একটা সময় দলের হার অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে অসাধ্য সাধনের স্বপ্ন দেখালেন মুশফিকুর রহীম। অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে খুলনাকে তো জয়ের বেশ কাছাকাছিই নিয়ে এসেছিলেন অধিনায়ক মুশফিক। কিন্তু শেষতক তার ৩৩ বলে ৬ চার আর ৪ ছক্কায় গড়া ৬৪ রানের ইনিংসটা গেল বিফলেই।
সিলেটে মুশফিকের লড়াকু ব্যাটিং পারফরম্যান্সের পরও ঢাকা প্লাটুনের কাছে ১২ রানে হেরে গেছে খুলনা টাইগার্স। এই জয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে বিপিএলের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে মাশরাফি বিন মর্তুজার ঢাকা।
১৭৩ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই চমক দেখাতে চেয়েছিল খুলনা টাইগার্স। লোয়ার অর্ডারের মেহেদী হাসান মিরাজ গত কয়েক ম্যাচ ধরেই ওপেন করছেন। এবার তার সঙ্গে খুলনা ওপেনিংয়ে পাঠায় আরেক লোয়ার অর্ডার আমিনুল ইসলাম বিপ্লবকে। জুয়াটা কাজে লাগেনি।
শুরুতেই বড় ধাক্কা খায় খুলনা। বিপ্লব মাত্র ৪ রান করে হন মাশরাফি বিন মর্তুজার শিকার। ১৫ বলে ১৫ রানের এক ইনিংস খেলে হাসান মাহমুদের বলে বোল্ড হন মিরাজ। এরপর শামসুর রহমানও ৩ রানে শাদাব খানের শিকার হন।
রাইলি রুশো একটু চালিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন। ১৩ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ১৮ রানে পৌঁছে যাওয়া প্রোটিয়া এই ব্যাটসম্যানকে দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেছেন ঢাকার তরুণ পেসার হাসান মাহমুদ।
৪৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা খুলনা এরপর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে মুশফিকুর রহীম আর নাজিবুল্লাহ জাদরানের ব্যাটে। তাদের ৪৫ বলে ৫৬ রানের ধীরগতির জুটিটি ভাঙে জাদরানের রানআউটে (২৯ বলে ৩১)।
১৭ ওভার শেষে খুলনার বোর্ডে ৬ উইকেটে ১২৫ রান। জিততে হলে ১৮ বলে তখনও দরকার ৪৮ রান। এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে দানবীয় ব্যাটিং উপহার দিলেন মুশফিক। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। ২৭ বলে ফিফটি পূরণ করা মুশফিক ৩৩ বলে ৬৪ রান করে শিকার হলেন বল হাতে আগুন ঝরানো হাসান মাহমুদের (৪ ওভারে ৩২ রানে নেন ৪ উইকেট)। সেখানেই জয়ের আশা শেষ খুলনার। ৮ উইকেটে ১৬০ রানে থেমেছে দলটির ইনিংস।
এর আগে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান আসিফ আলীর ১৩ বলে ৩৯ রানের এক ইনিংসে ভর করে ৪ উইকেটে ১৭২ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি দাঁড় করায় মাশরাফি বিন মর্তুজার ঢাকা প্লাটুন।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই ছিল ঢাকার। তামিম ইকবাল আর এনামুল হক বিজয়ের ৩৩ বলের উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৪৬ রান। ২৩ বলে ২৫ রান করা তামিমকে ফিরিয়ে এই জুটিটি ভাঙেন মোহাম্মদ আমির। পরের ওভারে বিজয়কে (১৩ বলে ১৫) এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন শফিউল ইসলাম।
টপ অর্ডারে বারবার চমক দেখানো মেহেদী হাসান এদিন কিছুই করতে পারেননি। চার নম্বরে নেমে আমিনুল ইসলাম বিল্পবের ফিরতি ক্যাচ হন ১ রানে। ৬২ রানে ৩ উইকেট হারায় ঢাকা।
সেখান থেকে চতুর্থ উইকেটে ৫৬ রানের জুটিতে দলকে অনেকটা এগিয়ে নেন মুমিনুল আর আরিফুল হক। দেখেশুনে খেলছিলেন মুমিনুল। ১৭তম ওভারে এসে আমিরকে তুলে মারতে গিয়ে নাজিবুল্লাহ জাদরানের ক্যাচ হন ঢাকার বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। ৩৬ বলে ৩ বাউন্ডারিতে গড়া তার ইনিংসটি ছিল ৩৮ রানের।
পরের সময়টায় দলকে লড়াকু পুঁজি এনে দেয়ার দায়িত্ব সেরেছেন আরিফুল আর আসিফ আলী। পঞ্চম উইকেটে ২১ বলে ৫৪ রানের জুটি গড়েন তারা, যে জুটিতে মূলত অবদান ছিল আসিফেরই। ১৩ বলে ২ বাউন্ডারি আর ৪ ছক্কায় পাকিস্তানি এই ব্যাটসম্যান অপরাজিত থাকেন ৩৯ রানে। ৩০ বলে ৩৭ রান নিয়ে মাঠ ছাড়েন আরিফুল।
খুলনার পক্ষে বল হাতে সবচেয়ে সফল ছিলেন মোহাম্মদ আমির। ৪ ওভারে ২৭ রান খরচায় তিনি নেন ২টি উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
টস: খুলনা টাইগার্স
ঢাকা প্লাটুন: ১৭২/৪ (২০ ওভার)
আসিফ ৩৯*, মুমিনুল হক ৩৮, আরিফুল ৩৭*, তামিম ২৫; আমির ২৭/২, বিপ্লব ১৫/১, শফিউল ৪৪/১
খুলনা টাইগার্স: ১৬০/৮ (২০ ওভার)
মুশফিক ৬৪, জাদরান ৩১, রুশো ১৮; হাসান ৩২/৪, শাদাব ২৫/১, মাশরাফি ২৬/১
ফল: ঢাকা প্লাটুন ১২ রানে জয়ী
ম্যান অব দ্যা ম্যাচ : হাসান মাহমুদ (ঢাকা প্লাটুন)