ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিকভাবে অতিরিক্ত লাভ করছেন। তাই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মাধ্যমে তাদের শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে। তবে এসব কিছুর পরও নিয়ন্ত্রণে আসছে না পণ্যের দাম। তাই বাণিজ্যমন্ত্রীর ওপর জনগণের ক্ষোভ। এ অবস্থায় আগুনের মধ্যে বসবাস করছেন বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
আজ বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আসন্ন রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুত, সরবরাহ, আমদানি, মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিদের নিয়ে মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
সভায় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ধরপাকড়ে তারা অতিষ্ঠ।
এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমিও তো ৪৫ বছর ব্যবসা করছি। আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দেবেন আপনারা। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত যখন পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিলো, তখন তো ঢাকার বাজারে আগের মালগুলোই ছিল। আপনারা ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে দামটা ডাবল করে দিলেন কেন? ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রাফতানি বন্ধ করলো, ৩০ তারিখ সকালে বাংলাদেশে পেঁয়াজের দাম ডাবল হয়ে গেল। এখানে তো একটা নৈতিকতার ব্যাপার আছে। আমার প্রশ্নটা সেখানেই।’
টিপু মুনশি বলেন, ‘আজকে এটা ঠিক করা দরকার যে, বড় ব্যবসায়ীরা আমদানির পণ্য আড়তে দেবেন। এরপর পাইকারি বাজারে কী দামে বিক্রি হবে, পাইকারি বাজার থেকে খুচরায় কী দামে বিক্রি হবে।’
তিনি নিজের বাড়ির একটা উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমার বাড়ির কাজের লোককে পাঠিয়েছি, এক দোকানে সে পেঁয়াজ কিনে এনেছে ২২০ টাকা কেজিতে। তারপর আমি বললাম এখন তো দাম কমেছে তাহলে এত দাম কেন? এবার অন্য একজনকে আবার পেঁয়াজ আনতে বললাম। ১৫ গজ দূরের অন্য দোকান থেকে সে পেঁয়াজ নিয়ে আসলো ১৬০ টাকা কেজিতে। যে ২২০ টাকায় নিয়ে এসেছে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুই টাকা চুরি করছিস নাকি? সে বলে না, দোকানদারই ২২০ টাকা রেখেছে। দোকানদার স্বীকার করে মাফও চাইল। সে যুক্তি দেখালো, তার ১০-১২ দিন আগের কেনা, তাই বেশি দাম নিয়েছে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমার কাছে এ প্রশ্নের উত্তর নাই যে, ২৯ সেপ্টেম্বরের পরদিন (৩০ সেপ্টেম্বর) কীভাবে পেঁয়াজ দাম ডাবল হয়ে গেল!’
এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ী গোলাম মাওলা বলেন, আমরা অনেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ৩ হাজার ৬০০ টাকায় তেল কিনে ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি করেছি। চিনি ১ হাজার ৪৭০ টাকায় মিলগেট থেকে কিনে ৯২৫ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। আমরা এ ধরনের লস (লোকসান) দিতে পারি… ২০১৩ সালে আদা রসুন আমদানি করে আমি একাই ১১ কোটি টাকা লস করেছি। ব্যবসায়ীরা যদি লস করতে পারি তাহলে তারা গেইনও (লাভ) করতে পারে।
এ পর্যায়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানে কোনো লজিক কাজ করে সেখানেই আমার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের দরকার পড়ে। যারা ৩০ টাকার মাল ৬০ টাকায় বিক্রি করে তাদের ঠেকাও। কারণ এটাতো হতে পারে না। আমি তো ব্যবসায়ী আমার কাছে সবকিছুর হিসাব আছে।’
টিপু মুনশি বলেন, ‘আপনারা বলছেন লোকসান করছেন। তখন তো করিনি… তাহলে ডাবল লাভ করলাম তাতে ক্ষতি কী? যেখানে ডাবল লাভ করতে চান সেখানেই আমার দরকার ভোক্তা অধিকার। না হলে আমার কোনো দায় পড়ে নাই… আপনাদের ওপর যখন আঘাত আসে তখন ঘুরেফিরে আমার ওপর আসে।’
‘কারণ সংবাদ থেকে শুরু করে সবাই আমাকে ব্লেম (অভিযোগ) করেছে যে, আপনি নিজে ব্যবসায়ী তাই ব্যবসায়ীদের বেশি ফেভার করছেন। কঠোর হচ্ছেন না, আপনি আরও শক্ত হতে পারতেন। এ জায়গায় বসে আমি আগুনের মধ্যে বসবাস করছি।’
- বিশ্বসেরা অর্থমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন মুস্তফা কামাল
- ভারত থেকে দুই মাসে এসেছে ৪৪৫ জন: বিজিবি মহাপরিচালক
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পেঁয়াজ নিয়ে আমার শিক্ষা হয়ে গেছে। আর পেঁয়াজের মাইর খেতে চাই না। আসন্ন রোজার আগেই পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ন্যায্যমূল্য ও সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।’
টিপু মুনশি বলেন, বাজারে টান পড়লেই সে দায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঘাড়ে এসে পড়ে। কিন্তু উৎপাদন ও চাহিদার তেমন কোনো তথ্য কৃষি মন্ত্রণালয় দিতে পারে না। তাই আগে থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভাব হয় না। এ সমস্যা সমাধানে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন বলেও জানান তিনি।