ নতুন বছরে এটাই থাকছে বাঙালির প্রত্যাশা- ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ।
এবার আসা যাক বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনায়-
বিশ্বজুড়ে বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে চলছে বর্ষবরণ উৎসব। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ২০২০ সালকে বরণ করতে আতশবাজির উৎসবে মেতেছে নিউজিল্যান্ড। নতুন বছরের আগমনে আলোকচ্ছটায় উজ্জ্বল হয়েছে অকল্যান্ডের স্কাই টাওয়ার।
একই চিত্র দেখা গেছে অস্ট্রেলিয়াতেও। ২০২০ সালের আগমনে সিডনি ঝলমলে হয়ে উঠেছে নানা রঙের আতশবাজিতে। অস্ট্রেলিয়ায় ভয়াবহ দাবানল সংকটের মধ্যেও সেখানে থেমে থাকেনি নতুন বছরকে বরণের আনন্দ-উৎসব।
এবার দাবানল সংকটের কারণে সিডনিতে আতশবাজি না করার আহ্বান জানিয়ে পিটিশনে সই করেছিলেন ২ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষ। নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যে রেকর্ড ভাঙা তাপমাত্রার কারণে দাবানল ভয়াবহ রূটি নিয়ে রাজ্যটি পুড়িয়ে ছারখার করায় ওই অঞ্চলের অনেক জায়গাতেই বর্ষবরণের রাতে আতশবাজি প্রদর্শনী নিষিদ্ধ হয়।
কিন্তু সিডনির লর্ড মেয়র ক্লোভার মুর নিষেধাজ্ঞায় ছাড় দিয়ে শহরটিতে আতশবাজি করার অনুমোদন দেন। ‘নতুন বছরে আতশবাজির আলো এ কঠিন সময়ে মানুষের মাঝে আশার সঞ্চার করবে’- এমনটিই মনে করেন বলে জানিয়েছে তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে বানদুরা শহরতলীতে দাবনলে পুড়ে যাওয়া গাছ।অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে বানদুরা শহরতলীতে দাবনলে পুড়ে যাওয়া গাছ। দাবানলের আগুনে পোড়া ধোঁয়ায় সিডনির আকাশ রক্ত লাল হলেও শহরটির হারবার ব্রিজে নতুন বছরের আগমনী মুহূর্তে আকাশে আতশবাজির খেলা দেখতে ভিড় করেছে বিপুল সংখ্যক মানুষ। তাদের উচ্ছ্বাসেও কোনো কমতি দেখা যায়নি। যদিও স্যোশাল মিডিয়ায় সিডনিতে এ আতশবাজির সমালোচনাও করেছেন কেউ কেউ।
তবে সিডনিতে আতশবাজি হলেও অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলের অনেক শহরেই দাবানল ভয়াবহ আকার ধারণ করায় ওইসব জায়গায় এবার আতশবাজির উৎসব বাতিল করা হয়েছে।
ভারতের দিল্লিতে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে শিশুকোলে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক নারী।ভারতের দিল্লিতে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে শিশুকোলে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া এক নারী। অন্যদিকে, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকাজুড়ে মানুষ পুরোনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুনকে বরণের উৎসব করছে। বিশ্বের দেশে দেশে উচ্ছ্বাসে ভাসছে হাজারো মানুষ। নানা রঙের আলোয় সেজেছে বিভিন্ন ভবন। ২০১৯ সালকে বিদায় জানিয়ে আগামী ২৪ ঘণ্টায় একে একে ২০২০ সালকে বরণ করে নেবে ইউরোপ এবং আমেরিকা মহাদেশের দেশগুলো।
এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এবারও বর্ষবরণকে কেন্দ্র করে জমকালো ও চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা থেকে শুরু করে আতশবাজির আয়োজন করেছে। তবে হংকংয়ে এবার গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভ চলতে থাকায় নিরাপত্তাজনিত কারণে বর্ষবরণের রাতে ভিক্টোরিয়া হারবারে আতশবাজি বাতিল করা হয়েছে।
- নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য বিএনপি অংশ নিচ্ছে : হানিফ
- বন্দরে অত্যাধুনিক স্ক্যানার বসানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
হংকংয়ে নববর্ষের রাতে বিক্ষোভ চলার সময় এক বিক্ষোভকারীকে পাকড়াও করছে পুলিশ। হংকংয়ে নববর্ষের রাতে বিক্ষোভ চলার সময় এক বিক্ষোভকারীকে পাকড়াও করছে পুলিশ। নতুন বছর শুরুর আগেও হংকংয়ের বিক্ষোভকারীরা মিছিলের কর্মসূচি নিয়েছে।
কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কর্তৃপক্ষ সেখানে ৬ হাজার পুলিশ মোতায়েন করেছে এবং নতুন বছরের আগমনীতে এক ভিডিও বার্তায় হংকংয়ের নেত্রী ক্যারি লাম বিক্ষোভকারীদেরকে শান্ত থাকা এবং সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে চলমান বিক্ষোভের মধ্যেও হাজারো মানুষ নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর পরিকল্পনা করেছে। নতুন এ আইন নিয়ে ভারতে কয়েক সপ্তাহ ধরেই বিক্ষোভ-প্রতিবাদ চলছে।