প্রক্সি যুদ্ধ চলছিলই৷ এবার তা আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল৷ ইরাকের রাজধানী বাগদাদে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত হলেন ইরানের সেনাবাহিনীর জেনারেল তথা এলিট ফোর্সের প্রধান কাসিম সোলেইমানি৷
একই সঙ্গে নিহত হয়েছেন দেশের প্যারামিলিটারির সহকারী প্রধান আবু মাহদি আল মুহানদিস৷ ইরানের মদদপুষ্ট ইরাকি জঙ্গি গোষ্ঠী কায়তাব হিজবুল্লাহর সংগঠকও ছিলেন মুহানদিস৷ এই জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গেই গত কয়েক দিন ধরে লড়াই চলছিল আমেরিকার৷
অভিযোগ, গত সপ্তাহে বাগদাদে আমেরিকার একটি সামরিক ঘাঁটিতে এক মার্কিন কন্ট্রাক্টরকে হত্যা করে ওই জঙ্গি গোষ্ঠী৷ তারপরেই রবিবার ইরাকে অবস্থিত কায়তাব ক্যাম্পে বিমান হানা চালায় মার্কিন বায়ু সেনা৷ তাতে বেশ কিছু কায়তাব শীর্ষ নেতার মৃত্যুর কথা স্বীকার করে জঙ্গি গোষ্ঠীটি৷ জবাবে বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসে আক্রমণ চালায় কায়তাব৷ দূতাবাসে ভাঙচুর করা হয় এবং আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়৷
সেই দিনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন এর বদলা নেওয়া হবে৷ রাতারাতি বাগদাদে ৭৫০ জন অতিরিক্ত সৈন্য পাঠায় আমেরিকা৷ ইরান এবং আমেরিকার মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়৷ বদলা নিতে গিয়ে ট্রাম্প যে সরাসরি ইরানের জেনারেলের ওপর হামলা করবেন, এতটা আশা করেননি কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা৷ তাদের বক্তব্য, এর ফলে দুই দেশের মধ্যে আর প্রক্সি যুদ্ধ নয়, সরাসরি যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হলো৷
ইরানের সেনাবাহিনীর নিজস্ব সংবাদমাধ্যম শুক্রবার জানায়, এদিন আচমকাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো সেকশন বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে৷ জ্বলতে থাকা কার্গোর কয়েকটি ছবিও প্রকাশ করে তারা৷ তবে বিস্ফোরণে হতাহতের কোনো খবর তারা প্রাথমিকভাবে জানায়নি৷
এর কিছুক্ষণের মধ্যেই পেন্টাগন জানায়, তাদের বিমান হামলায় ইরানের জেনারেলের মৃত্যু হয়েছে৷ কিছুক্ষণের মধ্যে ইরানের সেনাও খবরের সত্যতা স্বীকার করে নেয়৷ বলা হয়, বিমানবন্দর থেকে বেরনোর সময় সেনাবাহিনীর জেনারেলের গাড়ির উপর বিমান হামলা চলে৷ তাতেই নিহত হয়েছেন তিনি৷ ইরানের সেনা জানিয়েছে, এর ফলে আমেরিকাকে কঠিন দাম দিতে হবে৷
মার্কিন কংগ্রেসও ট্রাম্পের এই আক্রমণকে সমর্থন করেনি৷ ডেমোক্র্যাট নেতা ক্রিস মারফি টুইট করে বলেন, সোলেইমানি আমেরিকার শত্রু, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ কিন্তু যেভাবে কংগ্রেসে আলোচনা না করেই ট্রাম্প বাগদাদে ঢুকে তাকে হত্যা করলেন, তাতে সমস্যা আরও জটিল হলো৷ যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হলো৷ এটা মেনে নেওয়া যায় না।
এই ঘটনার পরে ইরানও যে চুপ করে বসে থাকবে না, তা-ও স্পষ্ট৷ ইরানের বৈপ্লবিক সেনার তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বদলা নেওয়া হবে৷ ঘটনাটিকে ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে৷ সব দেশই এর ফলে যুদ্ধ পরিস্থিতির আশঙ্কা করছে৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে