ঢাকা সিটি নির্বাচন : গাড়ি নেই আতিকের, সম্পদ বেশি তাবিথের

মত ও পথ প্রতিবেদক

আতিক-তাবিথ

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের মালিক হলেও তার কোনো ব্যক্তিগত গাড়ি নেই। বরং ব্যক্তিগত ঋণ রয়েছে ৯৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা।

অন্যদিকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের ব্যক্তিগত কোনো ঋণ নেই। তার ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণও বেশি। তবে তারা দুজনই পেশায় ব্যবসায়ী এবং উচ্চশিক্ষিত।

ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে জমা দেয়া প্রার্থীদের হলফনামা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

ডিএনসিসিরি সাবেক মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম ১৬টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। তার বার্ষিক আয় ১ কোটি ২৯ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। হলফনামায় তিনি আয়ের উৎস হিসেবে কৃষি, ব্যবসা, বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া, মৎস্য চাষ ও ব্যাংক সুদ উল্লেখ করেছেন।

এছাড়া তার অস্থাবর সম্পদ ৪ কোটি ৮৬ লাখ ৬৯ হাজার ও স্থাবর সম্পদের মূল্যমান ১৩ কোটি ৯৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা।

আইএফআইসি ব্যাংকে তার ব্যক্তিগত ঋণ ৯৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে রয়েছে ৫৯১ কোটি ৬ লাখ টাকা। এ ঋণের মধ্যে আইএফআইসি ব্যাংকে ফান্ডেড ১৮৬ কোটি ৬২ লাখ ও নন-ফান্ডেড ২৪৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে। ইস্টার্ন ব্যাংকে ফান্ডেড ৪৭ কোটি ২৯ লাখ ও ১৩ কোটি ৯ লাখ টাকা নন-ফান্ডেড এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে ২৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা ফান্ডেড ও ৭৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা নন-ফান্ডেড ঋণ রয়েছে।

ডিএনসিসির সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের শিক্ষাগত যোগ্যতা বিকম। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই।

অন্যদিকে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের মালিকানায় ৩৭টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। হলফনামায় তিনি ৪ কোটি ১২ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন। আয়ের উৎস্য হিসেবে কৃষি, বাড়ি/দোকান/অন্যান্য ভাড়া, ব্যবসা, শেয়ার/সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক থেকে লভ্যাংশ, চাকরি ও অন্যান্য খাত উল্লেখ করেছেন।

এছাড়া তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৪৫ কোটি ৬০ লাখ ৮ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদ হিসেবে রয়েছে ৪ দশমিক ২৪ একর কৃষি জমি, ১৬ দশমিক ৪৮ একর অকৃষি জমি, দশমিক ৫৬ একর অন্যান্য জমি। ৯২৪ ও ১ হাজার ৪৩ বর্গফুট আয়তনের দুটি অ্যাপার্টমেন্টও রয়েছে তার।

বিভিন্ন ব্যাংক থেকে তার প্রতিষ্ঠানগুলোর নামে ঋণ নেয়া রয়েছে ৩০২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। তবে তার নামে কোনো মামলা নেই। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএসসি ডিগ্রি।

অন্যদিকে ডিএনসিসিতে মেয়র পদে অন্য প্রার্থীদের মধ্যে জাতীয় পার্টির মনোনীত মেয়র প্রার্থী জি এম কামরুল সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা। তবে তার মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করেছে ইসি। তিনি ঢাকার ভোটার না হয়েও উত্তরের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এমফিল।

বর্তমানে পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। এটিএস সুলশন নামে তার একটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আছে। তার বার্ষিক আয় প্রায় ২১ লাখ টাকা। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে ব্যাংকে আছে ২০ লাখ টাকা এবং ১ কোটি ১২ লাখ টাকার মূল্যমানের যানবাহন, ইলেকট্রনিক ও আসবাবপত্র রয়েছে। স্থাবর সম্পদ হিসেবে ৮ বিঘা কৃষি জমি, ৭ কাঠা অকৃষি জমি এবং ৭ কোটি টাকা মূল্যমানের ভবন রয়েছে। কোনো ঋণ নেই এবং তার বিরুদ্ধে কখনো কোনো মামলা হয়নি।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মেয়র প্রার্থী আহাম্মদ সাজেদুল হক পেশা হিসেবে নিজেকে দন্ত চিকিৎসক হিসেবে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে ৫ হাজার টাকা, ব্যাংকে ৫০০ টাকা, ২ ভরি স্বর্ণ, মোবাইল ২টি ও ৫০ হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে। এছাড়া তার ব্যাংক ঋণ রয়েছে ৫ লাখ ৯১ হাজার টাকা।

তার বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৬ হাজার টাকা। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তবে ২০০৮ সালে পল্টন থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছিল। পরবর্তীতে তা ডিসচার্জ হয়েছে।

পিডিপি মেয়র প্রার্থী শাহীন খান শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে নিজেকে স্বশিক্ষিত বলে দাবি করেছেন। এছাড়া তার কোনো আয় নেই বলেও হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে। তার অস্থাবর সম্পদ হিসেবে রয়েছে নগদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংকে তিন লাখ টাকা, একটি গাড়ি ও ৩ ভরি স্বর্ণ। স্থাবর কোনো সম্পদ নেই। মামলা কিংবা ব্যাংক ঋণও নেই তার।

ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি একাংশের মেয়র প্রার্থী মো. আনিসুর রহমান দেওয়ান হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে বিএসসি উল্লেখ করেছেন। তার পেশা রাজনীতি ও ব্যবসা।

তার বার্ষিক আয় ২ লাখ ৭৩ হাজার ৫০০ টাকা। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে রয়েছে চার লাখ টাকার মতো নগদ, ইলেকট্রনিক ও আসবাবপত্র। নিজের বাড়ি না থাকলেও স্ত্রীর নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। তার বিরুদ্ধে কখনো কোনো মামলা হয়নি।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ঢাকার দুই সিটিতে ৩০ জানুয়ারি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ জানুয়ারি এবং প্রতীক বরাদ্দ হবে ১০ জানুয়ারি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে