তাপসের বার্ষিক আয় ১০ কোটি টাকা, ইশরাকের ৯১ লাখ

মত ও পথ প্রতিবেদক

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন
ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিস) নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসের বছরে আয় ৯ কোটি ৮১ লাখ ৩৮ হাজার ৪৬ টাকা।

অন্যদিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ইশরাক হোসেনের বার্ষিক আয় ৯১ লাখ ৫৮ হাজার ৫০৯ টাকা। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি তাপসের বিরুদ্ধে বর্তমানে কোনো মামলা না থাকলেও অভিবক্ত ঢাকার শেষ মেয়রের ছেলে ইশরাকের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা রয়েছে।

universel cardiac hospital

২০০২ ও ২০০৩ সালে তাপসের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হলেও পরে তা খারিজ হয়ে যায়। তারা দুজনই উচ্চশিক্ষিত।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে মেয়র প্রার্থীদের দাখিল করা হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

নিচে এ সিটিতে দালিখ করা প্রার্থীদের হলফনামা তুলে ধরা হলো-

তাপসের হলফনামা : শেখ ফজলে নূর তাপস হলফনামায় নিজের পেশা আইনজীবী উল্লেখ করেছেন। ব্যারিস্টার ডিগ্রিধারী তাপসের কৃষি খাত থেকে বছরে আয় ৩৫ হাজার টাকা, বাড়ি/দোকান ভাড়া বাবদ ৪২ লাখ ৫০ হাজার ৩৯৮, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত থেকে ৭ কোটি ৮৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৪৮, আইন পেশা থেকে ১ কোটি ৪৬ লাখ ৫০ হাজার এবং চাকরির (এমপি থাকা অবস্থায়) বেতনবাবদ ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

এ ছাড়া তার ওপর নির্ভরশীলদের আয়- কৃষিখাতে ২২ হাজার ৪০০ টাকা, বাড়ি ভাড়ায় ১৪ লাখ ৭৬ হাজার ৩৮২, ব্যবসায় ১ কোটি ৫৬ লাখ ৪৮৮ ও আমানত ৪৪ লাখ ১৯ হাজার ১২২ টাকা।

ঢাকা-১০ আসনের এমপি পদ থেকে পদত্যাগ করে মেয়র পদের এই প্রার্থী অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজের নামে নগদ ২৬ কোটি ৩ লাখ ৩ হাজার ৫৫৭ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৯৭ লাখ ২০৬ টাকা দেখিয়েছেন। এ ছাড়া তার নিজের নামে ৩ হাজার ৭৫০ ইউএস ডলার ও স্ত্রীর নামে ৮ হাজার ৭০০ ইউএস ডলার বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

তাপসের নিজের নামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমানো টাকা রয়েছে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৭৭ হাজার ২০৭ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ২ কোটি ৫৭ লাখ ৩১ হাজার ২৩৫ টাকা। নিজের নামে বন্ড ও বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার রয়েছে ৪৩ কোটি ২৭ লাখ ৫৫ হাজার ৪০৪ টাকার এবং স্ত্রীর নামে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নিজের নামে সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ রয়েছে ৩৫ কোটি ২২ লাখ টাকার এবং স্ত্রীর নামে ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। নিজের ও স্ত্রীর ৩ কোটি টাকার বেশি মূল্যমানের গাড়ি, দুজনের দেড় কোটি টাকা মূল্যমানের স্বর্ণালঙ্কার, ১০ লাখ টাকার ইলেকট্রিক সামগ্রী ও ১৭ লাখ টাকার আসবাবপত্র থাকার কথাও হলফনামায় জানিয়েছেন তাপস।

স্থাবর সম্পদের মধ্যে তাপস নিজের নামে সাড়ে ১০ কাঠা ও স্ত্রীর নামে ১১২ শতাংশ জমি; নিজের নামে ১০ কাঠা অকৃষি জমি ও স্ত্রীর নামে ১০ কাঠা অকৃষি জমি দেখিয়েছেন।

এ ছাড়া তার নিজের নামে ৮ কোটি ৩৭ লাখ ২০ হাজার ৩১৩ টাকার মূল্যমানের আবাসিক/বাণিজ্যিক দালান রয়েছে তিনটি। স্ত্রী ও তাপসের নামে পৌনে চার কোটি টাকা মূল্যের তিনটি বাড়ি/এপার্টমেন্ট রয়েছে। ৪ কোটি ৬৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৫০ টাকা দায়-দেনা রয়েছে, যা তিনি বাড়ি ভাড়া অগ্রীম হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

ইশরাক হোসেনের হলফনামা : ইশরাক হোসেন পেশা হিসেবে ব্যবসাকে উল্লেখ করেছেন হলফনামায়। তার বিরুদ্ধে ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে (৪) একটি দুর্নীতির মামলা বিচারাধীন। এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং) ডিগ্রিধারী ইশরাক চারটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ও একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক।

ডাইনামিক স্টিল কমপ্লেক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার তিনি। তার আয়ের উৎসগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে লভ্যাংশ ৪৬ লাখ ৮০ হাজার ৩৮৯ টাকা, চাকরি থেকে ৩৫ লাখ ৪৯ হাজার ৯৯৬ ও ব্যবসা থেকে ৪ লাখ ২৪ টাকা। ইশরাকের অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ৯৮ লাখ ২ হাজার ৭২ টাকা এবং স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৭৮ লাখ ৫১ হাজার ৫২৪ টাকা।

অস্থাবর সম্পদের মধ্যে- নগদ ৩৩ হাজার ১০৯ টাকা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শেয়ারবাবদ ২ কোটি ৯৬ লাখ এবং ব্যাংকে জমা ১ কোটি ৩৭ লাখ ১৮ হাজার ৬৩ টাকা। তার দায়দেনার পরিমাণ ৬৫ লাখ ৪৬ হাজার ৭৪৩ টাকা। এর মধ্যে মা ইসমত আরার কাছ থেকে ৬১ লাখ ৩৭ হাজার ২২২ টাকা তিনি নিয়েছেন। বাকি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন।

জাতীয় পার্টির প্রার্থীর হলফনামা: জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন নিজেকে স্বশিক্ষিত বলে দাবি করেছেন। পেশা হিসেবে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন ব্যবসা। বছরে তার আয় ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার বেশি। আয়ের উৎস হিসেবে দেখিয়েছেন বাড়ি ভাড়া, এপার্টমেন্ট, দোকান ভাড়া, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

অস্থাবর সম্পদ হিসেবে তার রয়েছে নগদ ৫৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। পরিবহনে ১৭ লাখ টাকা ও আসবাবপত্রে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও বীমায় রয়েছে ৬৯ লাখ ৩৬ হাজার ৬৮৯ টাকা।

বিভিন্ন ব্যাংকে তার ৭৭ লাখ ৭ হাজার ৬০১ টাকার ঋণ রয়েছে। স্ত্রীর নামেও দুই কোটি টাকার ঋণ। তার নামে কোনো মামলা নেই।

ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর হলফনামা : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মো. আব্দুর রহমানও নিজেকে স্বশিক্ষিত বলে দাবি করেছেন। পেশা দেখিয়েছেন ব্যবসা। অতীতে দুটি মামলা থাকলেও অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বছরে আয় দেখিয়েছেন ৮ লাখ ২৩ হাজার টাকা। তার কাছে নগদ রয়েছে ৫৮ লাখ ৫২ হাজার ৯২ টাকা। স্থাবর সম্পদ আছে ৮৮২.৮৫ শতাংশ কৃষি জমি আর একটি চার তলা বাড়ি।

বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থীর হলফনামা : বাংলাদেশ কংগ্রেসের মেয়র প্রার্থী আকতারুজ্জামান নিজেকে বিএ পাস হিসেবে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। পেশায় তিনি একজন সাংবাদিক (আজকের দর্পণের বার্তা সম্পাদক)। ২০১৫ সালেও ডিএসসিসি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে লড়েছিলেন তিনি। সে সময় তিনি জামানতও হারিয়েছিলেন।

অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজের ও স্ত্রীর কাছে নগদ তিন লাখ টাকা আছে বলে তিনি জানিয়েছেন। এ ছাড়া স্বর্ণালঙ্কার ১৫ ভরি, ১৫০ মার্কিন ডলার ও কিছু আসবাব রয়েছে তার।

গণফ্রন্টের প্রার্থীর হলফনামা : গণফ্রন্টের প্রার্থী আব্দুস সামাদ সুজন এইচএসসি পাস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পেশায় সাংবাদিক (রাজনীতি ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, দৈনিক শিরোমনি)। তার বাৎসরিক আয় দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা।

হলফনামায় নিজের ও স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেন এক লাখ ৫০ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদ রয়েছে তিন বিঘা জমি। আর এক কাঠা জমির ওপর নির্মিত চার তলা ভবনের অর্ধেক তার নিজের নামে রয়েছে।

উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, প্রার্থিতা প্রত্যাহার হবে ৯ জানুয়ারি, প্রতীক বরাদ্দ ১০ জানুয়ারি। ভোটগ্রহণ হবে ৩০ জানুয়ারি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে